শেবাচিমে আয়াদের টাকা না দেয়ায় বাঁচলো না গর্ভের সন্তান

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম শেবাচিমে আয়াদের টাকা না দেয়ায় বাঁচলো না গর্ভের সন্তান

আয়াদের টাকা না দেয়ায় অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছাবার আগেই মৃত্যু হলো এক প্রসূতি মায়ের গর্ভের সন্তানের। চিকিৎসকের নির্দেশ দেয়ার পরও টাকা না পেয়ে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেয়নি কর্মরত আয়ারা। দেড় ঘণ্টা বিলম্বে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজারিয়ান করে মৃত সন্তান বের করেন চিকিৎসকরা।

বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রোগীর স্বজন এবং ওয়ার্ডে কর্মরত আয়াদের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পাশাপাশি হালিমা বেগম নামের এক আয়াকে আটক করা হয়।

হালিমা বেগম বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বরাকোটা গ্রামের সুলতান হাওলাদারের স্ত্রী। তিনি শেবাচিম হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে অবৈধভাবে আয়া হিসেবে কর্মরত ছিল। মৃত নবজাতকের মা বিউটি বেগম (২৫) ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মধ্যপ কামদেবপুর গ্রামের জনৈক সোহেল এর স্ত্রী।

অস্ত্রোপচার শেষে বিউটি বেগমকে হাসপাতালের অবজার্ভেশন কক্ষে রাখা হয়েছে। বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিউটি বেগমের স্বজন শারমিন আক্তার ও রাশেদ জানান, সকাল প্রসব বেদনা শুরু হলে সিজারিয়ানের জন্য বিউটি বেগমকে বুধবার  সকাল ৯টায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তার অস্ত্রোপচার না করে নার্সদের (সেবিকা) স্বাভাবিক প্রসবের অপেক্ষা করে। কিন্তু তা না হওয়ায় টানা দুই ঘণ্টা পরে সকাল ১১টার দিকে রোগীকে সিজারিয়ানের জন্য দ্রুত পঞ্চম তলার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আসতে বলেন চিকিৎসকরা।

স্বজনরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের কথা মত রোগীকে ট্রলিতে করে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রসূতি ওয়ার্ডে কর্মরত আয়া হালিমা বেগম, সন্ধ্যা রাণী মালী ও পপি আক্তারকে অনুরোধ জানান। এসময় রোগীকে পৌঁছে দেয়ার জন্য তারা বকশিশ দাবি করে। রোগীর সাথে পুরুষ লোক না থাকায় পরে টাকা দেয়ার আশ্বাস দেয় স্বজনরা। কিন্তু আগে টাকা না পেয়ে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেবে না বলে বেকে বসে আয়ারা। 

শারমিন বলেন, আয়ারা অসহযোগিতার বিষয়টি গাইনী বিভাগের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসক স্বজনদের মাধ্যমে রোগীকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দিতে আয়াদের নির্দেশ দেন। কিন্তু চিকিৎসকের নির্দেশও কাজে আসেনি। সর্বশেষ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সন্ধ্যা রাণী মালী নামের এক আয়াকে ১৫০ টাকা দেয়ার পরে তিনি রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছে দেয়।

এদিকে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীর পেটের বাচ্চা স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল। যে কারণে প্রাথমিকভাবে তার নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হলে তার সিয়ারিয়ান করা হয়। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় সিজারিয়ানের আগেই গর্ভে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। এজন্য আয়া-বুয়াদেরকেই দায়ী করেন চিকিৎসকরাও।

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদুল ইসলাম বলেন, যে তিনজন আয়া রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং অসহযোগিতা করেছে তারা কেউ সরকারি কর্মচারী নয়। এদের মধ্যে দু’জন চুক্তিভিত্তিক এবং আটক হওয়া হালিমা বেগম নামের আয়া বহিরাগত। সে অবৈধভাবে প্রসূতি ওয়ার্ডে কাজ করে আসছিল। বাকি যে দু’জন চুক্তিভিত্তিক রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে, বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান বলেন, মৃত বাচ্চার স্বজনদের অভিযোগে অভিযুক্ত আয়া হালিমা বেগমকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় রোগীর স্বজনরা মামলা করবে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। মামলা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেএসটি

আরও সংবাদ