‘জান দেব তবু বালু দেব না’

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০১৯, ০৯:২০ পিএম ‘জান দেব তবু বালু দেব না’
‘জান দেব তবু বালু দেব না’ স্লোগানে সাত গ্রামের বিপুলসংখ্যক মানুষের মানববন্ধন  -  ছবি : জাগরণ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে যমুনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। ‘জান দেব তবু বালু দেব না’ স্লোগানে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মানববন্ধন করেছেন সাত গ্রামের তিন সহস্রাধিক মানুষ।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে আলীপুরে দুই ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও বিবিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলে বালু উত্তোলন। তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

যমুনার পাড়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়া সাত গ্রামের পুরুষদের একাংশ  -  ছবি : জাগরণ

মানববন্ধনে গ্রামবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন আব্দুর রাজ্জাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মাস্টার, শামসুল আলম প্রমুখ। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর কোল ঘেঁষে যমুনা নদী থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু উত্তোলন করে আসছে উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার, গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মেম্বারসহ একটি প্রভাবশালী মহল। বালু উত্তোলনের ফলে উপজেলার চরসিংগুলি, বনসিংগুলি, কায়েম সিংগুলি, জিদহ, ভৈরববাড়ী, আলীপুর, বেলটিয়া, খাগচড়া গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ।

নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পুরুষদের পাশাপাশি মানববন্ধনে অংশ নেন নারীরাও  -  ছবি : জাগরণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে বালু উত্তোলনকারী। এর আগে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সাথে বালু উত্তোলনকারীদের কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।

শামসুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৬ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও তোয়াক্কা করে না প্রভাবশালীরা। দীর্ঘদিন যাবৎ বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু। এছাড়া উত্তরবঙ্গে গ্যাস সংযোগের লাইনও রয়েছে হুমকিতে। যেকোনো সময় গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ হয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বালু উত্তোলন করে পাহাড়সম মজুদ করা হয়েছে। উপজেলার গরিলাবাড়ী গ্রামের জনাব আলী তালুকদার নামের কৃষক বলেন, নদীতে আমার বাড়ি সাত থেকে আটবার ভেঙে গেছে। নদীভাঙন রোধে বালু উত্তোলন বন্ধ ও স্থায়ী ব্যবস্থা চাই।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, সেতু এলাকায় ৬ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার পরও একটি প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন করার চেষ্টা করে। বালু উত্তোলনের প্রভাব পরোক্ষভাবে সেতুর ওপর গিয়ে পড়ে। বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক আছি।

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

এনআই

আরও সংবাদ