• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০৩:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০৩:৩০ পিএম

তীরে এসে তরী ডোবার গল্প শেষ

তীরে এসে তরী ডোবার গল্প শেষ
২০১৬ সালের ক্ষত খানিকটা হলেও শুকাতে পেরেছেন মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সুনিশ্চিত জয়ের দুয়ায়েই দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু শেষ ৩ বলে জয়ের জন্য মাত্র ২ রানের প্রয়োজন থাকলেও টাইগার ভক্তদের স্তম্ভিত করে দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায় লাল-সবুজের দল।

বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ভারত করেছিল ৭ উইকেটে ১৪৬ রান। মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়েছিল। 

শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১ রান, হাতে ছিল তখনো ৪ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন টাইগারদের দুই অভিজ্ঞ সেনানী মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হার্দিক পান্ডিয়ার করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ১ রান নেন রিয়াদ। পরের দুই বলে দুই বাউন্ডারি মেরে জয়ের অগ্রিম উদযাপন শুরু করে দেন মুশফিক। কিন্তু সেদিন যে নিয়তি টাইগারদের সঙ্গে চরম নিষ্ঠুর আচরণ করার জন্য অপেক্ষা করছিল কে তা জানতো! 

শেষ ওভারের চতুর্থ বলে হার্দিকের করা স্লো এবং শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে চরম ভুল করে ফেলেন আশা ভরসার প্রতীক মুশফিক। ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে তিনি শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়েন। 

হার্দিকের করা পঞ্চম বলটি ছিল ফুলটস। এমন বল পেয়ে মারার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারলেন না সাইলেট কিলার খ্যাত রিয়াদ; স্লগ করে তিনি বাজপাখির মতো ছুটে আসা রবীন্দ্র জাদেজার তালুবন্দি হয়ে টাইগারদের ঘোর অনিশ্চয়তার ভেতর রেখে প্যাভিলিয়নে চলে যান। ৩ বলে ২ রানের সমীকরণ তখন হয়ে গেল ১ বলে ২ রান! 

শেষ বলটি খেলার জন্য স্ট্রাইকে ছিলেন শুভাগত হোম, নন স্ট্রাইক প্রান্তে তখন দাঁড়িয়ে মুস্তাফিজুর রহমান। হার্দিক পান্ডিয়া অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন শর্ট বল। শুভাগত হোম বল ব্যাটে লাগাতে না পারায় তা সরাসরি চলে যায় মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসে। শুভাগত আর মুস্তাফিজ শুরু করেন দৌড়। ধোনি বল সরাসরি স্টাম্পে লাগানোর ঝুঁকি না নিয়ে দৌড়ে যান। দৌড়ে গিয়ে ধোনি যখন বল স্টাম্পে লাগালেন, মুস্তাফিজ তখনো ক্রিজে পৌঁছাতে পারলেন না; ফলাফল ১ রানের অবিশ্বাস্য পরাজয়।

৩ বছর পরও সেই ঘটনার যাতনা আজও মুশফিক-রিয়াদকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। তবে ভারতের মাটিতে তাদের হাত ধরেই যে জয়ের জাহাজ এবার বন্দরে নোঙর ফেলবে, তা আদৌ কি রোহিত শর্মার দল কল্পনা করতে পেরেছিল? দিল্লিতে বায়ু দূষণের ভেতর ক্রিকেট ইতিহাসের ১০০০তম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচে তো শেষ পর্যন্ত তেমনটাই ঘটে গেল, যার সাক্ষী হয়ে রইল অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের দর্শকরা।

৪৩ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কার মারে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মুশফিক যখন ম্যাচ সেরা, তখন কঠিন সময়ে মাঠে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭ বলে ১৫ রানের ক্যাপ্টেনস নক খেলে প্রমাণ করে দিলেন, আহত বাঘ জয়ের জন্য তীব্র ক্ষুধার্ত থাকলে শিকার হাতছাড়া করে না। যেন এই দুই ক্রিকেটারকে নিয়তির সেই নির্মম পরিহাসের চরিত্র থেকে নায়কের চরিত্রে রূপান্তরিত করার জন্যই বসেছিলেন ভাগ্যবিধাতা। বারবার তীরে এসে তরী ডোবার গল্প শেষ করতে বিধাতা নিজেও যেন ছিলেন বড্ড অস্থির। 

ভারতের ১৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের বড় জয় যেন এটাই প্রমাণ করে দিলো, সাকিব-তামিম ছাড়াও নিজেদের দিন রচনা করতে জানে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে পরাজয়, ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের কারণে বোর্ডের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন, ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়ে তা গোপন রেখে সাকিব আল হাসানের ক্রিকেট থেকে নির্বাসন, এসব কিছুর মাঝে এমন জয় যেন ফিনিক্স পাখির মতোই ক্রিকেট পুনর্জন্মের অগ্নিসাক্ষী।  

সাকিব-তামিমের না থাকার বেদনা শক্তিতে পরিণত করে যেন সতীর্থরা বার্তা দিয়ে রাখলো- পতনের অতল গহ্বর থেকে দলকে উঠিয়ে বের করে আনার জন্য আমরাই যথেষ্ট। তোমরা ফিরে এসো। তোমাদের অপেক্ষায় আমরা, অপেক্ষায় দেশের ১৬ কোটি জনগণ, অপেক্ষায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার প্রতিটি ইঞ্চি মাটি। শুধুমাত্র ক্রিকেট মাঠে তোমাদের দুরন্ত নৈপুণ্য দেখার এবং জয় ছিনিয়ে আনার। 

আরআইএস     

আরও পড়ুন