• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২২, ০৪:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০২২, ০৪:২২ পিএম

বাদ পড়লেন ‘ট্রিপল জাম্পের রানি’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রোয়াস! 

বাদ পড়লেন ‘ট্রিপল জাম্পের রানি’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রোয়াস! 

তাঁকে বলা হয় ‘লা রেইনা দেল ট্রিপল সাল্টো’—বাংলায় ‘ট্রিপল জাম্পের রানি’। ট্রিপল জাম্প ও লং জাম্পে ভেনেজুয়েলার জাতীয় রেকর্ড ২০১৪ সাল থেকে ভাঙাগড়ার মাঝে আছেন। 

মেয়েদের ট্রিপল জাম্পে বিশ্ব রেকর্ডধারী এই অ্যাথলেট বর্তমানের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন এবং দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ভেনেজুয়েলাকে অলিম্পিকে প্রথম সোনার পদক এনে দেয়া নারী অ্যাথলেটও। 

সেই ইউলিমার রোয়াসের এবার স্বপ্নভঙ্গ হলো অ্যাথলেটিকসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।

যুক্তরাস্ট্রের ইউজেনিতে ১৫ জুলাই থেকে শুরু হবে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতার লং জাম্প ইভেন্ট থেকে বাদ পড়েছেন ইউলিমার রোয়াস। বলা ভালো, বাছাইপর্বে টিকে যাওয়ার পরও টুর্নামেন্টটির কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাদ দিয়েছে। কারণ? বাছাইপর্বে তিনি নিয়মবহির্ভূত জুতা পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

বাছাইপর্বে গত জুনে স্পেনে ৬.৯৩ মিটার দূরত্ব লাফ দিয়ে অতিক্রম করেন রোয়াস। চূড়ান্ত পর্বে জায়গা পেতে এই লাফে বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণ করেন তিনি। তাতে অ্যাথলেটিকস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের লং জাম্প ইভেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিট পেয়ে যান ২৬ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট। 

কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের গর্ভনিং বডি কাল জানিয়েছে, বাছাইপর্বের ‘লং জাম্প ইভেন্টে ট্রিপল জাম্পের জুতা পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ফলটা আইনসিদ্ধ হয়নি।’

ঝামেলাটা হয়েছে জুতার সুকতলায়। লং জাম্পের জন্য অ্যাথলেটরা জুতার সুকতলার পুরুত্ব ২০ মিলিমিটারের বেশি বাড়াতে পারবেন না। ট্রিপল জাম্পের ক্ষেত্রে নিয়মটি ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ইউলিমার রোয়াস যেহেতু ট্রিপল জাম্পের জুতা পরে লং জাম্পের বাছাইপর্বে অংশ নিয়েছিলেন, তাই ৫ মিলিমিটার সীমা লঙ্ঘন করায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের লং জাম্প ইভেন্ট থেকে বাদ পড়লেন তিনি।

অ্যাথলেটদের জুতা নিয়ে নিয়মকানুন এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। ফিল্ড ইভেন্টে প্রায় সব অ্যাথলেটকেই জুতার সুকতলার পুরুত্ব ২০ মিলিমিটারের মধ্যে রাখতে হয়। ব্যতিক্রম ট্রিপল জাম্প। বাছাইপর্বে রোয়াসের সম্ভবত এ নিয়ম মাথায় ছিল না। তবে এটা শুধুই অনুমান। 

রোয়াস কিংবা তাঁর এজেন্টের কাছ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও এসব ইভেন্টে অ্যাথলেটদের জন্য একজন জুতা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রাখা হয়। অ্যাথলেটদের জুতার ছবি কিংবা ওজন পরিমাপ করে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে থাকেন তিনি।

ইউলিমার রোয়াসের বাদ পড়া নিয়ে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়, ‘আমরা জানি, রোয়াস এবং তাঁর সমর্থকদের জন্য ব্যাপারটি দুঃখজনক। তবে আমরা ট্রিপল জাম্পে তাঁকে দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।’

ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ৮০০ মিটারের নিচে যত ইভেন্ট আছে (হার্ডলসসহ), সব কটিতেই জুতার সুকতলার পুরুত্ব সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার হতে পারে। কিন্তু ৮০০ মিটারের চেয়ে বড় ইভেন্টে জুতার সুকতলার পুরুত্ব সর্বোচ্চ ২৫ মিলিমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে ক্রস–কান্ট্রি দৌড়ে যেসব অ্যাথলেট জুতায় স্পাইক পরেন, তাঁদের জুতার সুকতলার পুরুত্ব ২৫ মিলিমিটারের বেশি হতে পারবে না। যাঁরা স্পাইক ব্যবহার করেন না, তাঁদের জুতার সুকতলার পুরুত্ব হবে সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটার। ম্যারাথনের মতো রোড রেস কিংবা ওয়াকিং রেসেও একই নিয়ম। শুধু মাউন্টেন রেসে জুতার সুকতলার পুরুত্বের কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।

তবে ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে এই নিয়ম পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস সংস্থা। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে সব ইভেন্টেই জুতার সুকতলার পুরুত্ব হবে সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার। অ্যাথলেটরা জুতায় স্পাইক ব্যবহার করুক আর না করুক, সীমাটা একই থাকবে। রোড রেসে তা ৪০ মিলিমিটারই থাকবে এবং মাউন্টেন রেসে আগের মতোই জুতার সুকতলার পুরুত্বের কোনো সীমা থাকবে না।

অ্যাথলেটদের জুতার সুকতলার পুরুত্ব কতটুকু হবে, তা কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়ার পেছনে কারণও আছে। অ্যাথলেটরা জুতা থেকে অতিরিক্ত কোনো সুবিধা যেন না পান, তা নিশ্চিত করতেই এই বিধিনিষেধ। জুতার সুকতলার পুরুত্ব বেশি হলে লাফ দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন অ্যাথলেটরা। 

যদিও বিভিন্ন ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দৌড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক সব ‘সুপারস্পাইক’ বের করেছে। কিংবদন্তি স্প্রিন্টার উসাইন বোল্ট বরাবরই এসব সুপারস্পাইক জুতার বিপক্ষে। ২০১৯ সালে একটি পরত ও ফোমের বেডিংয়ের দৌড়ানোর জুতা বের করে হইচই ফেলে দিয়েছিল ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকি। 

গত বছর রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বোল্ট এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এসব শুনে প্রথমে আমার বিশ্বাসই হয়নি যে আমরা ওই পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আমরা স্পাইকগুলো এমনভাবে বানাচ্ছি, যেন তা অ্যাথলেটদের বাড়তি সুবিধা দেয়।’

 

এসকেএইচ//