• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৩:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৩:৪৬ পিএম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বরাদ্দকৃত ফুটবল কন্যা আঁখির জমি বেদখল!

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বরাদ্দকৃত ফুটবল কন্যা আঁখির জমি বেদখল!
২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে গোল্ডেন বুট পান আঁখি খাতুন।

২০১৪ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলে শাহজাদপুর ইব্রাহিম বালিকা বিদ্যালয়ের হয়ে খেলে উঠে আসে আঁখি খাতুন। ২০১৫ সালে তাজিকিস্থানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম খেলেন আঁখি। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ওই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে আঁখি খাতুন গোল্ডেন বুট পান।

আঁখি খাতুন বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড়। বিকেএসপির ১০ম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি বয়স কম হওয়ায় জাতীয় দলের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দলেও খেলছেন। বর্তমানে এফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে থাইল্যান্ড সফরে আছে।

ফুটবল কন্যা আঁখি খাতুনকে বাড়ি করার জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত জায়গা দখল হয়েছে। গত ৪ মে আঁখির জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভায় সরকারি কলেজ সংলগ্ন মণিরামপুরে উপজেলা প্রশাসন গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখিকে পাঁচ শতক জায়গা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সেই জায়গাটি দখলে নিয়েছেন শাহজাদপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিন আকন্দ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন তিনি এই খাস জায়গাটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। উপজেলা প্রশাসন তার কাছ থেকে দখলমুক্ত করে আঁখিকে বাড়ি করার জন্য বরাদ্দ দেন। পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গাটির বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। পাঁচ শতক জায়গা বরাদ্দের পর সেখানে আঁখির ছবি সংবলিত সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় জায়গাটি ফের দখলে নিয়ে আঁখির ছবি সংবলিত ব্যানার টেনে খুলে ফেলেন রবিন আকন্দ। শুধু তাই নয়, পুরো জায়গা ঘেরাও করে দেয়াল তুলে দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খান বলেন, এসএ আরএস সব কাগজে জায়গাটি সরকারি খাসজমি। বণিক সমিতির সেক্রেটারি রবিন দীর্ঘদিন এটি দখলে রেখেছিলেন। আমরা (উপজেলা প্রশাসন) সেটা দখলমুক্ত করে ফুটবলার আঁখিকে বরাদ্দ দেই। কিন্তু বণিক সমিতির সেক্রেটারি রবিন মামলা করে দিলেন। কোর্ট আমাদের বিরুদ্ধে ইনজাঙ্কশন দিলেন। এরপর আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করেছি। বর্তমানে এটি সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে। আগামী ৬ অক্টোবর এ ব্যাপারে শুনানি আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আঁখির ছবিসহ টাঙানো সাইনবোর্ড খুলে ফেলে বেড়া দিয়ে দিয়েছেন বণিক সমিতির সেক্রেটারি। যেহেতু জায়গাটি নিয়ে ঝামেলা চলছে, মামলাজনিত কারণে দীর্ঘসূত্রতা হতে পারে। তাই আঁখিকে নতুন কোনো জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬ অক্টোবর যেহেতু শুনানি আছে, দেখা যাক কী হয়।

আঁখির গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পারকোলা গ্রামে একটি ছোট্ট টিনের ঘরে তাদের বসবাস। বাবা আক্তার হোসেন একজন সামান্য তাঁত শ্রমিক। আঁখির বড় ভাই নাজমুল হোসেন স্নাতকে পড়ছে। মাত্র এক শতাংশ জায়গার ওপরে তাদের ছোট্ট কুটির। এ সময় ঈদের ছুটিতে যাওয়া আঁখি খাতুনেরও দেখা মেলে।

মা-বাবার সঙ্গে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের মুহূর্তের ফটোর সামনে আঁখি খাতুন। 

আঁখির বাবা আক্তার হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে যখন আঁখি সাফ গেমসে গোল্ডেন বুট পায়; সিরাজগঞ্জে তখন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন পাঁচ শতক জায়গা দেয়ার ঘোষণা দেন। ইউএনও, এসিল্যান্ড স্যার বললেন তুমি জায়গা পাবা। দুই বছর পর আঁখির জন্য একটা জায়গা বরাদ্দ দেয়া হলো, যে জায়গা একজনের দখলে ছিল। তা দখলমুক্ত করে আঁখির নামে ব্যানার টাঙিয়ে দিলো উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় সেই ব্যক্তি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে জায়গাটি দখলে নিয়ে টিন দিয়ে চারদিকে বেড়া দিয়ে দিলো। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখবেন বলে আশা করি।

আলাপচারিতায় উঠে আসে আঁখির ফুটবলার হয়ে ওঠার পেছনের গল্প। তিনি বলেন, ২০১২ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল কাপ থেকে আঁখি খেলা শুরু করে। তখন আঁখি এতো ছোট যে, সে আর বল দেখতে সমান মনে হতো। আস্তে আস্তে সে শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ এবং পরবর্তীতে পুরো উত্তরাঞ্চলে ‘গোল মেশিন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলো। এখন সে জাতীয় দলেই খেলছে। খেলা ছাড়া আঁখি ঘরে বসে থাকতে পারতো না। ছেলেদের সাথেও খেলত। অনেকেই বকাঝকা করতো। আমাকেও গালাগালি করতো। 

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আক্তার হোসেন বলেন, উনি যদি বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট না ছাড়তেন তাহলে তো আঁখির জন্ম হতো না। ভালো খেলায় স্বীকৃতি হিসেবে আখিঁকে প্রধানমন্ত্রী একবার ১০ লাখ টাকা এবং আরেকবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ১০ লাখ টাকা আঁখির নামে পোস্ট অফিসে রাখা আছে। মাস শেষে সেখান থেকে যা লাভ আসে, তা দিয়েই সংসার চলে। 

আঁখির মা বলেন, আঁখির ফুটবল খেলা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছে। এখন সবাই প্রশংসা করে। রাস্তায় বের হলেই বলে আঁখির আম্মা আসতেছে। সবাই সম্মান করেন। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। 

আরআইএস 
 

আরও পড়ুন