• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৯, ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম

ভারত সফরের আগে নিষিদ্ধ নাও হতে পারেন সাকিব

ভারত সফরের আগে নিষিদ্ধ নাও হতে পারেন সাকিব
সাকিব আল হাসান। ফটো : আইসিসি

টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তির কারণে নিষিদ্ধ হতে পারেন সাকিব আল হাসান - এমন গুঞ্জন বেশ কয়েকদিন থেকেই আকাশে-বাতাশে ভেসে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু দেশের ক্রিকেট আকাশে জমে থাকা অনিশ্চয়তার কালো মেঘ যে অমাবস্যার অন্ধকারের চেয়েও ভয়ানক হতে পারে, এমন দুঃস্বপ্নও কেউ দেখার মতো সাহস পাননি।

গতকাল গভীর রাতে যারা জেগে থেকে ভয়াবহতম দুঃসংবাদটি গণমাধ্যমের দ্বারা পেয়েছেন, তারাই কেবল অনুভব করতে পেরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুর্যোগ এখন কতটা প্রকট, কতটা ভয়ঙ্কর। যারা সকালে ঘুম থেকে উঠে দুঃসংবাদটি জেনেছেন, তাদের কাছে এমন বিষাদময় সকাল দেখার চেয়ে হয়তো ঘুমের দেশে পড়ে থাকাটাই ছিল স্বস্তির।

কিন্তু হায়! সবকিছু কী আর স্বাভাবিক গতিতে চলে? একদম না। আর এমনটি হয় না বলেই বিশ্বের সবচেয়ে পেশাদার এক ক্রিকেটার হয়েও সাকিব এমন এক ভুল করে বসলেন, যার খেশারত শুধু তাকেই নয়; দিতে হতে পারে গোটা ক্রিকেট দলকে। ২ বছর আগে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন বিভাগকে অবগত না করার অপরাধে এখন অভিযুক্ত সাকিব। 

সবাই যখন ধরেই নিচ্ছেন সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় পড়া এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র, ভারত সফরে তার যাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই, তাদের হয়তো এখনই পুরোপুরি আশাভঙ্গের মতো ঘটনা নাও ঘটতে পারে। তবে কি সাকিবের ভারত সফরে যাওয়ার আদৌ কোনো সম্ভাবনা রয়েছে? এক কথায় হ্যাঁ কিংবা না বলার আগে কিছু সমীকরণ মিলিয়ে নেয়া যাক।

২০১৫ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিং, প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার না করা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তোলপাড় কম হয়নি। ওই ঘটনার মধ্যদিয়েই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে আলাদা এক উত্তেজনা কাজ করে। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যন্ত উত্তপ্ত থাকে। দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে চলতে থাকে কথার লড়াই। আর তাতেই তৈরি হয়েছে আলাদা এক বাণিজ্যিক চাহিদা। ম্যাচ দেখানোর জন্য টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতিযোগিতা আর উচ্চ বিজ্ঞাপন রেটের কারণে হলেও এখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের বাড়তি চাহিদা আছে।  

ক্রিকেটে ৩ মোড়ল তত্ত্ব হাজির হওয়ার সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বিসিবির কিছুটা শীতল সম্পর্ক গেলেও মূলত দুই বোর্ডের মধ্যে কখনোই বৈরিতা চোখে পড়েনি। আইসিসি এবং বিসিসিআই সভাপতি থাকাকালে জগমোহন ডালমিয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা এদেশের মানুষ আজও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে।

সম্প্রতি বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী। প্রিন্স অব কলকাতা নামে খ্যাত এই ক্রিকেটার সবসময় বাংলাদেশের প্রতি তার আলাদা এক অনুভূতির কথা প্রকাশ করে থাকেন। টাইগারদের ক্রিকেটের হালচাল তার খুব ভালোই জানা। বিসিবির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার বিষয়ে তার রয়েছে গভীর মনোযোগ। আর এজন্যই কি না কলকাতার ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচ কে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সৌরভ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গ্যালারিতেই বসে খেলা দেখবেন ক্রীড়াপ্রেমী শেখ হাসিনা। 

সৌরভ গাঙ্গুলীর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ইডেনে খেলা দেখার আমন্ত্রণ শুধুমাত্র দুই দেশের ক্রিকেটীয় সু-সম্পর্ক নয়, কূটনৈতিক সু-সম্পর্ক বজায় রাখারও একটি শুভ উদ্যোগ। ইডেনে অনুষ্ঠেয় টেস্ট ম্যাচটি দিবারাত্রির আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে বিসিবিকে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে বিসিসিআই। অর্থাৎ জাঁকজমকটার কোনো কমতি রাখতে চাইছে না দাদা, এটা পানির মতো পরিষ্কার।  

অতীতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গেলেও বিগত কয়েক বছর ধরে দুই দেশ হাত ধরে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার যে শপথ নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তা গোটা বিশ্বেরও নজর কেড়েছে। আর তাই ইডেনে বসে হাসিনা-মোদী-মমতার একসঙ্গে খেলা দেখার দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় দুই দেশের জনগণ। 

ইডেন টেস্ট নিয়ে এমন উদ্দীপনা ম্লান হয়ে যেতে পারে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতির কারণে। প্রতিপক্ষ দলও যে তার বিরুদ্ধে খেলতে মুখিয়ে থাকে, এ আর নতুন কী। সাকিবের বিপক্ষে বোলিং করা, তার বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলা যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই বড় এক অভিজ্ঞতা; হোক সেটা ভারতের মতো শক্তিশালী দলের খেলোয়াড় কিংবা ছোট দলের কোনো খেলোয়াড়। আইপিএলে আগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সময় সাকিব তো ইডেনের ঘরের ছেলেই হয়ে গিয়েছিলেন। তার প্রতি আলাদা আবেগ তো ওপার বাংলার সবারই এখনো কাজ করে। দাদার পর তারা তো ক্রিকেট মাঠে আর কোনো বাঙ্গালীকে এতটা শাসন করতে আর দেখেনি, আবেগ আর সমর্থন না থেকে আর যাবেই বা কোথায়! 

বিসিবি তো বটেই, বাণিজ্যিক কারণে হলেও সাকিবের উপস্থিতি ভারতের মাটিতে নিশ্চিত করার স্বার্থ বিসিসিআইয়ের থাকলে সেটা মোটেও অবাক করার মতো বিষয় নয়। সৌরভ গাঙ্গুলীর বোর্ড সভাপতি হওয়ায় বাংলাদেশের অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক নাকি এখন আরও জোরদার হবে। সেই ফায়দা এখন বিসিবি কতটা নিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। 

আইসিসি যেকোনো সময় সাকিবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার খড়গ নামাতে পারে। তবে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে আইসিসিকে আর্থিকভাবে লাভবান করা থেকে শুরু করে কূটনৈতিক তৎপরতাতেও বিসিসিআই বিশ্বের সকল ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছে। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থের জন্য হলেও আইসিসির প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও আবেদন রাখতেই পারে যেন সাকিব অন্তত ভারতের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে পারে। তার আগে যেন মি.অলরাউন্ডারের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেমে না আসে। আর দুই দেশের বর্তমান সম্পর্কের বিষয়টি তো আগেই লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে। হাসিনা-মোদী-মমতার একসঙ্গে খেলা দেখবেন আর সাকিব-কোহলি একসঙ্গে টস করতে নামবেন না, তা কি করে হয়! আইসিসি এখন পর্যন্ত সাকিবের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথাই বা জানায়নি কেন? তবে কি উপর মহলে কিছু একটা চলছে? 

জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনৈতিক প্রস্তাব না জানিয়ে চেপে গেলে, লুকানোর চেষ্টা করলে বা আকসুর জিজ্ঞাসাবাদেও অস্বীকার করলে একজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে 'আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন' ধারা ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৪, ২.৪.৫ ও ২.৪.৬ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬ মাস আর সর্বোচ্চ ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে আইসিসি। সাকিব আকসুর জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করায় ১৮ মাস শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আপাতত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আইসিসি।বোর্ড সভাপতি সাকিবকে আশ্বস্ত করেছেন, পুরো ব্যাপারটিতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই সাকিবের পাশে থাকবে বিসিবি। সাকিব শাস্তির মেয়াদ কমাতে আইসিসির কাছে আপিলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। 

আরআইএস 
 

আরও পড়ুন