স্মৃতির শহর রাজশাহী

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৫:৪৪ পিএম স্মৃতির শহর রাজশাহী
জাকির হোসেন

রাজশাহী। উত্তরের মহানগর। আমার স্মৃতির শহর। প্রায় ৩০ বছর আগে এ শহরে কেটেছে আমার কৈশোরের দুরন্ত দু’টি বছর। সেই সময়ের রাজশাহীকে ঘিরে কত যে স্মৃতি— আজও আমার মনের মাঝে এলোমেলো ঘুরে বেড়ায়। স্মৃতির ইন্দ্রজালে প্রায়শই অনেকগুলো বছর ঝাঁপসা হয়ে আসে। দূর অতীতকে কাছে টানার ঝোঁক বাড়ে, কালের যাত্রায় ধূসর হয়ে যাওয়া স্মৃতিতে রঙের ছোঁয়া লাগে। স্থবির স্মৃতিরা জীবন্ত হয়ে ওঠে, প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, ময়ূরের মতো নেচে ওঠে। এর বিপরীতে বিষণ্ন স্মৃতিরা আপন খেয়ালে আত্মভোলা বাউলের মতো বিরহে কাতর হয়, বোশেখের বিবর্ণ মেঘের মতো দূর আকাশে উড়ে যায়, উড়তে উড়তে বহু ওপরে উঠেও যখন অন্তহীন আকাশে কাউকে খুঁজে পায় না, তখন শ্রাবণের সজল মেঘ হয়ে ফিরে আসে, আমার চারপাশে ভিড় জমায়, দিনভর অঝর ধারায় কান্না করে। মন খারাপের এমন দিনে রাজশাহীকে ঘিরে মনের মাঝে চলতে থাকে জীবনের সকল পাওয়া না পাওয়ার এক বিশুদ্ধ সমীকরণ। 

এখনও চলতি পথে, অফিস আদালতে কেউ যখন রাজশাহীর নাম উচ্চারণ করে, তখন মনে হয় সে যেন রাজশাহী কলেজের কথা বলছে, আমাদের বান্ধবী কান্তার কথা বলছে, বন্ধু বাবুর কথা বলছে, আমার অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব, সুহৃদ ও পরিচিতজনদের কথা বলছে। তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে, মনের মাঝে বেজে ওঠে হাজার তারের বীণা, গান গেয়ে ওঠে রঙ-বেরঙের পাখি আর রাজশাহী আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, আমাকে স্মৃতিকাতর করে। আমি ফিরে যাই রাজশাহী কলেজ চত্বরে, নতুন শাখা ছাত্রাবাসে, দীনেশের ক্যান্টিনে। দীনেশ আমাকে দেখেই উল্লাসে ফেটে পড়ে, চেয়ার-টেবিল মুছে আমাকে বসতে দেয়। গরম গরম সিঙারা ভেজে দেয়, চা বানিয়ে দেয়। চা-সিঙ্গারা খেয়ে আমি বেরিয়ে পড়ি সাহেব বাজারের উদ্দেশে, ক্রমান্বয়ে ঘুড়ে বেড়াই সোনাদীঘির মোড়, পদ্মার ধার, আলীগড় লাইব্রেরি, মাজদা হোটেল, মনি চত্বর, জিরো পয়েন্ট, তালাইমারি মোড়, বিন্দুর মোড়, হেতেমখা, সিপাইপাড়া, কুমারপাড়া, কাদিরগঞ্জ, নিউ মার্কেটসহ শহরের বিভিন্ন স্মৃতি- বিজড়িত স্থানে। সম্বিত ফিরে এলে নিজেকে খুঁজে পাই অফিসের প্রিয় ডেস্কে।   

‘‘রাজশাহী আমাদের বান্ধবী কান্তার মতোই সহজ, সরল, সুন্দরী ও প্রাণবন্ত। আবেগে, আন্তরিকতায় ও আচরণে বেশ মানবিক। এ শহরেও অভাব আছে, দুঃখ আছে, মৃত্যু আছে, কান্না আছে, তেমনি মানবিক বোধও আছে। এই যান্ত্রিক ও জটিল সময়েও এখানে জীবনের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মনের মিল যেখানে নাই সেখানেও মেলামেশা আছে, কথাবার্তা আছে, ভাবের আদান-প্রদান আছে’’

...............................

রাজশাহীর সঙ্গে আমার পরিচয় লেখাপড়া সূত্রে। উচ্চ মাধ্যমিকে রাজশাহী কলেজে ভর্তির সুবাদে। আসছে ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর (২০১৯) আমাদের পুনর্মিলনী। এই উৎসব উপলক্ষে ৯০ ব্যাচের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একটি ফেসবুক পেজ এবং একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে চলছে স্মৃতিচারণ, ঝালিয়ে নেয়া হচ্ছে পুরনো বন্ধুত্ব।    

রাজশাহী কলেজে আমি ভর্তি হই ১৯৮৮ সালে, অর্থাৎ তখন যাই-যাই করছে আশির দশক, হাতছানি দিয়ে ডাকছে নব্বইয়ের গণআন্দোলন। তখন নিরীহ, নিস্তরঙ্গ অথচ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা রাজশাহীর জন-জীবন সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ক্রমেই উত্তাল হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন বিকেলে শহরের একাধিক স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়, বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে বড় রাস্তায় জড়ো হয়। অগুণিত মানুষের সম্মিলনে রাজপথে মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা শহর। আচমকা শুরু হয় পুলিশের লঠিচার্জ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বিক্ষুব্ধ জনতার ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ, মুহূর্তেই শহরময় ছড়িয়ে পড়ে বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ। দূর থেকে ভেসে আসে ছত্রভঙ্গ জনতার মিছিলের আওয়াজ, ককটেল বিস্ফোরনের শব্দ। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত যত গভীর হয় ততই শহরকে গ্রাস করে গভীর নীরবতা, আর মানুষের মনে ভিড় জমায় অজানা ভয় ও আতঙ্ক। গভীর রাতে বিকট শব্দে সাইরেন বাজিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলে পুলিশের টহল ভ্যান। এই সাইরেনের শব্দ মুহূর্তেই স্তব্ধ, নিশ্চুপ, নির্বিকার রাত্রির অজানা বিপদের কোলে মিশে যায়, রাতের নীরবতাকে এই আওয়াজ বিশেষভাবে ভাঙতে পারে না বরং স্তব্ধতাকে আরও স্পস্ট করে তোলে। রাত্রি তার আদিম ও অকৃত্রিম রূপ ও স্বরূপ জানান দেয়। নৈশব্দ, ভয়, আতঙ্ক সারা শহরকে গ্রাস করে। বিন্দুর মোড়ের কবরস্থানের মতো নিঝুম স্তব্ধতা গোটা শহরকে আচ্ছন্ন করে। স্তব্ধতার বুক চিরে প্রায়শই দূর থেকে অস্পস্ট কোলাহল ভেসে আসে। বাড়ির জানালা দিয়ে ক্ষণিকের জন্য আতঙ্কিত মুখ উঁকি দেয়। শুরু হয় কারফিউ। তারপর মিলিটারি ট্রাক আসে। মিলিটারি ট্রাকের ঘরঘর শব্দ চারপাশের মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে। শুরু হয় চোরাগুপ্তা হামলা। এদিক-ওদিক সোরগোল ওঠে প্রতিবাদী মানুষের  স্লোগানের শব্দ। রাজশাহী শহরে এটা তখন নিত্যদিনের ঘটনা— সকাল-সন্ধ্যা আর দিনরাত্রির কাহিনী... 

‘‘শুক্লপক্ষের রাতে গোটা শহর প্লাবিত হয় জ্যোস্নার বন্যায়। আর কৃষ্ণপক্ষে রাতের আকাশে বসে হাজার তারার মেলা। এসব কিছু এ শহরের অগুণিত মানুষকে একটি স্থায়ী সম্পর্কের বন্ধনে ধরে রেখেছে’’

...............................

এমন একটি অগ্নিগর্ভ সময়ে রাজশাহীর সঙ্গে আমার পরিচয়। অতি সহজেই এ শহরের সঙ্গে আমার নিবিড় সর্ম্পক গড়ে ওঠে। রাজশাহী আমার প্রিয় বান্ধবী, এ শহর আমার ‘মা’ নয় মোটেই। কেননা এ শহরের গর্ভে আমার জন্ম হয়নি, বেড়েও উঠিনি। রাজশাহীর সঙ্গে  আমার পরিচয় কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে। এ শহর আমাকে মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণীর মতো গভীর আন্তরিকতায় বন্ধুত্বের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিবিড়, তবু রাজশাহী আমার ‘প্রেমিকা’ নয় মোটেই, তাকে প্রেমিকা বলাটা কোনও বিচারেই ঠিক হবে না। কেননা, প্রেমিকা হলে তার মন জয় করতে আমাকে অনেক সাধনা করতে হতো, অনেক কষ্ট করতে হতো, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হতো, সে সহজে ধরা দিতে চাইতো না, ‘জৈবতি কন্যা’র মতো আচরণ করতো, প্রথমটায় মুখ ফিরিয়ে নিতো, লুকিয়ে রাখতো অন্তরের গোপন রহস্য। কিন্তু রাজশাহীর ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। তবে আমার বর্তমান শহর রাজধানী ঢাকাকে অতি অব্যশই ‘প্রেমিকা’ বলা যায়। কেননা এ শহর প্রেমিকার মতোই রহস্যময়ী। দূর থেকে এ শহর সুন্দরী তরুণীর মতো সবাইকে চটুল আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু কাছে এলে বৈরী আচরণ করে, মুখ ফিরিয়ে নেয়, ধরা দিতে চায় না। এ এক জটিল শহর, আজব শহর, রহস্যময় শহর।

এসব কিছু বিবেচনায় ঢাকার চেয়ে রাজশাহী অনেক দিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। রাজশাহী আমাদের বান্ধবী কান্তার মতোই সহজ, সরল, সুন্দরী ও প্রাণবন্ত। আবেগে, আন্তরিকতায় ও আচরণে বেশ মানবিক। এ শহরেও অভাব আছে, দুঃখ আছে, মৃত্যু আছে, কান্না আছে, তেমনি মানবিক বোধও আছে। এই যান্ত্রিক ও জটিল সময়েও এখানে জীবনের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মনের মিল যেখানে নাই সেখানেও মেলামেশা আছে, কথাবার্তা আছে, ভাবের আদান-প্রদান আছে। অতিশয় স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন,  সহজ ও সরল এই মেলামেশা, এই কথাবার্তা, এই ভাবের আদান- প্রদান। এখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক লোক দেখানো নয়, কৃত্রিম নয়।

রাজশাহীর সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবন তৃষ্ণা প্রবল। তবে ব্যক্তিগত জীবন এখানে অত্যন্ত নিরস। একরঙ্গা ছবির মতো বৈচিত্র্যহীন, একঘেয়ে। প্রতিদিন একই কাজ, একই রুটিন। আগামী পুরো সপ্তাহ কিভাবে কাটবে তা সপ্তাহের শুরুতে অনায়াসে বলে দেয়া যায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর এ শহরের অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার বিশেষ কোনও পরিবর্তন ঘটে না।

অন্যদিকে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবন এখানে প্রতিদিনই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, তারা নিজের ওপর থেকে ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। আরও নির্বোধ হচ্ছে, জীবন থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হচ্ছে- ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বোকামির দাস হচ্ছে। ফলে ইহজাগতিক সুখ সুবিধা আর স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তাদের তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারলৌকিক জীবনের প্রতি দুর্বলতা বাড়ছে, অস্পস্ট দুঃশ্চিন্তা ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে, জীবন সম্পর্কে একটা অজানা ভীতির শৃঙ্খলে তারা আবদ্ধ হচ্ছে। 

এ শহরে মানুষে মানুষে যেমন মেলবন্ধন ও সম্প্রীতি আছে, তেমনি আছে একান্ত আপনজনের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত। আছে নব্য ধণিক শ্রেণির বিলাসী জীবন, মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনের নিদারুন টানাপোড়েন, বস্তিবাসী বিপণ্ন মানুষের দারিদ্র্যের ভয়াবহতা। আছে শ্রমজীবী মানুষের দুর্বিসহ সংগ্রামী জীবন, লোভী মুনাফা খোরদের পিশাচবৃত্তি, সভ্য মানুষের দীর্ঘ জটিল অসভ্যতা। আছে নিরক্ষর সহজ সরল মানুষের বোকামিতে ভরা অর্থহীন জীবন, রাজনীতিকদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি, দালাল বুদ্ধিজীবীদের আপসকামিতা, অসৎ সাংবাদিকের বিবেক বর্জিত তৎপরতা। এসব নির্মম, মর্মান্তিক, নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ জীবনের বিপরীতে আছে সৎ ও আদর্শবান মানুষের আত্মত্যাগের মহান কাহিনী। পরস্পর বিরোধী এসব কিছুর নিবিড় সহাবস্থান রাজশাহীতে সব সময় চোখে পড়ে।

নানা দিকে থেকেই পিছিয়ে মহানগরী রাজশাহী। এ শহরে এখনও একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এটা হলে এখানে সাহিত্য এবং সংস্কৃতির চর্চা আরও গতিশীল হতো। তৈরি হতো প্রামাণ্য চিত্র, নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এর মধ্যদিয়ে এ শহরের স্বরূপ এবং শহরবাসীর যাপিত জীবনের চিত্র প্রকাশ হতো। 

প্রতিটি নগরের একটা আলাদা রূপ আছে, আলাদা আবহাওয়া ও জলবায়ু, আলাদা রীতি-নীতি ও চালচলন এবং নিজস্ব প্রাণ আছে। নিজ নিজ শহরের গর্ভে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা কবি, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, লেখকরা সহজেই এসব কিছু উপলব্ধি করেন। সহজেই তারা নিজ শহরের রূপ এবং স্বরূপকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন। তাই তাদের লেখায় প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ পায় শহরের বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, কুয়াশা, সূর্যালোকের বর্ণনা,  প্রচ্ছন্নভাবে প্রকাশ পায় শহরের সকল শ্রেণি, পেশা, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জীবনের চিত্রকল্প। কোনও কিছুই তাদের দৃষ্টির আড়াল হয় না, অগোচর হয় না, বোধের বাইরে থাকে না। নিজ শহরের মানুষের চিন্তা, চেতনা, কাজ, অনুভূতি, স্বপ্ন সবকিছুই তারা বুঝতে পারেন। স্বতন্ত্রভাবে তারা কোনও শহরের রূপ এবং স্বরূপকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলেও তাদের লেখায় শহরের সমন্বিত রূপ জীবন্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু রাজশাহী এখনও তার লেখক, সাংবাদিক, কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার এবং চলচ্চিত্রকারকে খুঁজে পায়নি বলেই মনে হয়। এ শহরকে নিয়ে এখনও কোনও ভালো গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, রচিত হয়েছে বলে শুনিনি, কালজয়ী কোনও নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বলেও আমার জানা নেই, যেখানে প্রকাশ পেয়েছে রাজশাহীর রূপ ও স্বরূপ, প্রকাশ পেয়েছে শহরবাসীর জীবনের চিত্রকল্প।

...............................

‘‘এ শহরে মানুষে মানুষে যেমন মেলবন্ধন ও সম্প্রীতি আছে, তেমনি আছে একান্ত আপনজনের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত। আছে নব্য ধণিক শ্রেণির বিলাসী জীবন, মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনের নিদারুন টানাপোড়েন, বস্তিবাসী বিপণ্ন মানুষের দারিদ্র্যের ভয়াবহতা। আছে শ্রমজীবী মানুষের দুর্বিসহ সংগ্রামী জীবন, লোভী মুনাফা খোরদের পিশাচবৃত্তি, সভ্য মানুষের দীর্ঘ জটিল অসভ্যতা’’

...............................

এ শহরের আকাশ এখনও মুক্ত। সম্প্রতি এখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে কংক্রিটের বহুতল দানবরা। তবে সংখ্যায় এরা খুব বেশি নয় বলে এখনও গ্রাস করতে পারেনি নীল আকাশ। তাইতো ক্লান্ত বিকেলের সোনারোদ ছড়িয়ে পড়ে শহরময়, সন্ধ্যায় আকাশে ওঠে মায়াবী চাঁদ, দূর দিগন্তে চোখ মেলে চেয়ে থাকে ধ্রুবতারা। শুক্লপক্ষের রাতে গোটা শহর প্লাবিত হয় জ্যোস্নার বন্যায়। আর কৃষ্ণপক্ষে রাতের আকাশে বসে হাজার তারার মেলা। এসব কিছু এ শহরের অগুণিত মানুষকে একটি স্থায়ী সম্পর্কের বন্ধনে ধরে রেখেছে। আর যারা সময়ের প্রয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে এ শহরে এসেছিল, এখন এ শহরে নেই, তারাও সবসময়ই এ শহরের প্রতি একটি গভীর টান অনুভব করে। এখানে ফেরার জন্য অনেকেরই মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে, অস্থির হয়ে ওঠে...

লেখক ● সাংবাদিক  

আরও সংবাদ