আশুগঞ্জ পাওয়ারের কাছে উৎসে করে এনবিআরের পাওনা ৩৫৭ কোটি টাকা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০১৯, ০৮:৪০ পিএম আশুগঞ্জ পাওয়ারের কাছে উৎসে করে এনবিআরের পাওনা ৩৫৭ কোটি টাকা
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন - ফাইল ছবি
দুই সংস্থার জঠিলতায় ৪ বছরের বকেয়া দেয়া হচ্ছে না
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব জমা দেয়ার অনুরোধ এনবিআরের

মাসিক বিদ্যুৎ বিলের উৎসে আয়কর বাবদ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা ৩৫৭ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৫ টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কর অঞ্চল-৮ এর উৎসে কর কর্তন মনিটরিং টিম এবং এনবিআরের উৎসে কর কর্তন টাস্কফোর্স টিম বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করেন। এসময় পরিদর্শক দল বিদ্যুৎ বিল থেকে আয়কর অধ্যাদেশ এর ৫২ ধারা অনুযায়ী আশুগঞ্জ পাওয়ার থেকে উৎসে আয়কর বাবদ ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ বছরে ৩৫৭ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৫ টাকা কর্তন করা হয়নি, এর প্রমাণ পায়। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎসে কর্তনযোগ্য আয়কর ৩১ কোটি ২৬ লাখ ২৯ হাজার ৩০০ টাকা,২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৩ কোটি ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩১ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪২ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩০ টাকা। তাই এই টাকা পরিশোধ করতে চলতি বছরের ৩ জুন কোম্পানিটিকে চিঠি দেয় রাজস্ব বোর্ড। চিঠিতে ১১ জুনের মধ্যে বকেয়া আয়কর বিউবোর হিসাবে জমা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর।

তবে উৎসে আয়কর নিয়ে এনবিআরের দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়- উল্লেখ করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাউবো ও রাজস্ব বোর্ডকে ১১ জুন চিঠি দেয় আশুগঞ্জ পাওয়ার। কোম্পানিটির অর্থ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাউবো ও আশুগঞ্জ পাওয়ারের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এ চুক্তিটি কস্ট বেজ এর ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে উৎসে আয়কর বিবেচনায় আসেনি। যেহেতু ট্যারিফ রেট নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোনো উৎসে আয়কর সংযুক্ত করা হয়নি। তাই কোম্পানটির বিদ্যুৎ বিল থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া পিপিএ এর সেকশন-১৬ অনুযায়ী আশুগঞ্জ পাওয়ারের মাসিক বিদ্যুৎ বিল থেকে যদি কোনো উৎসে আয়কর প্রদানের প্রয়োজন হয় তাহলে চুক্তি অনুযায়ী উৎসে কর বিউবো কর্তৃপক্ষ বহন করবে এবং পরিশোধ করবে। তাই এই টাকা কোম্পানিটি পরিশোধ করবে না বলে চিঠিতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পিপিএ এর পরে ভ্যাট ও কর পরিশোধের সকল দায়ভার বিউবোর। তারপরও এনবিআর আমাদের কাছে কেন বকেয়া উৎসে আয়কর পরিশোধের চিঠি দিয়েছে তা আমার জানা নেই। আর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা বিউবো, এনবিআর ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া উৎসে আয়কর কর্তন থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চলতি বছরের ১৭ জুন চিঠি দেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান। চিঠিতে সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি আশুগঞ্জ পাওয়ার ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করার পর পুনরায় উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য এনবিআরের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রজেক্ট কস্টের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই ঋণ থেকে হয়েছে। আর আশুগঞ্জ পাওয়ারের মাসিক বিদ্যুৎ বিলের মধ্যে ঋণের সুদ-আসল, পরিচালনা ও মেরামত খরচ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহ্রত জ্বালানি ব্যয়ের অর্থই সিংহভাগ। কেবল প্রজেক্ট কস্টের ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ ইকুইটির উপর ১২ শতাংশ রিটার্ন অন ইকুইটি বিবেচনা করে এনবিআর হিসাব করেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা আইন মেনে উৎসে আয়কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। আইনের বাইরে কাজ করার ক্ষমতা এনবিআরের নেই। এর আগেও তারা উৎসে আয়কর পরিশোধ করেছে।

প্রসঙ্গত, মোট ৮টি ইউনিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি স্টিম ইউনিট, ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস ইঞ্জিন পাওয়ার প্ল্যান্ট, ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মডিউলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সিসিপিপি এবং আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সিসিপিপি পাওয়ার প্ল্যান্ট। এসব প্ল্যান্টের মোট স্থাপিত ক্ষমতা ১ হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫৮০ মেগাওয়াট। কোম্পানিটির ৪০০ মেগাওয়াট এবং ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প চলছে।

এআই/ এফসি

আরও সংবাদ