• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০১৯, ০২:৩৬ পিএম

গৃহবধূর হাত ধরে বরিশালে নারী ক্রিকেটার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প

গৃহবধূর হাত ধরে বরিশালে নারী ক্রিকেটার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প
প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নেয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরির উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার লাভলী। ছবি- জাগরণ

 

ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে বরিশালে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে নারীদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যােগে নয় বরং শারমিন আক্তার লাভলী নামের সাবেক এক নারী ক্রিকেটার এই উদ্যােগ হাতে নিয়েছেন নিয়েছেন। কোচ হিসেবে নিজেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের দক্ষ ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলছেন এই গৃহবধূ। 

নারী ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণের জন্য বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে মেয়েদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করেছেন শারমিন আক্তার। সপ্তাহের ৩দিন- বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মেয়েদের নিজ হাতে প্রতিক্ষণ দিয়ে ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন তিনি। 

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মনষাবাড়ির গলি এলাকার গৃহবধূ শারমিন আক্তার লাভলী ইডেন কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ঢাকাস্থ ধানমণ্ডি লেডিস ক্লাবের নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ছিলেন। ওই ক্লাবের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ‘লেগ স্পিনার’ হিসেবে খেলেছেন তিনি। ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশনও খেলেছেন তিনি। ক্রিকেট নিয়ে সুদূর পরিকল্পনা থাকলেও বিবাহ বন্ধন আটকে দেয় তাকে। তবে ক্রিকেট নিয়ে ভাবনা ফুরায়নি তার। বরঞ্চ স্বামী এবং পরিবারের সম্মতিতে পুনরায় ক্রিকেটাঙ্গনে ফিরেছেন লাভলী।

আলাপকালে শারমিন আক্তার লাভলি বলেন, ক্রিকেট আমার ধ্যান-জ্ঞান। তাই বিয়ের পরেও ক্রিকেট নিয়ে ভেবেছি। সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতেই বরিশালে নারী ক্রিকেট একাডেমি করার উদ্যোগ নিয়েছি। তার আগেই গত ৭ মার্চ থেকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বর্তমানে ১৪ জন মেয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এরা সবাই চতুর্থ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সপ্তাহের তিনদিন ওদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন পারিশ্রমিকও নেয়া হচ্ছে না। বরং আমার নিজ অর্থে কেনা ব্যাট, বল, প্যাড, গার্ড, স্টাম্প সহ অন্যান্য ক্রিকেট সামগ্রী প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করছে তারা। এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করছেন ট্যালেন্ট হ্যান্ড ক্রিকেট একাডেমির কোচ তানিম।

তিনি আরও জানান, বরিশালে নারী ক্রিকেট দল রয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারনে আদৌ কোন দক্ষ খেলোয়াড় তৈরি হয়নি। তাই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বরিশালের নারীদের কোন অবস্থান নেই। তাই বরিশাল নারী ক্রিকেট অঙ্গনকে দেশের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে নিজ উদ্যোগে ‘প্রমিলা ক্রিকেট একাডেমি’ খোলার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে মেয়েদের ক্রিকেটে অংশগ্রহণে উৎসাহি করতে কাজ করছি। এতে বেশ সাড়াও পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনকারীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠনের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আরো প্রসার ঘটাতে সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষক ও সুযোগ-সুবিধা দরকার। কেননা স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। স্টেডিয়ামে মেয়েদের ড্রেসআপের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থাও নেই। এখনে যারা প্রশিক্ষণে আসছে তারা তৃণমূলের থেকে উঠে আসা মেয়েরা। যে কারণে ওদের ক্রিকেট সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব না। বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে এ কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে জানান তিনি। 

বরিশাল বিভাগীয় নারী ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী বলেন, ইতোপূর্বে মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। যখন দল হয় তখন বাইরে থেকে কোচ এনে মেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলন না থাকায় খেলার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। শারমিন আক্তার লাভলী নামের মেয়েটি প্রশিক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা প্রশংসনীয়। তবে এ বিষয়ে আমাদের জানালে আমরাও তাকে সহযোগিতা করতে পারতাম।


এদিকে ক্রিকেট অঙ্গনে বরিশালের নারীদের এগিয়ে আসাকে সাধুবাদ জানিয়েছে ক্রীড়া সংস্থাসহ ক্রিকেট প্রেমীরা। তাদের অংশগ্রহণ এ অঞ্চলের নারী ক্রিকেট অঙ্গনকে আরো শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন তারা। সেজন্য নারী প্রশিক্ষক শারমিন আক্তার লাভলীকে প্রশিক্ষণ কাজে সার্বিক সহযোগিতার কথাও জানিয়েছেন ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে রয়েছে নারীদের বিভাগীয় ক্রিকেট দল- যা নিয়ন্ত্রন করে বিভাগীয় নারী ক্রীড়া সংস্থা। তবে দল থাকলেও নেই নির্দিষ্ট নারী ক্রিকেটার। প্রতিযোগিতার সুযোগ আসলে বিভাগের বাইরে থেকে খেলোয়াড় ভাড়া করে আনা হচ্ছে দল গঠনের জন্য। তবে সর্বশেষ কবে বরিশাল থেকে নারী ক্রিকেটাররা টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তা জানা নেই স্বয়ং ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদেরও!

বরিশাল নারী ক্রিকেটাঙ্গনের এমন দুর্দশার জন্য নারী ক্রীড়া সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন না থাকাকেই দায়ি করছেন খেলোয়াড়রা। নারী ক্রিকেট অঙ্গনকে উজ্জীবিত করতে ক্রীড়া সংস্থা কিংবা সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ তাদের। 

এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর পরিচালক ও বরিশাল বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব আলমগীর খান আলো বলেন, আমাদের বিভাগীয় নারী ক্রিকেট দল থাকলেও খেলোয়াড়ের বড়ই অভাব। যখন কোনো দল হয় তখন খেলোয়াড় খুঁজে পাই না। জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে খেলোয়াড় খুঁজতে হয়। তাতেও পুর্ণাঙ্গ দল হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খেলোয়াড় ভাড়া করে আনতে হয়। একজন মেয়ে ছিলো যাকে টিম লিডার করে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হতো। সেই মেয়েও এখন একটি স্কুলের শারীরিক শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করছেন।

তিনি বলেন, দেশের সবখানেই এখন ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। জাতীয় পর্যায়েও আমাদের মেয়েরা বেশ ভূমিকা রাখছে। শুধু বরিশালের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে ফুটবল ও ক্রিকেটে মেয়েদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। কারন প্রশিক্ষণের অভাব। ক্রিকেট বা ফুটবল দুটোতেই নিয়মিত অনুশীলনের প্রয়োজন। যার ব্যবস্থা বরিশালে নেই। তাই যে মেয়েটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে সেটা আমাদের বরিশালের মেয়েদের জন্য কল্যাণকর। বরিশাল নারী ক্রিকেট অঙ্গনকে উজ্জীবিত এবং শক্তিশালী করতে তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন বিসিসি’র এই পরিচালক।

এসএইচএস