ভোগান্তির নাম ঈদে বাড়ি ফেরা 

ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় : মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট 

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০১৯, ০৯:৩৩ এএম ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় : মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট 
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট

ভোগান্তির অপর নাম ঈদে বাড়ি ফেরা।ঈদ আসার একমাস আগে থেকে ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য প্রশাসনের মহাপরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি সড়ক রেল ও  জল পথ সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বড় বড় ডায়লগসহ রূপ কথার মতো আশার বাণী শুনিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এর এক তৃতীয়াংশও রূপ দিতে ব্যর্থ হন। এর ফলে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
 
জানা গেছে, ঢাকা থেকে বিড়ম্বনা সঙ্গে নিয়ে ঈদযাত্রা পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরায় এমন ভোগান্তিতে মানুষ ক্ষুব্ধ। সড়কপথে দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বেশি। রেলপথেও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রত্যেকটি ট্রেনই সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ১২ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে করে উত্তর বঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ওই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময়ের মধ্যে ঘরে ফেরা নারী ও শিশুদের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়েছে। 
 
ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আবুল হোসেন বলেন, ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ঘরমুখো মানুষের চাপও তত বাড়ছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এসব জায়গায় খালি পায়ে চলাচল করাটা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ঈদে একটু গাড়ির চাপ বেশি হবেই। কিন্তু এবার আগেভাগেই গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুতের কাজের জন্য রাস্তার পাশে একটু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় আরো একটু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুতই যানজট নিরসন করার আশা ব্যক্ত করেন এই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা। 

এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পরিবার পরিজন ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। পরিবহন সংকটের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু অসাধু চালক ও তার সহযোগীরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট 

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সাইদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি পেয়ে পোশাক শ্রমিকরা বাড়িতে যেতে শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় গাড়ির চাপ একটু বেশি ছিলো। 
তিনি বলেন, সাভারে মহা-সড়কগুলোতে ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাপ সামলে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একযোগে নাড়ির টানে ঈদ করতে বাড়ি ফেরার জন্য কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তবে রাস্তায় এসে যানবাহন সংকট ও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন মহাসড়কে কোনো যানজট নেই তবে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে যানবাহনগুলো কিছুটা ধীরগতিতে চলাচল করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কসহ প্রতিটি সড়কেই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। এতে করে গাড়ি চলাচলে কিছুটা ধীরগতির পাশাপাশি কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজটও লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া, উলাইল, গেন্ডা, সাভার রেডিওকলোনী, সিএন্ডবি, বিশমাইল, নবীনগর, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল, ইপিজেড, জিরানী ও বাইপাইল- জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো এবং আশুলিয়ার বাজার এলাকায় প্রতিটি পয়েন্টেই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। চালক ও যাত্রীরা জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মহাসড়কগুলো যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ সড়কের কাঞ্চন সেতু থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে ভোগান্তিত পড়েছেন গরুবোঝাই ট্রাক, দূরপাল্লার বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনসহ ঈদে ঘরমুখো যাত্রী সাধারণ।

অপরদিকে দুপুর দেড়টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল সোয়া ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। গতকাল দুপুর সোয়া ১টায় লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সাড়ে চারটার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হলে ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তবে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। 

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ বগির সামনের দুটি চাকা দুপুরে  বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজার কাছে লাইনচ্যুত হয়। স্থানীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করে বগিটি লাইনে তোলা হয়। পরে সাড়ে ৪টায় ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ায় সেতু পূর্ব স্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, টাঙ্গাইল স্টেশনে একতা এক্সপ্রেস, মহেড়া স্টেশনে নীল সাগর ও জয়দেবপুর স্টেশনে বনলতা ট্রেন আটকা পড়ে। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় প্রায় ৫০ মিটার লাইন কিছুটা বেঁকে যায়। সে বেঁকে যাওয়া অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথমে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের পক্ষ থেকে যাত্রীদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে যাত্রীদের মাঝে।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও সংবাদ