• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২, ১০:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০২২, ০৪:৩৪ এএম

মানবিক হতে সন্তানকে সময় দিন

মানবিক হতে সন্তানকে সময় দিন
শহিদুল-জেসমিন-শায়ান ● জাগরণ

প রি বা র  আ ন ন্দ

.....

আলভি  ইসলাম ।।

বাবা-মায়ের ধ্যান-ধারণা সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা বহুদিনের চর্চা এবং একটা অপরাধও। শিশুদের সৃজনশীলতাকে প্রতিবন্ধী করে দেয় অভিভাবকদের হাজারও শখ।

সন্তানদেরও ইচ্ছে হয় শিল্পী, আর্টিস্ট কবি এবং লেখক হয়ে সমাজের চিত্র তুলে ধরার। অথচ অভিভাবকরা ভেবেই থাকে ছেলে-মেয়েরা আকাশের সীমানা ধরবে। একজন ক্রিকেটার, ফুটবলার, ডাক্তার, অফিসার কিংবা জজ হয়। বাবা মায়ের সেই ফ্যান্টাসি একটা সময় সন্তানদের শরীরের ইনজেকশনের মতো পুষ হয়ে যায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায়।

কেন আমাদের বড় হয়ে এসব হতে হবে? তার ব্যখ্যা বা সারমর্ম আমাদের অভিভাবকরা দিতেন না। আমাদের ভাবনার বাইরে ছিল এই পেশাগুলোই কেন?

শুধু আমাদের ফ্যান্টাসি পুষ করতেন ডক্টর প্রকৌশলী মানেই বড় কিছু। সেই ফ্যান্টাসির নিচে চাপা পড়ে যেত আমাদের শৈশবের ইচ্ছেগুলো।

অভিভাবকরা এখন সন্তানদেরকে ডক্টর, প্রকৌশলী পুলিশ অফিসার বানাতে চাই, সক্রেটিস, প্লেটো বানাতে চাই। জন্মের পর তারা কিছু বুঝে উঠার আগে পরিচয় করিয়ে দেই ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ অফিসার এসব শব্দের সঙ্গে। ফলে বিদ্যাশিক্ষা শিশুর স্বভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।

ফলে বড় স্বার্থপরতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে শিশুরা। আনন্দগুলো ক্লাসের রোলের মানদণ্ডে বিক্রি হয়ে যায় খুব গোপনে। শৈশবে তা জেনেও আমরা কেন তাদের ইচ্ছেগুলো গ্রহণ করছি না, ভাবনার বিষয়।

স্কুল শুরুর আগেই শিশুদের আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক না করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মস্তিস্কে বসিয়ে দেই। যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা দিয়ে গেছে। আমরা মানি না শিশুকে মানসিকভাবে পরিণত হওয়ার আগেই কোন কিছু।

চাপিয়ে দেয়াও এক প্রকারের শিশু নির্যাতন। যার ফলে অহংকার ঘৃণা এই শব্দগুলো তাদেরকে প্রভাবিত করে দারুনভাবে। যা হিংস্রতার সঙ্গে আপস করার সমীকরণ। আমরা পড়ে এসেছি ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ কিন্তু কার ভবিষ্যৎ এটা স্পষ্ট না এই ভবিষ্যৎ শব্দটার মাঝে কি লোকানো তা স্পষ্ট না করে বুঝে উঠতে পারি না।

শৈশবের মানদণ্ডে আমরা যা করেছি সেই চিন্তা করে সন্তানদেরকে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দিই না। যার ফলে একাকীত্ব শব্দটা তাদের অসহায় করে তোলে। একটা জরিপে দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে একাকীত্বের কারণে। এর ফলে তাদের জীবন আলস্য, স্থবিরতা ভরে যায়।

মস্তিস্ক অলস হতে শুরু করে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি পথে বিচরণ করে। তাদের নতুন কিছু জানার আগ্রহ তৈরি হয় না। অথচ সমস্ত শিক্ষার মূলে রয়েছে জানার আগ্রহ, জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয় আড্ডা থেকে।

সবার আগে একজন মানুষ হওয়া জরুরি সেই শিক্ষা দেয়ার আগে আমরা বলি তোমার চাচা পুলিশ অফিসার তোমার মামা বড় জব করে তোমারও তাদের মতো হতে হবে।

বিবিসির একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বখ্যাত কনসাল্টেন্সি সংস্থা ম্যাকিনসি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৬টি দেশের ৮০ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। কারণ, তখন অটোমেশন তথা রোবটের মাধ্যমে এই কাজগুলো করা হবে।

দৈনন্দিন সকল দাফতরিক কাজ, হিসাবনিকাশ ও প্রশাসনিক ইত্যাদি সবই রোবটের মাধ্যমেই করানো সম্ভব হবে আগামীর পৃথিবীতে। এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে খ্যাতনামা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেল একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে যেসব চাকরি থাকবে, তার ৮৫ শতাংশই এখনও পর্যন্ত তৈরিই হয়নি।

একাডেমিক তথা ক্লাসের বাইরে খেলাধুলা, সঙ্গীত বা নাটকের ক্লাস, সৃজনশীল কাজ নিয়ে আমাদের শিশুদের তাদের আগ্রহ অনুযায়ী সুযোগ করে দেয়া। মানবিক ও সৃজনশীল কাজে আগ্রহী রাখতে তাদের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করা।

জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় সাহসী করে বাড়ায় তুলে একজন মানুষের দৈনন্দিন চলার পথে ৭৫ শতাংশ জীবনের বাস্তবিক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।

তাই আমাদের ধ্যান-ধারণাকে শিশুদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের ইচ্ছেকে ভালোবেসে আগামী পৃথিবীর জন্য তৈরি করতে হবে। শিশু এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমাদের এই ফ্যান্টাসি থেকে আমাদের বেরিয়ে না এলে আগামীর শিশুরা এই বিশাল পৃথিবীতে থেকেও বসবাস করবে ক্ষুদ্র পৃথিবীতে। শিশু বেড়ে উঠুক মনের আনন্দে।

ছবি ● শহিদুল ইসলাম মাসুদ, জেসমিন ইসলাম ও ওয়াজি আল ইসলাম শায়ান

জাগরণ/জীবনযাপন/এমএ