• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০১৯, ০৬:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৯, ২০১৯, ০৮:০৪ পিএম

সব ধরনের ক্রিকেটে ১ বছর নিষিদ্ধ সাকিব

সব ধরনের ক্রিকেটে ১ বছর নিষিদ্ধ সাকিব
সাকিবকে নিষিদ্ধ করার আইসিসির টুইট-সংগৃহীত

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আইসিসির নিজস্ব সাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা।আইসিসির কোড অব কনডাক্টের তিনটি ধারা ভাঙায় বাংলাদেশের এই ক্রিকেট তারকাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মেনে নিয়েছেন সাকিব। ভুল স্বীকার করায় সাজার মেয়াদ দুই বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবেন সাকিব।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এক টুইট বার্তায় বিষয়টি খোলাসা করে আইসিসি। এর আগে দিনভর সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গনে।

দুই বছর আগে এক জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তিনি তা প্রত্যাখানও করেছিলেন। তবে সে তথ্য তিনি আইসিসি কিংবা বিসিবিকে জানাননি। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী কোনও ক্রিকেটার যদি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান, তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গেই জানাতে হবে তাদের। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শাস্তি হবে ওই ক্রিকেটারের।

আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট- আকসু সাকিবের বিরুদ্ধে ৩ বার জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গোপন রাখার অভিযোগ তুলেছে। তদন্ত দলের কাছে দোষ স্বীকার করায় সাকিবের ১ বছরের সাজা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর থেকে সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে আইসিসি। এ সময়ে আকসুর সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করবেন সাকিব। বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটাররা যেন এমন ভুল না করে সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করবেন সাকিব।

আইসিসির কাছে সাকিবের ভুল স্বীকার

নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর আইসিসিকে সাকিব বলেছেন, ‘আমি যে খেলাটিকে পছন্দ করি তা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি স্পষ্টতই অত্যন্ত দুঃখিত। তবে পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতিবেদন না দেয়ার জন্য আমি আমার দোষ পুরোপুরি মেনে নিয়েছি। আইসিসি, আকসু দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরশীল এবং আমি এই উদাহরণে আমার দায়িত্ব পালন করিনি।’

‘বিশ্বের বেশিরভাগ খেলোয়াড় এবং অনুরাগীর মতো আমিও চাই ক্রিকেট একটি দুর্নীতিমুক্ত খেলা হোক এবং আমি আইসিসি, আকসু দলের সাথে কাজ করার প্রত্যাশায় রয়েছি, যাতে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা সমর্থন করে এবং তরুণ খেলোয়াড়রা যাতে একই ভুল না করে, যেটা আমি করেছিলাম।’ যোগ করেন সাকিব।

টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না সাকিব

এক বছর পর নিষেধাজ্ঞা যদি ওঠেও, তবুও আগামী টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না সাকিবের। এক বছরের পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর। আর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু একই বছরের ১৮ অক্টোবর। 

আইসিসি বলছে, আগামী এক বছর সাকিব খেলতে পারবেন না, কিন্তু তিনি যদি সাজার সব শর্ত মেনে চলেন তাহলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে মাঠে ফিরে আসতে পারবেন। 

আইসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আইনের ১ অনুচ্ছেদের ২.৪.৪ অনুযায়ী দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার জন্য তিনি যে পন্থা বা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, তার পুরো বিবরণ আকসুর (আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট) কাছে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঘটনা ২০১৮-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে হওয়া ট্রাই-সিরিজ ও একই বছরের আইপিএল সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচে সাকিব ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান। আইপিএলের ম্যাচটি ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘‘আইসিসির বিধান অনুসারে, সাকিব আল হাসান এই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন এবং দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালের শুনানির পরিবর্তে আইসিসির কাছে এই অনুমোদনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। যেখানে, এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। 
২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের পর আইসিসির কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে এবং সেটা সন্তোষজনক হলে এক বছর পরই উঠে যাবে নিষেধাজ্ঞা। তিনি তখন ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুনরায় শুরু করতে পারবেন।

আইসিসি জিএমের বিবৃতি : সাকিব তদন্তে পুরোপরি সহযোগিতা করেছেন 

আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স মার্শার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসান একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তিনি অনেকগুলো শিক্ষামূলক অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন এবং আইসিসির কোডের আওতায় তিনি বাধ্য-বাধকতাগুলো জানেন। এই পদ্ধতির প্রতিটি বিষয় তার জানা উচিত ছিল।’

‘সাকিব তার ত্রুটিগুলো মেনে নিয়েছেন এবং তদন্তে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন। তিনি ভবিষ্যতের শিক্ষায় স্বচ্ছতা ইউনিটগুলোকে সহায়তা করার, তরুণ খেলোয়াড়দের তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি এই প্রস্তাব গ্রহণ করে খুশি।’

সাকিব ভুল করেছে, তবে বিসিবি পাশে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) গণভবনে আজারবাইজান সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনত সাকিব ভুল করেছে তবে বিসিবি তার পাশে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিসিবি সব সময় সাকিবের সঙ্গে আছে এবং তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে। ওর যেটা ভুল হয়েছে, যখন যোগাযোগ করা হয়েছে, তখন বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। সে কথাটি আইসিসিকে জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে জানানো উচিত ছিল। সে এটাই ভুল করেছে। আইসিসি যদি অবস্থান নেয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের তো খুব বেশি কিছু করণীয় থাকে না। আমাদের দেশের ক্রিকেটার এবং খেলোয়াড় হিসেবে তার একটি অবস্থান আছে। সে ভুল করেছে, এটা ঠিক। সে সেটা বুঝতেও পেরেছে।’

এমএইচবি/এসএমএম