• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২১, ০৮:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৭, ২০২১, ০৮:০৪ পিএম

কবিতার বই : প্রকাশ বেশি, বিক্রি কম, পাঠকও কম!

কবিতার বই : প্রকাশ বেশি, বিক্রি কম, পাঠকও কম!

বলা হয়ে থাকে—যা কিছু সুন্দর তাই কবিতা। মানুষের মনের কলুষতা দূর করে কবিতা। শুধু তাই নয়, মানুষের সভ্যতার পথ দেখায় কবিতা। এছাড়া মানসিক বিকাশে কবিতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 

প্রতি বছর বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় কবিতার বই। সেসব বইয়ের বেশির ভাগ লেখকই তরুণ বা নবীন কবি। তবে বেশি বিক্রি হওয়ার তালিকার তলানিতে থাকে সেসব বই। নবীন কবিদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এসব বইয়ের প্রচার-প্রচারণা। এখন পর্যন্ত এবারের অমর একুশে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত বইয়ের তালিকার শীর্ষে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ। একই সঙ্গে এসব বই রয়েছে সবচেয়ে কম বিক্রির তালিকায়।

বিভিন্ন স্টলের কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় এবার সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই। সুন্দর ও ঝকঝকে প্রচ্ছদের এসব বই পাঠকের দৃষ্টি কাড়লেও কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের অনীহা দেখা গেছে। তবে যাও দুই-একটি বিক্রি হচ্ছে, তা কিনছেন কবিদের পাঠানো লোকজনই। সাধারণ বইপ্রেমী বা পাঠকরা স্টলে এসে কবিতার বই ছাড়া অন্য বই-ই বেশি খোঁজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে কবি ইরাজ আহমেদ বলেন, “আশির দশকের দিকে কবিতার সুবর্ণ সময় ছিল। তখন উৎসব করে কবিতার বই কিনেছে মানুষ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিতার বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। পাঠক এখন গল্প-উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন।”

আগ্রহ কমার পেছনে কারণ হিসেবে এই কবি বলেন, “কবিতা একটি রহস্যময় জায়গা। তাই মাথা খাটিয়ে রহস্য উদঘাটন করতে চান না পাঠকেরা। তারা এখন সহজ কিছু পড়তে চান।”

কবিতার পাঠক বাড়ানোর যায় কীভাবে—জানতে চাইলে ইরাজ আহমেদ বলেন, “কবিতার পাঠক বাড়ানো খুব শক্ত কাজ। অনেক প্রকাশক আছেন, যারা কবিতার বই ছাপাতে ভয় পান। তাদের ধারণা, কবিতার বই মানেই চলবে না। তাদের ভাবনা অমূলক নয়। কিন্তু প্রকাশকরা একসময় কবিতার বই বের করতেন। প্রকাশকদের উচিত কবিতার বই প্রমোট করা। এক্ষেত্রে নতুন ভালো কবিদের সহযোগিতা করতে হবে। নামকরা ভালো ভালো প্রকাশকরা যদি কবিতার বই বের করেন, তাহলে অনেক পাঠক কবিতার বই পড়বেন। এতে করে একধরনের জনপ্রিয়তা তৈরি হবে।”

এদিকে কবি ওবায়েদ আকাশ মনে করেন কবিতার পাঠক সবসময়ই কম ছিল। তিনি বলেন, “কবিতার পাঠক কখনোই খুব বেশি ছিল না। এখনো ওই রকম নেই। তবে প্রচুর পরিমাণে কবিতার বই প্রকাশ হয়। এখন বই কম না বেশি বিক্রি হলো—সেটা সাহিত্যের মানদণ্ড নয়। আমরা ভালো সাহিত্য চিনতে পারি কিনা—সেটা আমাদের পাঠাভ্যাস দ্বারা বিচার করতে হবে।”

ওবায়েদ আকাশ আরো বলেন, “কবিতার বই না-কিনলে যে কবিতা লেখা থেমে যাবে, তা নয়। কম বিক্রি হলে কবিতার বই প্রকাশ বন্ধও হয়ে যাবে না। যদি কখনো কবিতার বই প্রকাশ থেমে যায়, তাহলে সমাজের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। সাংস্কৃতিক বিকাশ স্তব্ধ হয়ে যাবে।”

তবে কবিতার বই বিক্রির কমে যাওয়ার পেছনে মানহীন কবিতার বই প্রকাশকে দোষারোপ করছেন বইমেলায় আসা পাঠকরা। তাদের ভাষ্য, মানহীন কবিতার বইয়ের চাপে স্টলে ভালো ও উন্নতমানের বই খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।