• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২১, ০৪:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৭, ২০২১, ১১:০৭ এএম

বঙ্গবন্ধুর পোশাক ও ব্যক্তিত্ব

বঙ্গবন্ধুর পোশাক ও ব্যক্তিত্ব

বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, সুঠাম দেহ। গড়নে যাঁর ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। সাদামাটা জীবনযাত্রা, কিন্তু পোশাক আর চলনের ভঙ্গি যাঁর ব্যক্তিত্বে জুড়ে দিয়েছিল এক ভিন্ন মাত্রা। যাঁর গর্জনে জেগে উঠেছিল হাজারো বাঙালি। যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলার মানচিত্র। তিনি হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ঘরে-বাইরে যে পোশাকেই তাঁকে দেখা যেত, মুগ্ধ করতেন তাঁর ব্যক্তিত্ব দিয়ে। কেবল পোশাক-আশাক নয়, বরং ব্যক্তিবৃত্তের পরিসীমায় সংযোজিত গুণাবলির মিশ্রণে তিনি হয়ে উঠতেন অসাধারণ। স্টাইলিস্ট ব্যক্তিত্বেও নিজের পরিচয়কে এ যাবৎকালের টেন্ড হিসেবে পরিস্ফুটিত করেছেন এই বিশ্বনেতা।
পছন্দ করতেন বাঙালিয়ানা পোশাকগুলো। পরতেনও তাই। শুধু তা-ই নয়, উজবেকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেও দেখা গেছে এই নেতাকে। এছাড়া পায়জামা-পাঞ্জাবি, স্যুট আর ম্যান্ডারিন কলার স্যুটসহ পরেছেন নানা ডিজাইনের পোশাক। বিশিষ্টজনরা নানা সময় ব্যক্ত করেছেন ফ্যাশন সচেতন বঙ্গবন্ধুর নানা অবয়বের কথা।
কালভেদে নিজের পোশাকের ধরনও পরিবর্তন করতেন বঙ্গবন্ধু। শীত হোক, আর গ্রীষ্মকাল আলাদা আঙ্গিকের পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করতেন তিনি। ঘরে পরতেন হাফ হাতার গেঞ্জি আর লুঙ্গি, যা উঠে এসেছে প্রকাশিত নানা ছবিতে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, ছোটদের নিয়ে খেলছেন, এমন অনেক ছবিতেই বঙ্গবন্ধুকে এই পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা গেছে।

গরমে বঙ্গবন্ধু আদ্দি কাপড়ের পাঞ্জাবি পরতেন। খাটো ঝুলের পাঞ্জাবি আর পায়জামা ছিল  অনেক ঘেরের। গোল কলার করে ডিজাইন করা হতো পাঞ্জাবিগুলোর। শীতে পরতেন কাশ্মীরি শাল, যা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর ওয়েস্ট কোটের ওপরে জড়িয়ে রাখতেন। খাদি কাপড়ের  পোশাকের পাশাপাশি সুতি কাপড়ের পোশাকেও ছিল তাঁর ভীষণ আগ্রহ।
তবে যখনই কর্মক্ষেত্রে পা রেখেছেন, তখন ম্যান্ডারিন কলার বা ব্যান্ড বা চোকার কলারের স্যুট পরতে পছন্দ করতেন বঙ্গবন্ধু। এর নিচে রাখতেন শার্ট বা পাঞ্জাবি। ওপরের বোতামগুলো খোলা রাখতেই পছন্দ করতেন। স্যুটের সঙ্গে মিল রেখে পরতেন একই কাপড়ের ও রঙের প্যান্ট।
বঙ্গবন্ধুর ফ্যাশন অবয়বে দৃষ্টি কাড়ে তার চুলের বেকব্রাশ আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। সাদা-কালোর সংমিশ্রণে পাঞ্জাবি, পায়জামা আর এর ওপরের হাফহাতা কোট চমৎকারভাবে ক্যারি করতেন তিনি, যা সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এই প্রজন্মের কাছেও।

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের চিত্র ফুটে উঠত আয়েশি ভঙ্গিমার পাইপে তামাক সেবনেও। পাইপ ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। পাইপে এরিনমোর তামাক ব্যবহার করতেন বঙ্গবন্ধু। নিজস্ব স্টাইলে পাইপ টেনে ধোঁয়া ছাড়তেন। এতে ফুটে উঠত তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতা। রাষ্ট্রনায়কের এই স্টাইলেও ছিল  আভিজাত্যের রূপ। ১৯৭২ সালের শুরুতে নামী ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজ জীবনে পাইপের গুরুত্ব তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর উজবেকিস্তান ভ্রমণের সময় তোলা এক ছবিতে দেখা গেছে, গায়ে ভারী ওভারকোট আর তাঁর মাথায় রুশ টুপি। গলায় ছিল লাল রঙের মাফলার। সেখানে তাসখন্দে লেনিন জাদুঘরে যান বঙ্গবন্ধু। তাঁর পরনে ছিল ফুলহাতার সাদা শার্ট আর একটি ভিন্ন ধরনের ধূসর রঙের ওভারকোট।

১৯৬৬ সালে লাহোরে ৬ দফা ঘোষণার সময় বঙ্গবন্ধু পরেছেন শার্টের ওপর চেকড ব্লেজার। খোলা ছিল তাঁর শার্টের ওপরের বোতাম।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনে বঙ্গবন্ধুকে দেখা যায় ম্যান্ডারিন কলার স্যুট আর সঙ্গে কাফলিন লাগানো শার্টে।

বঙ্গবন্ধুর পছন্দের পোশাক ছিল কালো ওয়েস্টকোট, যা ‘মুজিব কোট’ নামে পরিচিত। ১৯৬৮ সাল থেকে এই পোশাক পরতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ছয়টি বোতাম থাকত এই কোটে। কালো ও স্লিভলেস, ম্যান্ডারিন কলারের কোটের নিচে থাকত দুটো পকেট। এই কোর্টের বিশেষত্ব ছিল চমৎকার কাট। আর দারুণ আইডিয়া ছিল কোটের হোয়াইট ইনার কলার, যা রোজ পাল্টানো যেত। ঘাম আর ধুলোর দেশে এই আলাদা কলারের ভাবনাটা ছিল চমৎকার। একটা কোটের জন্য অনেকগুলো কলার রাখা হতো। রোজ ধোঁয়ার ঝামেলা এড়ানোর জন্যই এই আইডিয়া ছিল তাঁর।  নোংরা হলেই সাদা কলারটা পাল্টে নেওয়া যেত খুব সহজেই।

বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখা বিশিষ্টজনরা জানিয়েছেন, পোশাকের কাপড় হতো বিশেষ ধরনের। যা কিনে নিতেন রমনা ভবনের পাশে গ্যানিস নামের একটি দোকান থেকে। বানিয়ে নিতেন নির্দিষ্ট কারিগর দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিজি হাসপাতাল) নিচে জেন্টালিয়া টেইলার্সের এক কারিগর বানিয়ে দিতেন বঙ্গবন্ধুর পরনের স্যুটগুলো।

এ ছাড়া প্রকাশ পাওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, লন্ডনের ক্লারিজেজ হোটেলে যান বঙ্গবন্ধু। সেখানে পায়জামা-পাঞ্জাবির ওপর সিল্ক কাপড়ের নাইট গাউন পরে রয়েছেন এই নেতা।
শৈশব থেকে কৈশোর, এরপর তারুণ্য থেকে প্রৌঢ়ত্ব সময়ের ব্যবধান থাকলেও বঙ্গবন্ধুর পোশাক  আর চলনের ব্যক্তিত্বে ছিল ভিন্নমাত্রা, যা পরবর্তী সময়ে তারুণ্যের আইকন হয়ে উঠেছে।