• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২০, ২০১৯, ০৯:০০ পিএম

বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মাঠেই মেয়ে ফুটবলারদের কাঁদাল বাফুফে!

বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মাঠেই মেয়ে ফুটবলারদের কাঁদাল বাফুফে!
জোর আকুতি সত্ত্বেও মাঠ থেকে বলপূর্বক বের করে দেয়া হয় ঠাকুরগাঁওয়ের কিশোরী ফুটবলারদের

দেশের জন্য গত বেশ কয়েক বছর যাবত গৌরব বয়ে আনছেন কিশোরী ফুটবলাররা। এবার সেই ফুটবলারদেরই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ঠিক আগে অপদস্থ করে সমালোচনার ঝড় তুলল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। 

জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৯ এর সেমিফাইনালে গত বৃহস্পতিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে  ময়মনসিংহ জেলাকে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ঠাকুরগাঁও। অন্যদিকে, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মাগুরা জেলাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় রংপুর জেলা। হিসেবে অনুযায়ী, ফাইনাল ম্যাচ ঠাকুরগাঁও ও রংপুরের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু ময়মনসিংহ জেলার অভিযোগ, ১৪ বছরের বেশি বেশ ক'জন ফুটবলারকে নিয়ে টুর্নামেন্ট খেলছে ঠাকুরগাঁও। ফাইনালের দিন বিষয়টি আমলে নেয় টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষ এবং হঠাৎ করেই ঘোষণা আসে বয়সের বেশি ৪ খেলোয়াড় নিয়ে খেলায় ফাইনাল খেলতে পারবে না ঠাকুরগাঁও। তাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ খেলবে ফাইনাল। 

বাফুফের দেয়া বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের পর হট্টগোল লেগে যায় মাঠের মধ্যে। বিষয়টিকে নিজেদের প্রতি অবিচার দাবি করে, মাঝমাঠে অবস্থান নিয়ে খেলায় বাঁধা দেয় তারা। এসময় কান্না করছিল ফুটবলাররা। গণমাধ্যমের কাছে ঠাকুরগাঁওয়ের ফুটবলাররা জানায়, তাদেরকে ফাইনাল থেকে অনৈতিকভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারা ফাইনালে উঠলেও ময়মনসিংহকে খেলার সুযোগ করে তাদেরে বাদ দেয়া হয়েছে। 

মাঠ ছাড়তে না চাইলে নারী পুলিশরা মেয়েদের টেনে বের করে নেন

ফাইনাল খেলতে না দেয়ায় বাফুফের হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানোয় পুলিশ দিয়ে কিশোরী ফুটবলারদের আটকে রাখে বাফুফে। এই ঘটনার ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বাফুফের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। 

ঠাকুরগাঁওয়ের খেলোয়াড়রা আরও দাবি করে, সেমিফাইনালে হেরেই ময়মনসিংহ চার ফুটবলারের বয়স বেশি বলে অভিযোগ করে। তবে এতদিন খেলোয়াড়রা খেলল কীভাবে? এতদিন তো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগেই কেন? এ অভিযোগ তুলে মাঠ অবরুদ্ধ করে রাখে ঠাকুরগাঁওয়ের খেলোয়াড়রা। মাঠ ছেড়ে আসতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। শেষতক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঠাকুরগাঁও দলের কোচ এবং ম্যানেজারকে মাঠে পাঠায় খেলোয়াড়দের বোঝাতে। 

ফাইনাল খেলতে না পারার শোকে মাঠেই মূর্ছা যান ঠাকুরগাঁওয়ের এক কিশোরী ফুটবলার

ম্যাচ শুরুর আগে ঠাকুরগাঁওকে বাদ দেয়ার বিষয়ে বাফুফে জানিয়েছে, ময়মনসিংহ আমাদের কাছে ঠাকুরগাঁওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। সেমিফাইনালের হারের পর তারা আমাদের জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ের চার ফুটবলার আগেও জেএফএ কাপ ফুটবল খেলেছে দুইবার করে। আর আমাদের এই টুর্নামেন্টের নিয়মানুসারে, কোনো খেলোয়াড় দুইবারের বেশি এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবে না। আমরা কাগজ পত্র ঘেঁটে দেখেছি। অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। 

কিন্তু সকলের এখানেই প্রশ্ন; ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগেই বাফুফের এই সত্যতা যাচাই কেন? কিংবা অভিযোগের পর কেন তারা খেলোয়াড়দের প্রোফাইল ঘাটতে গেল? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তবে কি তারা উদাসীন ছিল? অন্য দলগুলোও কি এই সুযোগ নেয়নি? প্রশ্নগুলো হয় তো প্রশ্নই থেকেই যাবে। কেননা বাফুফে আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলো এখন দিনে দিনে হাস্যরসে পরিণত হচ্ছে। পেশাদারিত্বের বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা নেই কোথাও। 

ঠাকুরগাঁওয়ের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েও দেড় ঘণ্টা পর ফাইনাল ম্যাচ শুরু হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপ পড়ায় মাঠে আর গোলযোগ না হলে, সেই ময়মংসিংহকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতে রংপুর। এসময় ফাইনাল খেলতে না দেয়ায় কান্নারত ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েরা ময়নসিংহের মেয়েদের উদ্দেশ্য করে রংপুরের জয়ের জন্য করতালি দেয়। চোখের পানি মুছে মাঠের বাইরে থেকে ময়মনসিংহের হার উদযাপন করে তারা।

এসএইচএস/এমএইচএস 

আরও পড়ুন