• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০১৯, ১১:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৪, ২০১৯, ১২:১৫ এএম

আহত বাঘের থাবায় বিধ্বস্ত ভারত

হেসে খেলে দিল্লি জয়

হেসে খেলে দিল্লি জয়
দিল্লি জয় নিশ্চিত! হুঙ্কার ছেড়ে তাই জানান দিচ্ছেন টাইগার মুশফিক

আহত বাঘ সত্যি হিংস্র, এ প্রবাদের এমন বস্তুনিষ্ঠ উদাহরন হয়তো এর আগে কেউ এভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়নি। ঠিক যেভাবে আজ তা সারা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিল টিম টাইগার। ক্রিকেটাঙ্গণের অসন্তোষ, দলের সেরা তারকা সাকিবের নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা আর তারকা ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি। উপরন্তু সেই কষ্ট যেন আরও প্রকট করে তোলে দিল্লির বিষাক্ত বাতাস। 

সব মিলিয়ে চরম প্রতিকূলতার মাঝেই ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ভারত সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। আর সেখানেই যেন নিজেদের সব রাগ ভারতীয় ক্রিকেট দলের উপরেই ঝারলো ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ টাইগার বাহিনী! ফলাফল, রোহিত বাহিনীকে স্রেফ খড়কুটোর মত উড়িয়ে দিয়ে টাইগারদের ৭ উইকেটের বিশাল জয়।

সৌম্য সরকার, নবাগত নাইম আর অভিজ্ঞ মুশফিক-মাহমুদুল্লারা রোববার (৩ নভেম্বর) ভারতীয় সমর্থক ও আয়োজকদের শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে ছাড়লেন, শ্বাস কষ্টের যন্ত্রণা কাকে বলে।

টস জয়ে শুরু হয় জয়রথ

টস জয়ের মধ্যদিয়ে শুরু করা ম্যাচে প্রথম থেকেই দাপুটে ক্রিকেট খেলে এ জয় পায় বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সুনিয়ন্ত্রিত বোলিং আর দারুন টিম গেমের প্রভাব বিস্তার করে টাইগাররা। বল হাতে দলের সিনিয়রদের সঙ্গে এদিন যেন সমান তালে তেঁতে ওঠেন দুই তরুণতুর্কী বিপ্লব আর আফিফ।

বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বড় পুঁজি গড়তে পারেনি শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের দল ভারত। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৮ রানেই আটকে যায় রোহিত শর্মার দল। বোলারদের বাধা এই গাঁট ছিড়ে টিম ইন্ডিয়াকে বের করে আনার প্রয়াশে ব্যর্থ হন রোহিত-ধাওয়ানরা।  

প্রথম ওভারে তিনি বল তুলে দেন শফিউল ইসলামের হাতে। শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে। ওভারের প্রথম পাঁচ ডেলিভারিতে ১০ রান দিয়ে বসেন শফিউল। রোহিত শর্মা হাঁকান দুই বাউন্ডারি।

তবে ভয়ংকর হয়ে ওঠতে থাকা রোহিতকে ঠিকই আটকে দেন শফিউল। পঞ্চম বলটিতে বাউন্ডারি হজম করেছিলেন। পরের বলটাই দুর্দান্ত এক ডেলিভারি দেন টাইগার পেসার, রোহিত বুঝতেই পারেননি। প্যাডে বল আঘাত হানে।

আবেদনে আঙুল তুলে দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। রোহিত অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। স্ট্যাম্প পেয়ে যায় বল। ফলে হতাশা নিয়েই সাজঘরে ফিরতে হয় ভারতীয় অধিনায়ককে (৫ বলে ৯)। ১০ রানে প্রথম উইকেট হারায় ভারত।

দ্বিতীয় উইকেটে সেই বিপদ কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন শিখর ধাওয়ান আর লোকেশ রাহুল। তবে তাদের জুটিটাকে ২৬ রানের বেশি এগুতে দেননি বাংলাদেশ দলের তরুণ লেগস্পিনার বিপ্লব।

বিপ্লব ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছেন আজ। সপ্তম ওভারে বল করতে আসেন এই লেগি, আর প্রথম ওভারে বল হাতে নিয়েই পান উইকেটের দেখা। তার বাঁক খাওয়া ডেলিভারি বুঝতে না পেরে শর্ট কাভারে মাহমুদউল্লাহর সহজ ক্যাচ হয়েছেন লোকেশ রাহুল (১৭ বলে ১৫)।

ভারত ৩৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর উইকেটে এসে চালিয়ে খেলছিলেন শ্রেয়াস আয়ার, দ্রুত রানও তুলে দিচ্ছিলেন। অবশেষে এই ব্যাটসম্যানকেও সাজঘরের পথ দেখান বিপ্লব। ১৩ বলে ২২ রান করে আয়ার বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন নাইম শেখের।

বাংলাদেশি বোলারদের এমন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে খোলসে ঢুকে পড়েন ধাওয়ান। টি-টোয়েন্টিতে টেস্টের মতো টুকটুক করে খেলতে থাকেন বাঁহাতি এই ওপেনার। একটা সময় বলের তুলনায় রানে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। পরের দিকে হাত খুলে কিছুটা ঘাটতি পোষানোর চেষ্টা করেেছিলেন ভারতীয় এই ওপেনার। তবে চাপের মুখেই ৪২ বলে ৪১ রান করে রানআউটের কবলে পড়েন ধাওয়ান। মাহমুদউল্লাহর ওভারে সিঙ্গেলের জন্য দৌড়েছিলেন, কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা রিশাভ পান্ত সাড়া দেননি। মুশফিক বল পেয়ে স্ট্যাম্পটা ভেঙে দিতে ভুল করেননি।

এরপর উইকেটে আসেন শিভাম দুবে। অভিষেক ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ দেখেশুনে শুরু করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। প্রথম তিন বল মোকাবেলায় করেন মাত্র ১ রান। চতুর্থ বলটিতেই পড়েন বিপদে। এমনই বিপদ, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না দুবের।

ইনিংসের ১৬তম ওভার তখন। নিজের তৃতীয় ওভারে বল করতে আসেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। তার ওভারের ষষ্ঠ ডেলিভারিটি বুঝতে না পেরে আলতোভাবে সোজা খেলে দেন দুবে, বল চলে যাচ্ছিল আফিফের মাথার ওপর দিয়ে। কে জানতো, এই বলটিও ধরে ফেলবেন তরুণ আফিফ!

আফিফের এই ক্যাচে ১০২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসা ভারত শেষ পর্যন্ত ১৪৮ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় টাইগারদের উদ্দেশে। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব আর শফিউল ইসলাম।

টাইগারদের দাঁতভাঙা জবাব

দ্বিতীয় ইনিংসে জবাব দিতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৭ রানে লুকেশ রাহুলের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন লিটন দাস। এরপর শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন অভিষিক্ত নাইম শেখ ও সৌম্য সরকার। ৪৬ রানের জুটি গড়েন এই দু'জন। ২ চার ও ১ ছয়ে ২৮ বলে ২৬ রান করে চাহালের বলে নাইম সাজঘরে ফেরত গেলেও আরেক প্রান্তে টিকে থাকেন সৌম্য।

মুশফিককে নিয়ে দলকে জয়ের পথে রাখেন তিনি। দলীয় ১১৪ রানে ৩৫ বল থেকে ৩৯ রান করে সৌম্য আউট হলেও অধিনায়ক রিয়াদকে নিয়ে দলকে জয়ের নোঙরে ভেড়ান মুশফিক। ৮ চার ও ১ ছয়ে ৪৩ বলে ৬০ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি।

ইনিংস শেষের তিন বল আগে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন রিয়াদ। বলটা যখন সীমানার ওপাড়ে গিয়ে মাটিতে আঁচড়ে পড়ে, সেসময় অনেক কিছুর প্রায়শ্চিত্ত হয়। রিয়াদের অনেক চাপা ক্ষোভ মিশে থাকে তাতে, বিন্দু বিন্দু করে গড়ে ওঠা মনের আক্রোশের সেই ঢেউ ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের বাউন্ডারি ছাড়িয়ে প্রাপ্তির লহর হয়ে আছড়ে পড়ে  বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদ-সৈকতে।

আরও পড়ুন