কঠোর নির্দেশনার বাস্তবায়ন শুরু

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২১, ০৯:০৬ এএম কঠোর নির্দেশনার বাস্তবায়ন শুরু

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সরকারের দেওয়া কঠোর নির্দেশনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে কঠোর নির্দেশনায় দোকানপাটসহ সারাদেশে বন্ধ রয়েছে সব কার্যক্রম। তবে জরুরি কাজে নিয়োজিত সব ধরনের সেবা চালু রয়েছে। সীমিত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, পোশাক কারখানা। এ নির্দেশনা চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। 

সরকারের কঠোর নির্দেশনা অনুযায়ী, সকাল থেকে গণপরিবহনসহ বন্ধ রয়েছে। এলাকার দোকানপাটও বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। তবে কারওয়ান বাজারসহ বেশকিছু স্থানে ছিল লোকের সমাগম।

এদিকে গণপরিবহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে, রিকশায় কিংবা সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে অফিস উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন অনেকে। গুলশানে যাওয়ার পথে ব্যাংক কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেইন বলেন, “অফিসে যাবো কিছুই পাই না। রিকশা ভাড়াও দ্বিগুণ। যারা প্রয়োজনে বের হবে তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল।”

তবে সরকারের দেওয়া কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাজধানীর রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

মহামারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনও বিকল্প নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতসহ রোগ প্রতিরোধের বিজ্ঞানভিত্তিক সব ব্যবস্থাও সক্রিয় রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে দেশে করোনা শনাক্তের হার বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আরও ৭ হাজার ৮৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

রোববার (৪ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর নির্দেশনার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে থেকে আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) রাত ১২ টা পর্যন্ত জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। জরুরি সেবার মধ্যে- পণ্যপরিবহন, জ্বালানি, ওষুধ, পচনশীল, ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টসসামগ্রী আওতাভুক্ত থাকবে।

কঠোর নির্দেশনায় মানতে হবে যেসব বিধি-নিষেধ:

১. সকল প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া, বিদেশগামী/বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

৩. সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে শিল্প-কারখানা এলাকায় কাছাকাছি সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সংকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।

৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

৬. শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকান, পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না।

৭. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

১১. এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও সংবাদ