
লিটন দাস আর আফিফ হোসেন দারুণ শুরু এনে দিলেও দশম ওভারে দুই বলের ব্যবধানে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন দুজনই। ততক্ষণে জয়ের সঙ্গে ব্যবধানটা ৫০-এর কাছাকাছি নেমে আসায় পরের ব্যাটসম্যানদের কাজ খুব একটা কঠিন ছিল না।
এরপর শান্ত ফিরেছেন দ্রুতই, হৃদয়ও ফিরেছেন দারুণ ছক্কায় মন রাঙিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশকে তেমন কঠিন পরীক্ষায় পড়তেই হয়নি। একপ্রান্তে সাকিবের ১১ বলে অপরাজিত ১৮ রানের সঙ্গে হৃদয়ের ছোট্ট ক্যামিও মিলিয়ে সহজেই জিতে গেল বাংলাদেশ। পাঁচ বল আগেই আফগানিস্তানের দেয়া ১১৯ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে ৬ উইকেট হাতে রেখে। দুই ম্যাচের সিরিজও জিতল ২-০ ব্যবধানে।
আফগানিস্তান ১১৬ রান করলেও বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৯। যাহাই বাহান্ন তাহাই তেপ্পান্ন আর কী! সে লক্ষ্যে ওপেনিং জুটিই বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দিয়ে গেছে।
ফারুকির প্রথম ওভারে পরপর দুই বলে দারুণ দুই চারে লিটন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আজ টাইমিংটা দারুণ হচ্ছে তার। অবশ্য পরের ওভারে ভাগ্যকে বেশ ভালোভাবেই পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ। নিরেট সংখ্যা মাঝে মাঝে কতটা ভুল বোঝাতে পারে, তার প্রমাণ হয়ে থাকবে ওভারটা। আফগান জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত ওয়াফাদার মোমান্দের প্রথম বলেই কাট করে চার মেরেছেন লিটন, কিন্তু পরের বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে প্রায় ধরা পড়েই গিয়েছিলেন! কিন্তু ওয়াফাদের ভাগ্য খারাপ যে লিটনের ভাগ্যটা ভালো গেল। ব্যাটের কানায় লেগে বল প্রথম স্লিপের একটু ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে – চার! তৃতীয় বলে আবার দারুণ কাট শটে চার লিটনের। এর দুই (বৈধ) বল পর আফিফ পুল শটে টাইমিংয়ের ভুলে ক্যাচ উঠেছিল, কিন্তু ত্রিশ গজের একটু ওপর দিয়ে গিয়ে হলো দুই রান।
ওভারে এল ১৯ রান – ম্যাচের সবচেয়ে খরুচে ওভার! অথচ একটু এদিক-ওদিক হলে ওভারটা ওয়াফাদার মোমান্দের টি-টোয়েন্টি অভিষেক রাঙানো ওভার হয়ে যায়!
তৃতীয় ওভারে মুজিবকে নিজের ইনিংসের ষষ্ঠ চার মেরে স্বাগত জানালেন লিটন। দর্শক ততক্ষণে কোরাস ধরেছেন, ‘লিটন’ ‘লিটন!’ কিন্তু মজার ব্যাপার কী, মুজিবকে ওই চার মেরে ১১ বলে ২৬ রান করে ফেলা লিটন শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৩৫ রান করে আউট হওয়ার সময় তার নামের পাশে চার ওই ছয়টিই!
বাংলাদেশের অবশ্য তাতে খুব বেশি ভুগতে হয়নি। মাঝের সময়টুকুতে লিটনের কাছ থেকে ব্যাটন কিছুটা বুঝে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথম ওপেনিংয়ে নামা আফিফ। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে মুজিবকে মিড অফের ওপর তুলে দিয়ে দেখার মতো ছক্কা মারলেন আফিফ - ইনিংসে প্রথমবার বল সীমানাছাড়া করলেন তিনি। ওই ওভারেই দ্বিতীয় বলে বাই চার নিয়ে ওভারে আসে ১৩ রান। বৃষ্টির কারণে কর্তিত ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংসে পাওয়ার প্লে তো ৫ ওভারেরই, আফিফের ছক্কা নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের ইনিংসে ৫০ রানও হয়ে গেল! দারুণ শুরু!
চতুর্থ ওভারে মুজিব বোলিংয়ে আসার পর থেকে লিটনের ব্যাটে রান – আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাউন্ডারি – শুকিয়ে যায়, ষষ্ঠ ওভারে রশিদ খান আসার পর তার অস্বস্তি বেড়েছে আরও। তবে অন্য প্রান্তে আফিফ সপ্তম ওভারের শেষ বলে ওয়াফাদারকে দুর্দান্ত আরেক শটে ছক্কা মেরেছে। বল ব্যাটে লাগার সময় থেকেই ছক্কাই ছিল যে শটের নিয়তি!
কিন্তু একদিকে লিটনের অস্বস্তি, অন্যদিকে আফিফের অনিয়মিত বাউন্ডারির ফাঁকে বাংলাদেশের রানের গতি কমে গেল। সেটির প্রভাবেই কি উইকেট পড়ল? হয়তো। নবম ওভারে ওমরজাইয়ের প্রথম বলেই বোলারের হাতে প্রায় ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন লিটন, পরের বলে তার বিরুদ্ধে আফগানিস্তান এলবিডাব্লিউয়ের রিভিউ নিলেও বেঁচে যান। তবে বেশিক্ষণ আর টেকেননি।
তবে আউটটাতে লিটনের শটের ব্যর্থতার চেয়েও বেশি অবদান রশিদের দারুণ ক্যাচের! মুজিবের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বলে ড্রাইভ করেছিলেন লিটন, কিন্তু কাভারে দাঁড়ানো রশিদ ঝাঁপিয়ে এক হাতে ক্যাচ লুফে নেন।
বাংলাদেশের জন্য ধাক্কাটা এক বল পরিণত জোড়া ধাক্কায়। শান্ত এসে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে দিলেন আফিফকে, ওভারের তৃতীয় বলে মুজিবের অফ স্পিনের বিপরীতে স্লগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন আফিফ। ৯ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৭ থেকে তিন বল পরই বাংলাদেশ ৬৮/২! তবে হাতে ৪৫ বল আর ৮ উইকেট রেখে জয় তখন আর ৫১ রান দূরে বলে বাংলাদেশ খুব বেশি শঙ্কায়ও ছিল না।
প্রথম ৫ ওভারে ৫০ তুলে নেয়া বাংলাদেশ যে পরের পাঁচ ওভারে আর ২০ রান পেয়েছে, শঙ্কা অত বাড়ায়নি সেটিও। খুব বেশি ভাবায়নি ১১তম ওভারের শেষ বলে আজমতউল্লাহর বলে শান্তর (৬ বলে ৪) মিডল স্টাম্প উপড়ে যাওয়াও। ১১ ওভার শেষে যে বাংলাদেশের দরকার ৩৬ বলে ৪৩। হ্যাঁ, বড় জয়ের, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ‘স্টেইটমেন্ট উইন’-এর আশা ততক্ষণে শেষ।
সাকিব আর হৃদয়কে তখন রানরেট ঠিক রাখার পাশাপাশি জুটিও গড়তে হতো, তবে রান আর বেশি বাকি না থাক্য কাজটা একেবারে কঠিনও ছিল না। ১২তম ওভারটা দেখেশুনে কাটিয়ে দিলেন দুজন, এল ৩ রান। ৫ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ৪০। একটা বড় ওভারের আবার দরকার দেখা দিয়েছে তখন।
সেটি এল ১৩তম ওভারেই। মুজিবের শেষ ওভারের প্রথম বলে হৃদয় অসাধারণ কাভার ড্রাইভে চার মারলেন, এক বল পর সাকিবের ব্যাটের কানায় লেগে চার – ভাগ্যপ্রসুত, তবে চার তো! ওভারে এল ১২ রান। রান আর বল আবার কাছাকাছি।
ব্যবধান আরও বাড়াতেই কি না, রশিদ খান এলেন। কিন্তু তার ওভারের দ্বিতীয় বলে জায়গা করে নিয়ে লং অনে বিশাল ছক্কা মারলেন সাকিব! ওভারে এল ৮ রান। তার পরের ওভারে আজমতউল্লাহর প্রথম বলে হৃদয় ২ রান নিতে বাংলাদেশের ১০০ হলো। তার পরের বলে হৃদয়ের ব্যাটে অসাধারণ ফ্লিকে বিশাল ছক্কা। গ্যালারি উন্মাতাল! কিন্তু পরের বলেই গ্যালারি হতাশ ও ক্ষুব্ধ! হতাশ, কারণ ওমরজাইকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হৃদয় (১৭ বলে ১৯)। ক্ষুব্ধ, কারণ হৃদয়কে আঙুল দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন ওমরজাই। নাটকের মধ্যেই ওভারে এল ১০ রান। দুই ওভারে বাংলাদেশের দরকার তখন ১০ রান।
সাকিব তার নতুন সঙ্গী শামিমকে নিয়ে ফারুকির করা ১৬তম ওভারে নিলেন ৬ রান। শেষ ওভারে দরকার দাঁড়ায় ৪ রানের। আগের ম্যাচে শেষ ওভারে ৬ রানের সমীকরণ বাংলাদেশ মেলানোর আগেই এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা নিয়েছিলেন জানাত। হ্যাটট্রিক করে বসেছিলেন! আজ আর তেমন কোনো নাটক হলো না। ওয়াফাদারের প্রথম বলে স্লগ করে সমীকরণ মিলিয়ে দিলেন শামিম
জাগরণ/খেলা/ক্রিকেট/এসএসকে