রসনায় বিনোদন, বিনোদনে রসনা
নবরূপে ফিরে এসেছে খাজানা। ভারতীয় খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ এই রেস্টুরেন্ট এবার এসেছে তার আগের স্বাদ নিয়ে। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন রেসিপি। এ দেশে তাদের দুই যুগেরও বেশি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভোজনরসিকদের মসলাযুক্ত ও মসলা ছাড়া পৌনে ২০০ রকম খাবার পাতে তুলে দিচ্ছে তারা। বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মাওলা আলি
খাজানার নতুন ঠিকানা গুলশান ২-এর ৫৩ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ি। চলতি বছরে ১০ মার্চ এর দ্বার খুলে দেয়া হয় অতিথিদের জন্য। দোতলা বাড়িটিকে সাজানো হয়েছে আকর্ষণীয় করে। অতিথিরা মুগ্ধ হবেন এর অন্দরসজ্জায়।
প্রতিটি কক্ষে রুমের ইন্টেরিয়র দৃষ্টি কাড়বে। পান্নার মনকাড়া সবুজ খাজানার ব্র্যান্ড কালার। এর সঙ্গে মিলিয়ে অন্য রঙের উপস্থিতি অন্দরের আবহকে দিয়েছে বিশেষ নান্দনিক মাত্রা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আসবাব নকশা, আলোর অনিন্দ্য ব্যবহার আর দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম।
অন্দর ও বাইরের সজ্জায় স্পষ্ট আধুনিকতার সঙ্গে রাজকীয়তার সম্মিলন। আট হাজার বর্গফুটের বিশাল পরিসরে ব্যাঙ্কোয়েট হল ছাড়াও আছে তিনটি প্রাইভেট ডাইনিং রুম। ব্যাঙ্কোয়েট হলে বড় অনুষ্ঠান করার সব বন্দোবস্ত রয়েছে।
প্রাইভেট ডাইনিং রুমগুলোতে পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে রসনাবিলাসের সঙ্গে মেতে ওঠা যাবে গল্প আর আড্ডায়। তেমনি সেরে ফেলা যাবে করপোরেট মিটিংও।
শুরুটা করেছিলেন ভারতের বিখ্যাত শেফ সঞ্জীব কাপুর। বাংলাদেশিদের কাছে ভারতীয় স্বাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন তিনি খাজানার সঙ্গে নেই, কিন্তু রয়েছে খাজানা। নিয়মিতভাবে নতুন নতুন পদ যুক্ত হচ্ছে মেন্যু কার্ডে।
খাজানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অভিষেক সিনহা জাগরণকে জানান, খাজানার প্রধান লক্ষ্য হলো সবচেয়ে ভালো সেবা, মানসম্মত খাবার এবং অসাধারণ স্বাদ ও নতুনত্ব। খাজানা রেস্টুরেন্টে শুধু ভারতীয় খাবার পাওয়া যায়।
উত্তর-পশ্চিম ভারতের কাবাব, টিক্কা, সিকান্দির খাসি, দম বিরিয়ানি, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি সহ নানা স্বাদের মিষ্টি, নিজস্ব ঢঙের কোমল শরবত ও পানীয়। খাজানার বিখ্যাত মিঠাইগুলো পাশেই রয়েছে, যেন অতিথিরা পছন্দমতো স্বাদ নিতে পারেন।
খাজানার প্রধান পদগুলোর মধ্যে আছে ফ্রন্টিয়ার মিক্সড গ্রিল (চিংড়ি, মাছ, মুরগি ও খাসির সম্মিলিত কাবাব), জালালি ঝিঙ্গা, মাহি আচারি টিক্কা (কাঁটাবিহীন ভেটকি মাছের তন্দুর গ্রিল), রান বুঝকাজ্জি (খাসির লেগ রোস্ট), খাস কাবাব (পুদিনা ও পনিরের মালাইয়ে চিকেন শিক কাবাব)।
মুরগির পদের মধ্যে পাওয়া যাবে মুরগ্ তান্দুরি, চাঁদনি কালিয়া এবং মুরগ্ কালি মিরচ্ (কালো মরিচের তান্দুরি চিকেন)। এই কাবাবগুলোর সঙ্গে খেতে পারেন পেশোয়ারি নান, পুন্দিয়া পরোটা, তান্দুরি রুটি, বাটার নান, রুমালি রুটি ইত্যাদি।
গ্রেভি বা ঝোল জাতীয় পদের মধ্যে মিলবে—তাওয়া মাহি মসলা (ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ ও টমেটোর সঙ্গে রান্না করা মাছ), গোশত ভুনা, (সঙ্গে পেঁয়াজ-টমেটো মাসালা), মুরগ্ কোরমা (দমে রান্না করা হাড়বিহীন মুরগি), মুরগ্ মাখানি (মাখনে রান্না করা মুরগি), মাংসের দোপেঁয়াজা ইত্যাদি।
বাসমতি চালের ব্যবহার ভারতীয় খাবারের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। খাজানা তাই বাসমতি চালের বিরিয়ানি উপস্থাপন করেছে ভারতীয় ঢঙে। বাসমতি চাল, সঙ্গে মুরগি ও খাসির গোশত।
খাজানা একবারে ভারতীয় স্টাইলে দম পদ্ধতিতে বিরিয়ানি রান্না করে থাকে। মুরগ্ নূরমহল বিরিয়ানি, কাচ্চি গোশত কি বিরিয়ানি এবং মটর পোলাও খেয়ে ভোজনরসিক বুঝে যাবেন কেন এত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু এই বাসমতি চালের দম বিরিয়ানি। নিরামিষ পদগুলো যে কত সুস্বাদু ও অসাধারণ হতে পারে খাজানায় সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়।
খাজানায় সালাদের মধ্যে আছে থ্রি চিলি পটেটো সালাদ, কাবুলি চানা চাট এবং গার্ডেন ফ্রেশ গ্রিন সালাদ। নিরামিষ জাতীয় অন্য পদগুলোর মধ্যে আছে শোরবা-ই-গুলজার, ভেজিটেরিয়ান মিক্স গ্রিল, কোপ্তা কারি, পনির টিক্কা কাসুরি, আলু নাজাকা (মাখন ও বাদাম দিয়ে তান্দুরি উপায়ে রান্না করা আলু), পনির মাখানি, পনির রেশমি, মেথি চামান, কাজু খুম্ব কারি (দই, পেঁয়াজ, কাজু বাদাম, মাশরুম ও টমেটোর সুস্বাদু সমন্বয়), জিরা আলু, দহি গুজিয়া (দইয়ের একটি বিশেষ পদ), তাওয়া মিঠাই চাট ইত্যাদি নিরামিষভোজীদের জন্য খাজানা রেখেছে বিরিয়ানি গুল-ই-গুলজার (নিরামিষ দম বিরিয়ানি)।
রয়েছে নানা রকম শরবত আর মিষ্টি। জলজিরা, আইসক্রিম, কুলফি, দ্য গ্রিন লেডি, পিনা কোলাডা (আনারসের শরবত), সিন্ডারেলা (কমলার শরবত), লিচি পাঞ্চ (লিচুর শরবত), লাভারস ডিলাইট (আমের শরবত) ইত্যাদি সুস্বাদু ডেজার্ট।
মিষ্টি খাবারের মধ্যে আছে জিলাপি, কাজু বরফি, রসমালাই, চমচম, গোলাপ জামুন, কালাকান্দ, চকোলেট সন্দেশ, শনপাপড়ি, ছানার পায়েস, মিষ্টি দই, চিনিবিহীন রসগোল্লা ইত্যাদি। এসব আইটেম আপনি খাজানার মিষ্টি খাবারের আউটলেট খাজানা মিঠাইয়েও পাবেন।
কেবল মুখরোচক পদ নয়, বরং প্রতিটি পদের উপস্থাপনাতেও সব সময় জোর দেয়া হয় বলেই খাজানার পরিবেশন আকর্ষক। ভারতীয় খাবারের বনেদিয়ানা আর পরম্পরা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
বৈচিত্র্যময় সব ক্যুজিন শুরু থেকেই ঢাকার রসনাপ্রিয়দের দেয়ার যে চেষ্টা খাজানা করে আসছে, তা অব্যাহত থাকবে উষ্ণ আতিথেয়তার পাশাপাশি, নিশ্চিত করেছেন খাজানার প্রধান নির্বাহী অভিষেক সিনহা।
খাজানার নিচতলায় রয়েছে মিষ্টি ও স্ন্যাক্সের জন্য পৃথক কর্নার। উভয় তলায় রয়েছে অতিথিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
খাজানার বিশেষ রিক্রিয়েশন জোনটাও ভালো লাগবে যে কারও। খোলা আকাশের নিচে বসে কাটিয়ে দেয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সঙ্গে জিবে পানি আনা পদ হলে তো কথাই নেই। মেতে ওঠা যাবে সবান্ধব আড্ডায়।
সংযোজিত হয়েছে লাইভ কিচেন।
অভিষেক সিনহা মনে করেন, এটাই এখন খাজানার অতিথিদের কাছে মূল আকর্ষণ হয়ে উঠবে। নিজের অর্ডার করা ডিস তৈরির প্রক্রিয়াটাও দেখা যাবে স্বচক্ষে।
তিনি জানালেন, বিভিন্ন পদের সংযোজনে কেবল রসনাবিলাসকেই ঋদ্ধ করা হয়নি; বরং ভারতের বিভিন্ন জনপ্রিয় পথখাবারকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছে খাজানা। এখানে এখন একসঙ্গে বসে অন্তত দেড় শ অতিথি রসনাস্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। আর তাদের সেবা দিতে প্রস্তুত আছে জনা পঞ্চাশেক প্রশিক্ষিত কর্মী।
অভিষেক সিনহা আরও বলেন, ‘রেস্টুরেন্টে বসে আলাকার্ট পদ্ধতিতে অর্ডার দিয়ে চটজলদি এসব সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারবেন। ৩০ জন হলে বুফে সেটআপ দেয়া হয়।’
জাগরণ/এমএ