• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২১, ০৮:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১, ২০২১, ০৮:৪০ পিএম

বইমেলার সময় পরিবর্তনের দাবি

বইমেলার সময় পরিবর্তনের দাবি

দেশের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতির কারণে চলমান অমর একুশে বইমেলার সময়সূচি করা হয়েছে। বুধবার এই সময় পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলা একাডেমি।

নতুন সময় অনুযায়ী বইমেলা শুরু বেলা ৩ টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলবে। এ নিয়ে নতুন করে শুরু হয় মতবিরোধ।

বৃহস্পতিবার মেলায় ঘুরে আগত লেখক, প্রকাশক, ক্রেতা, বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়। লেখকদের কেউ বলছেন, সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের সমাগম বেশি হবে। ফলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আবার অনেক লেখকের মত দেন, মেলার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তাই শুধু বইমেলা নয়। সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

নতুন করে সময় নির্ধারনের দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশ সমিতি ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিরা। সেখানে তারা বইমেলার সময়টা বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করার দাবি জানিয়েছেন। প্রকাশকরা বলছেন, বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ছয়টা পর্যন্ত যে সময়টা দেওয়া হয়েছে সেটা বিক্রির জন্য উপযুক্ত নয়।

বাংলা একাডেমির সঙ্গে লেখক-প্রকাশকের বৈঠক

বৈঠক শেষে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী জাগরণকে বলেন, “সময়ের বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটা প্রধানমন্ত্রী পক্ষ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। সেটি আমাদের কাছে আসছে। আমরা শুধু সেটি জানিয়ে দিয়েছি।”
অপরেশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, “আজকে প্রকাশকদের সঙ্গে যে কথা হয়েছে সেখানে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। আমাদের মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। আলোচনার পর যদি কোনো পরিবর্তন বা কোনো সিদ্ধান্ত আসে সেটাই বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত।”

লেখক-প্রকাশকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বৈঠক শেষে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশ সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, “সমিতির প্রতিনিধিরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছে। আমরা দাবি জানিয়েছি, বিকেল চারটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যেন বইমেলার সময়টা নির্ধারণ করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি মানননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবেন, কথা বলবেন। আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উপলদ্ধি করবেন। এবং অচিরেই বইমেলা বিকাল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বইমেলার সময়টা নির্ধারণ করবেন।”

এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মেলা বন্ধের পক্ষে মত দেন কবি আশরাফ জুয়েল। জাগরণকে তিনি বলেন, “কোভিডের কারণে এখন গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০জন মানুষ মারা যাচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে বলছি, যারা মেলায় যাচ্ছে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সে জন্য আমি মনে করি, এই মুহূর্তে বইমেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ, জীবন তো সবার আগে।”

বইমেলার সময় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন তরুণ কথাসাহিত্যিক মাহবুব ময়ূখ রিশাদ। জাগরণকে রিশাদ বলেন, “এখন যে সময়টা নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থাৎ তিনটা থেকে ছয়টা এটার কোনো যুক্তিই নাই। সময় যেহেতু সংকুচিত, তাই এ সময়টাতে মানুষ বেশি যাবে। কম সময় হওয়ায় প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় প্রচুর গাদাগাদি হবে। এতে সংক্রমিত হবে বেশি।

রিশাদ আরো বলেন, “শুধুমাত্র বইমেলা বন্ধ হওয়ার পক্ষে আমি না। আমি মনে করি, এখন যে অবস্থাটা, করলে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”

লেখক গগন ঘোষ বলেন, “তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত মানুষ কর্মস্থলে থাকে। তা ছাড়া এখন গরমের দিন। ওই সময়টায় প্রচুর গরম থাকে। সে ক্ষেত্রে বইমেলার সময়টা বিকাল পাঁচটা থেকে  রাত ১০টা পর্যন্ত করলে তাহলে সবার জন্য ভালো হয়।”

নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল বলেন, “মানুষ অফিস-আদালত শেষ করে মেলায় আসে। সেখানে ৬টায় মেলা বন্ধ করে দিলে কীভাবে চলবে? তাই আমাদের দাবি, মেলাটা বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত করা হলে ভালো হয়।”
লিটলম্যাগ ‘পরান কথার’ প্রকাশক তাশরিক-ই হাবিব বলেন, বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা— এই সময়টা উপযুক্ত সময় বলে মনে হয় না। এতে বইমেলার গুরুত্ব হারাচ্ছে। আমি মনে করি, বিকেলে চারটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যদি সময়টা করা হয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের জন্য ভালো হয়।”

গাজী প্রকাশনীর এক বিক্রেতা বলেন, “আমাদের বিক্রি আসলে তেমন একটা নাই। তার মধ্যে তিনটা থেকে সাড়ে ৬টা এই সময়টা মোটেই আমাদের জন্য ভালো না। বইমেলা বিকেল পাঁচটা থেকে মানুষ আসে। সে ক্ষেত্রে যদি ৫টা থেকে ৯টায় দিতো তাহলে আমাদের বেচাকেনার জন্য ভালো হয়।”

বইমেলায় আগত কয়েকজন ক্রেতা-পাঠক জানান, দুপুরের দিকে মানুষ একটু অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে। যদি তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সময়টা করা হয়, তাহলে মনে হয় সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে।

মেলায় নতুন বই

মেলার ১৫তম দিনে বৃহস্পতিবার ৭২টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে গল্পের বই ১৫টি, উপন্যাস ১০টি, প্রবন্ধ ৬ টি, কবিতা ২২ টি, শিশুসাহিত্য ১ টি, জীবনী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, বিজ্ঞান ১টি, ইতিহাস ৩টি, বঙ্গবন্ধু ৪টি, রম্য/ধাঁধা ১টি, অনুবাদ ১টি, এবং অন্যান্য-৪টি বই।  

মেলার সময় 

শুক্রবার বইমেলা বেলা ১১ টায় শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।