• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২২, ০৮:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৮, ২০২২, ০৮:১৮ পিএম

যৌন নির্যাতনকারী বাঁধন একজন ‘ধর্ষক’ 

যৌন নির্যাতনকারী বাঁধন একজন ‘ধর্ষক’ 

সম্প্রতি গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন একাধিক কিশোর ও যুবককে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে, ‘ধর্ষক’ ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনে ধর্ষণের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সংজ্ঞা এবং দণ্ডবিধি ৩৭৫ ধারার লিঙ্গনিরপেক্ষ সংস্কারও চেয়েছে পুরুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিভিন্ন দাবি নিয়ে এ মানববন্ধন করেন সংগঠনটির সদস্যরা।
 
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাহিন মুর্তজা অনিক।

আরো উপস্থিত ছিলেন এইড ফর মেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খালিদ মাহমুদ। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক খান।

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাহিন মূর্তজা বলেন, একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি যে, গাজীপুরের ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ আশ্রিত অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের ওপর পাশবিক যৌন নির্যাতন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনীন ওরফে বাঁধন। এছাড়া চিকিৎসা দেওয়ার নামে পছন্দের পুরুষ রোগীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার এই বিকৃত আচরণ ও জঘন্য অপরাধকে ‘ধর্ষণ’ ব্যতীত অন্যকিছু বলার সুযোগ নেই। একজন ধর্ষক, ধর্ষণের অপরাধে যে শাস্তি পান, ফিরোজা নাজনীন বাঁধনকেও একই শাস্তি প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি।

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, একজন নারী যে একজন পুরুষের ওপর যৌন নির্যাতন করতে পারে ও পুরুষকে ধর্ষণ করতে পারে- এই ধারণা উন্নত বিশ্বে স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশের বর্তমান আইনে স্বীকৃত নয়। ব্রিটেনের ল্যাংক্যাস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর সিওভান উইয়ার একটি গবেষণায় দেখান ‘নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণ সম্ভব। বরং অসম্ভব মনে করাটাই একটা মিথ বা কাল্পনিক উপকথা।’ উক্ত গবেষণাটি ২০১৭ সালে প্রতিবেদন আকারে বিবিসিতে প্রকাশিতও হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মতো বিকৃত মানসিকতার নারী কর্তৃক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর ও পুরুষ রোগীদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে মাদকাসক্ত করে যৌন নিপীড়ন ও জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করার ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে- নারীও ‘ধর্ষণ’ করতে পারে এবং পুরুষও নারীর দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে। এখন সময় এসেছে এই চরম সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।

আরো পড়ুন:  নারী পরিচালক করতেন যৌন নির্যাতন

এইড ফর মেনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খালিদ মাহমুদ বলেন, চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভিসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর বক্তব্য ও র‍্যাবের তদন্তের মাধ্যমে সামনে এসেছে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে ফিরোজা নাজনীন কর্তৃক কিশোর ও পুরুষদের উপর নারকীয় যৌন নিপীড়ন এবং জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে পুরুষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদেরকে বাধ্য করার বর্ণনা, যা অবশ্যই ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচ্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এটাই যে, আমাদের দেশের আইন ও দণ্ডবিধিতে নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না। ফলে ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মত একজন ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা যাচ্ছে না- যা ধর্ষণের শিকার কিশোরদের প্রতি চরম অন্যায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক খান মোবাইলে যুক্ত হয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক ও সর্বজনীন ধারণা ও সংজ্ঞা অনুযায়ী- একজন ব্যক্তি যদি অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে সেটাকে ধর্ষণ বলে। ফিরোজা নাজনীন বাঁধন সেই কাজটিই করেছেন। তিনি মাদকাসক্ত কিশোর ও পুরুষদেরকে শারীরিক নির্যাতন ও তাদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। সুতরাং তিনি একজন ধর্ষক এবং ধর্ষণের শাস্তিই তার প্রাপ্য। বাংলাদেশকে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং দেশীয় আইনে ধর্ষণের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সংজ্ঞায়ন করে ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মতো ধর্ষককেও ধর্ষণের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

মানববন্ধনে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের অন্যান্য সদস্য এবং অধিকার সচেতন তরুণরা অংশগ্রহণ করেন।

ইউএম