• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২১, ০৭:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০২১, ০৭:৪৩ পিএম

অবশেষে শেষ হলো বইমেলা

অবশেষে শেষ হলো বইমেলা

অনেক নাটকীয়কতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো অমর একুশে বইমেলা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির বইমেলা মার্চে শুরু হলো। তবে প্রচণ্ড দাবদাহে সেই মেলা লেখক, পাঠক, দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের মিলনমেলা পরিণত হয়ে ওঠার সুযোগই মেলেনি। তার ওপর বারবার পাল্টানো হয়েছে মেলার সময়। অবশেষে লেখক-প্রকাশকদের হতাশার মধ্য দিয়ে ২৬ দিনের মাথায় পর্দা নামল বইমেলার। বইমেলার শেষ দিনে বিক্রির চেয়ে বরং তাড়াহুড়ো করে চলে যেতে দেখা গেছে সবাইকে। বিদায়ের দিনে বই গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন স্টলে দায়িত্বে থাকা লোকজন।

প্রকাশকরা বলছেন, এবারের যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখিন হলো প্রকাশকরা, অতীতের কখনোই এ ধরনের ক্ষতি হয়নি তাদের।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি এবং বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, “এমনিতেই করোনার কারণে আমাদের প্রকাশনা জগৎ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আশা করেছিলাম অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা বাণিজ্যিকভাবে কিছুটা লাভের মুখ দেখবে। কিন্তু করোনার কারণে এ বছরের বইমেলায় অর্থনৈতিকভাবে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রকাশকরা।

অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা বলেন, “অন্যবারের ১০ ভাগও মেলাটা জমে উঠেনি। আজকে মেলার শেষ দিনে ভাবছিলাম যে, মেলায় অনেক লোকজন হবে, বেচাবিক্রিও ভালো হবে। সে আশা পূর্ণ হয়নি। তাছাড়া এই বইয়ের ব্যবসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না হলে আমাদের প্রকাশনাও আলোর মুখ দেখবে না।”

সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করে মিজান পাবলিশার্সের প্রকাশক আনম মিজানুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, “করোনার কারণে আমরা প্রকাশকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। প্রকাশকরা এত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জীবনে কোনোদিন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা মেলা করলেও এ ধরনের অবস্থা কখনো হয়নি। এর মূল কারণ হলো সময়, বেলা ১২ থেকে বিকাল ৫টা। এটা মেলার জন্য কোনোভাবেই উপযুক্ত সময় নয়। সারাজীবন দেখে এলাম মেলা ৫টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত চলে। বইমেলা যে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা, সেটা এবার হয়নি।

এই প্রকাশক আশা প্রকাশ করে বলেন, “সরকার যদি আমাদের বিনা সুদে ঋণ বা প্রণোদন দেন তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”

মেলায় আসা আলোকচিত্রী জাহরা জাহানা পার্লিয়া বলেন, “এই মেলা নিয়ে একটা অনিশ্চিয়তা ছিল। মন্দের ভালো হিসেবে বইমেলা হলেও সময়ের কারণে প্রকাশকদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। তা ছাড়া আমাদের দেশে তো বই প্রকাশ মেলাকেন্দ্রিক হয়। বইমেলায় যে আড্ডা, লেখকদের সাথে দেখা হওয়া, বই নিয়ে কথা বলা এগুলো সত্যি মিস করবো।”

পার্লিয়া আরো বলেন, “বইমেলায় শেষ হওয়ায় কষ্ট তো লাগছেই। তবে বইমেলা আজকে শেষ হয়ে গেলেও সারাবছরই মানুষ বই পড়বে, বই কিনবে, বইয়ের সাথে থাকবে। আশা করব প্রতি বছরের মতো আগামী বছর পুরো মাস আরেকটি সুন্দর বইমেলা পাবো।”

তরুণ কবি হাসনাইন হীরা বলেন, “মেলায় যেহেতু ভাঙন শুরু হয়েছে লেখক হিসেবেও নিজের ভেতর একটা ভাঙন শুরু হয়েছে। যেভাবে বইমেলা হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি। তবুও যতটুকু হয়েছে বাংলা একাডেমি যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে। আগামী দিনে মেলাটা যেন আরো সমৃদ্ধ হয়, সেটা আমরা জোর দাবি জানাই।

এ পর্যন্ত মেলায় প্রকাশিত সর্বমোট নতুন বইয়ের সংখ্যা ২৬৪০টি। সোমবার বইমেলার শেষ দিনে বই এসেছে ৬৪টি। গল্প-৬, উপন্যাস-৪, প্রবন্ধ-৮, কবিতা-২৯, ছড়া-৪, জীবনী-২, মুক্তিযুদ্ধ-২, নাটক-১, বঙ্গবন্ধু-৪ ও অন্যান্য-৬টি বই। 

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সংবাদ সম্মেলন:

মেলার সার্বিক অবস্থা নিয়ে ও এর ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে ও সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। 

সোমবার বিকেলে বইমেলা প্রাঙ্গণে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এ বছর অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্যাভিলিয়ন ও শিশুচত্বরসহ সর্বমোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪১৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট বিনিয়োগ প্রায় ৯০ কোটি টাকা এবং অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগ প্রায় ১০ কোটি টাকা।”

অন্যান্য বছর প্রকাশকরা মেলাকে কেন্দ্র করে তাদের বিনিয়োগের প্রায় ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা তুলে আনতে পারেন। বাকি বিনিয়োগ সারা বছর সমগ্র দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রেতাদের মাধ্যমে তুলে আনেন। ২০২০ সালের মেলার পর দেশব্যাপী করোনা বিপর্যয়ের কারণে প্রকাশকরা তাদের ৬৫ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে আনতে পারেননি। এ বছর তা দাঁড়ালো শতভাগে।

শ্যামল পাল বলেন, প্রথম ১৪ দিনে ৩০টি প্যাভিলিয়ন বাদে ৩৮৩টি প্রতিষ্ঠানের বিক্রির তথ্য ফরমের চিত্রানুযায়ী গড় বিক্রয় এক কোটি ৫৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৭ টাকা ৪২ পয়সা। শেষ ১১ দিনে গড় বিক্রি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৬১ টাকা ৪০ পয়সা। সুতরাং ২৫ দিনের মোট বিক্রি দুই কোটি ২২ লাখ ৬১ হাজার ৬৯৮ টাকা ৮২ পয়সা। অন্যদিকে বাকি ৩০টি প্যাভিলিয়নে মোট গড় বিক্রি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার ২৩০ টাকা।