• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২১, ০৯:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৫, ২০২১, ০৯:১২ পিএম

দূরবর্তী গ্যালাক্সির সন্ধানে

দূরবর্তী গ্যালাক্সির সন্ধানে

বছর দশেক আগে জ্যোতির্বিদরা হাবল টেলিস্কোপের তথ্য ব্যবহার করে মহাশূন্যের সবচেয়ে দূরের দৃশ্যমান গ্যালাক্সিটির খোঁজ করছিলেন। এই খোঁজার পর্যায়ে তারা দ্রুতই একে অপরের রেকর্ড ভাঙছিলেন। এই দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর দূরত্ব নির্ধারণ একটি কঠিন কাজ এবং বিভিন্ন গবেষক দলের গবেষণার ফলও কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই প্রতিযোগিতায় ২০১২ সালে আবিষ্কৃত MACS0647-JD গ্যালাক্সিটি অনেক দিন পর্যন্ত টিকে ছিল।  বর্তমানে GN-z11 নামে আর একটি গ্যালাক্সিকে সবচেয়ে দূরবর্তী বলা হচ্ছে। MACS0647-JD গ্যালাক্সিটির লাল সরণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০.৩, যার অর্থ একটি ‘সমতল’ মহাবিশ্বে এই গ্যালাক্সি থেকে যে আলো আমরা এই বছর অবলোকন করছি, তা প্রায় ১৩. ৩ বিলিয়ন (বা ১ হাজার ৩৩০ কোটি) বছর আগে রওনা দিয়েছিল। এর অর্থ এই নয় যে এই গ্যালাক্সিটির দূরত্ব ১৩. ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। কারণ যে আলো আমরা আজ দেখছি, সেটা বিকিরণের সময় এই গ্যালাক্সিটি ‘আমাদের’ অনেক কাছে ছিল (যদিও পৃথিবীর তখন জন্ম হয়নি) এবং ‘এই মুহূর্তে’ সেটার দূরত্ব ১৩. ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষের অনেক বেশি হবে। স্থানের (বা দেশের) প্রসারণের জন্য মহাকাশবিদ্যায় দূরবর্তী গ্যালাক্সিদের দূরত্ব নির্ধারণ করা তুলনামূলকভাবে জটিল এবং একটি ‘সমতল’ মহাবিশ্বে এই গ্যালাক্সিটির ‘বর্তমান’ দূরত্ব ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষের কাছাকাছি।


চিত্র ১:  হাবল দুরবিনে MACS0647-JD একটি লাল বিন্দু মাত্র 

কেন এই গ্যালাক্সির দূরত্ব ১৩. ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ নয়? প্রথমত, যখন ওই গ্যালাক্সি থেকে আলো রওনা দিয়েছিল, তখন সেই গ্যালাক্সি ও আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সির মধ্যে দূরত্ব ছিল ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষের মতো। এটা কীভাবে আমরা গণনা করছি, সেটা পরে বলছি। সেই গ্যালাক্সি থেকে আলোর কণিকারা যত পৃথিবীর দিকে আসবে, মধ্যের স্থানের প্রসারণ ক্রমাগত হতেই থাকবে। কাজেই আলোকে সেই সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে সাঁতরাতে হবে। আমি একটা নদী সাঁতরে পার হতে চাই। কিন্তু সাঁতরানোর সময় দেখি ও পাড় আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পেছন ফিরে দেখি, যে পাড় থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেই পাড়ও দূরে চলে যাচ্ছে। তাই ফোটনদের ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষের বদলে ১৩. ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ লাগবে আমাদের কাছে পৌঁছাতে। তত দিনে উৎসের গ্যালাক্সিটি দূরে সরে গিয়ে পৃথিবী থেকে ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করবে। আমাদের দুরবিনে সেই গ্যালাক্সির যে আলো দেখছি, সেটা ১৩. ৩ বিলিয়ন বছর আগে গ্যালাক্সিটির কী অবস্থা ছিল, তাই দেখাচ্ছে। স্থানের স্ফীতির ফলে এর মধ্যে আবার ফোটনেরও তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়েছে, যার ফলে তার রেড শিফট বা লাল সরণ হয়েছে। অতি বেগুনি তরঙ্গে যে ফোটনের সৃষ্টি হয়েছিল, স্থান সম্প্রসারণের ফলে তাকে অবলোহিত তরঙ্গে দেখছি।
MACS0647-JD গ্যালাক্সির লাল সরণ বা z হচ্ছে ১০.৩। কাজেই সেই গ্যালাক্সির যে আলো আমরা আজ দেখছি, সেটা সেই গ্যালাক্সি থেকে যখন বেরিয়েছে তখন মহাবিশ্বের ব্যাস আজ থেকে ১০.৩ + ১ = ১১.৩ গুণ ছোট ছিল। এই হিসাবটার জন্য আমাদের মহাবিশ্বের একটা মডেল ঠিক করতে হবে। এটার জন্য জ্যোতির্বিদরা আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিকতা সমীকরণের ফ্রিডমান সমাধান ব্যবহার করেন। মহাবিশ্বের মডেল বিভিন্ন প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে। আপাতত আমরা চারটা প্যারামিটার ঠিক করি– লাল সরণ, হাবল ধ্রুবক, বস্তুর (কৃষ্ণ বস্তুসহ) পরিমাণ ও ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণ শক্তির পরিমাণ। আমাদের মহাবিশ্বের দেশ-কালের মেট্রিক হবে সমতল। অর্থাৎ আলো এই মহাবিশ্বে স্থানীয় বিচ্যুতি বাদ দিলে মোটামুটিভাবে সরলরেখায় ভ্রমণ করবে। যদি হাবল ধ্রুবক ৬৮, বস্তুর পরিমাণ ২৭% ও কৃষ্ণশক্তির পরিমাণ ৭৩% ধরা হয়, তবে এই মহাবিশ্বের বয়স হবে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। এই মডেলে বিগ ব্যাং-এর ৪৫৫ মিলিয়ন বছর পরে সেই সুদূর গ্যালাক্সি থেকে আলোর যাত্রা শুরু হয়। সেই গ্যালাক্সির ‘কো-মুভিং’ বা বর্তমান দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। তাহলে যে আলো আমরা আজ দেখছি, সেটা যখন সেই গ্যালাক্সি থেকে বেরিয়েছিল, তখন আমাদের আজকের অবস্থান ও সেই গ্যালাক্সির মধ্যে দূরত্ব ছিল ৩২/১১.৩ বা প্রায় ৩ বিলিয়ন আলোক বছরের মতো। সেই ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ফুলেফেঁপে আজ ৩২ বিলিয়ন হয়েছে। এর মধ্যে মহাবিশ্বের ১৩.৩ বিলিয়ন বছর বয়স বেড়েছে।

 
 
চিত্র ২: মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দুর স্থানের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ১৩.৩ বিলিয়ন বছরে যে গ্যালাক্সি আমাদের ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ছিল, তা ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছে। 

আমরা কি তাহলে ওই গ্যালাক্সির থেকে দূরবর্তী কোনো বস্তু এর আগে অবলোকন করিনি? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! করেছি। দৃশ্যমান মহাবিশ্বের প্রায় শেষ প্রান্ত থেকে আগত আলো আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সেই আলো গ্যালাক্সির মতো কোনো একক বস্তু থেকে আসছে না, সে আলো আসছে আমাদের চারপাশ ঘিরে মহাবিশ্বের যে আপাত ‘সীমানা’— সেখান থেকে। সেই আলো অবশ্য চোখে দেখা যায় না। তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য মাইক্রোওয়েভ এলাকায়। কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB বা অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ) বহু কোটি বছর আগে ঘটা বিগ ব্যাং বিস্ফোরণে সৃষ্ট শক্তির অবশেষ। 

আমাদের দ্বারা নিরূপিত প্রতিটি CMB ফোটন দৃশ্যমান মহাবিশ্বের একদম শেষ প্রান্ত থেকে আসছে। বিগ ব্যাং-এর পরে বস্তুর ঘনত্ব ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসছিল। কিন্তু তার মধ্যেও আলোর কণিকা বা ফোটন ইলেকট্রনের মেঘের মধ্যে আটকে পড়েছিল। বিগ ব্যাং-এ সৃষ্ট ফোটন কণাসমূহ ইলেকট্রনের সঙ্গে ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। যেহেতু সেই জায়গা থেকে কোনো ফোটনের বিকিরণ হয়নি, সেই অতি ঘন অঞ্চল আমাদের জন্য অস্বচ্ছ থেকে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে তাপমাত্রা ঠান্ডা হয়ে এলে ইলেকট্রন প্রোটনের কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করল হাইড্রোজেন পরমাণুর। প্রথম প্রথম সিএমবি ফোটন সেই পরমাণুগুলোকে আয়নিত করতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরে ফোটনের শক্তি কমে যাওয়াতে সেই নিউট্রাল পরমাণুগুলোকে সে আয়নিত করতে সক্ষম হলো না এবং সেই ফোটনগুলো ধ্বংস হলো না। যার ফলে বিগ ব্যাং-এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে ফোটন মুক্ত হলো। সেই ফোটনই প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পরে আজ আমরা সিএমবি হিসেবে পর্যবেক্ষণ করছি। সেই ফোটন যখন বিকিরিত হয়েছিল, তখন মহাবিশ্বের ব্যাস আজ থেকে প্রায় এক হাজার গুণ ছোট ছিল। এর মধ্যে মহাবিশ্বের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে এই সিএমবি ফোটনের তাপমাত্রা তাদের আদি ৩০০০ কেলভিন থেকে ২.৭ কেলভিনে নেমে এসেছে।

 
 
চিত্র ৩: মহাবিশ্বের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রনের ঘনত্ব কমে এলে ফোটন মুক্তি পেল বিগ ব্যাং-এর ৩৮০,০০০ বছর পরে। 

বলা যায় সিএমবির প্রতিটি ফোটন মহাশূন্যের শেষ প্রান্ত থেকে এসেছে। কিন্তু তারা মুক্তি পেয়েছে বিগ ব্যাং-এর ৩৮০,০০০ বছর পরে, তার মানে আমরা যা-ই করি না কেন, সেই অস্বচ্ছ ‘দেয়াল’ পার হতে পারব না। অর্থাৎ বিগ ব্যাং-এর ৩৮০,০০০ বছরের মধ্যে কী হয়েছিল, তার কোনো সম্যক ছবি আমরা পাব না। যদিও নিউট্রিনো পটভূমি বলে একটা জিনিস আছে, যার সূত্রপাত হয়েছে বিগ ব্যাং-এর প্রথম ১০ সেকেন্ডের মধ্যে, সেই আদি নিউট্রিনোর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারও আগে মহাবিশ্বের শুরুতে যদি অতি স্ফীতি (inflation) হয়ে থাকে তাতে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ছাপ রয়ে যাবে CMB-র মানচিত্রে। বিজ্ঞানীরা তারও সন্ধান করে যাচ্ছেন।  
এই ‘দেয়ালটা’ কি সত্যি একটা কিছু? এর উত্তরটা মহাজাগতিক অনেক কিছুর মতোই একটু জটিল। প্রথমেই বলি আলোর গতির (সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার) সীমাবদ্ধতার জন্যই এই ‘দেয়ালের’ সৃষ্টি, আলোর গতি অসীম হলে আমরা মুহূর্তেই সমগ্র মহাবিশ্ব দেখে ফেলতাম। এমনকি সিএমবির এই অস্বচ্ছ দেয়ালও আমাদের জন্য বাধা হতো না। কারণ ‘এখনই’ সেখানে যেতে পারলে সেই ‘দেয়াল’ থাকত না, যেমন আমরা যেখানে আছি সেখানে কোনো ‘দেয়াল’ নেই। 


 
চিত্র ৪: আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব এক ঘনবস্তুর অস্বচ্ছ দেয়াল দিয়ে আবৃত, যে দেয়াল থেকে CMB ফোটন বের হয়ে আসছে।  

আমরা যদি কোনো অলৌকিক উপায়ে সেই ‘এখনই’ দেয়ালে উপস্থিত হতে পারতাম তাহলে আমরা হয়তো দেখতাম সেই ‘দেয়ালের’ অবস্থানে অবস্থিত আমাদের মতোই এক গ্যালাক্সি, আমাদের চারপাশের সাধারণ যে রকম গ্যালাক্সি, সে রকম গ্যালাক্সিতে ভরপুর। আর সেখানে যদি আমাদের মতো ‘বুদ্ধিমান’ প্রাণী থেকে থাকে, তারাও হ্য়তো দুরবিন লাগিয়ে আমাদের দেখছে, কিন্তু আমাদের গ্যালাক্সির বদলে তারা দেখছে সেই সিএমবি ‘দেয়াল’। তারা হয়তো কোনো দিনই জানবে না বর্তমানের ছায়াপথের কথা, এই মুহূর্তে ছায়াপথ তাদের কাছ থেকে আলোর গতিবেগের ঊর্ধ্বে দূরে সরে যাচ্ছে।  
চিত্র ৫: প্রতিটি গ্যালাক্সি সেটির দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত।  
দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হচ্ছে আমাদের পর্যবেক্ষণের আওতাধীন মহাবিশ্ব, শুধু গত ১৩.৮ বিলিয়ন বছরের মধ্যে যে আলো আমাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে, সেই আলো অবলোকনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সীমানা রচিত। মহাবিশ্বের মধ্যে কোনো বিশেষ অবস্থান নেই, মহাবিশ্বের কোনো কেন্দ্র নেই। প্রতিটি দর্শক তার নিজস্ব দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ‘কেন্দ্রে’ দাঁড়িয়ে আছে। সমগ্র মহাবিশ্ব কত বড় সেই সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে মহাবিশ্ব হয় অসীম, নইলে এতই বড় যা অসীমেরই নামান্তর মাত্র। অতিস্ফীতি তত্ত্ব (inflation) অনুযায়ী মহাবিশ্বের দেশ-কাল (space-time) সৃষ্টির পরপরই, এক সেকেন্ড সময়ও যখন অতিবাহিত হয়নি, সেই দেশ-কাল মুহূর্তে স্ফীত হয়েছিল অভাবনীয় মাত্রায়। সেই স্ফীতি আমাদের মহাবিশ্বকে বিশাল আকার দিয়েছে আজ। আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব সমগ্র মহাবিশ্ব বলে যদি কিছু থাকে তার একটা খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশমাত্র। আর কিছু কিছু তত্ত্বে আমাদের মহাবিশ্বে অতিস্ফীতি এক সেকেন্ডের আগে বন্ধ হয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি অনেক জায়গায়। এই তত্ত্ব প্রমাণ হলে মহাবিশ্ব অসীমই হবে। আর একটি কথা, সৃষ্টির আগে স্থান বা দেশ এবং সময় বলতে কিছু ছিল না। এটা এমন নয় যে স্থানের মধ্যে কিছুর বিস্ফোরণ হয়েছিল। আসলে স্থানের আবির্ভাব মহাবিশ্ব সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই। 

এবার বর্তমানে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ নিয়ে দু-একটা কথা বলে শেষ করি। CMB ফোটন দেয়ালের লাল সরণ হল প্রায় ১১০০’র কাছাকাছি। এই দেয়ালটা থেকে আমরা যে ফোটন দেখছি তা ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে রওনা হয়েছিল। ইতিমধ্যে মহাবিশ্বের ব্যাস প্রায় ১১০০ গুণ বেড়েছে এবং বর্তমানে তার ব্যাসার্ধ প্রায় ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ হয়েছে। কাজেই যে CMB দেয়াল আজ আমরা দেখছি তা মাত্র ৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ছিল আমাদের গ্যালাক্সির অবস্থান থেকে; আমাদের গ্যালাক্সি তখন সৃষ্টিই হয়নি। সেই ৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের দেয়াল থেকে নির্গত ফোটন আজ প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে আর সেই দেয়াল এখন মহাবিশ্বের সামগ্রিক প্রসারণের ফলে আমাদের কাছ থেকে ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। সেই দেয়াল থেকে ‘এই মুহূর্তে’ নির্গত ফোটন আমরা কোনোদিনই দেখতে পাব না। আর আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেই জায়গার CMB ফোটন ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে রওনা হয়ে গেছে। সেই ফোটন এখন গিয়ে পৌঁছাচ্ছে আমাদের থেকে ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে যে গ্যালাক্সি আছে, সেইখানে!    

ভাঙা আলোর চিত্র  
নাচে লক্ষ চোখের মতো সামনে আমার  
ডাকতে থাকে আমাকে তারা মহাবিশ্বের ওপার থেকে 
চিঠির বাক্সে অশান্ত বাতাসের মতো ঘোরে চিন্তা 
অন্ধের মতো লুটোপুটি খায় তারা মহাবিশ্বকে পাড়ি দিতে দিতে ।। 
(জন লেনন, ১৯৬৭) 


লেখক : জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও কথাসাহিত্যিক

দীপেন (দেবদর্শী) ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৫৯ সালে। আদি নিবাস টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায়। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল, নটরডেম কলেজ ও ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করেছেন।মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারিল্যান্ড-এ নাসার (NASA) গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইনস্টিটিউটের গবেষক ছিলেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে (ইউসিআর) গামা রশ্মি জ্যোতি জ্যোতিঃপদার্থবিদ হিসেবে যোগ দেন। মহাশূন্য থেকে আসা গামা-রশ্মি পর্যবেক্ষণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে বায়ুমণ্ডলের উপরে বেলুনবাহিত দুরবিন ওঠানোর অভিযানে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে পদার্থবিদ্যায় গবেষণা করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড কমিউনিটি কলেজে। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার মোরেনো ভ্যালি কলেজে পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে অধ্যাপনা করছেন।