• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৯:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৯:০৮ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

ঠাকুরগাঁওয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

ঠাকুরগাঁওয়ে ইটভাটা শ্রমিক ফারাজুল ইসলামের স্ত্রী লাবনী আক্তার চার মাসের অন্তস্বত্বা। তিনি হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হলে পরামর্শ নিতে আসেন স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসক পরেশ চন্দ্র রায়ের কাছে। পরেশ চন্দ্র রায় পরামর্শ না দিয়ে নিজের দোকান থেকে ওষুধ দেন। সেই ওষুধ খেয়ে পেটেই মারা যায় তাদের চার মাসের সন্তান। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় গুরুতর অবস্থায় স্ত্রীকে ভর্তি করা হয় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

হাতুড়ে ডাক্তার পরেশ চন্দ্র রায়ের শাস্তির দাবিতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপার, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে বুধবার (১৭ এপ্রিল) তিনি লিখিত অভিযোগ করেন।
ফারাজুল ইসলামের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের মহিষমারী কামারপাড়া গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল ফারাজুলের স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর তার চিকিৎসার জন্য দুওসুও ইউনিয়নের মিলটেক বাজারের হাতুড়ে ডাক্তার পরেশ চন্দ্র রায়ের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন তার স্বামী। কিন্তু তাকে পরামর্শ না দিয়ে স্ত্রীর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। ওই ওষুধ খেয়ে গর্ভে থাকা সন্তান মারা যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণে স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তার স্ত্রী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় লাবনী আক্তারের শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে।

রোগীর অবস্থা দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মুনিরুজ্জামান লিমন জানান, গর্ভে থাকা সন্তান নষ্ট হওয়ার ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

ফারজুল জানান, হাতুড়ে ডাক্তার জেনে বুঝেই আমার প্রথম সন্তান নষ্ট করেছে। আমি এর বিচার চাই। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, আমার সন্তান নষ্টের বিষয়ে কোথাও যেন অভিযোগ না করি সে জন্য আমাকে মোবাইল ফোনে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে।

অভিযুক্ত পরেশ চন্দ্র রায় জানান, কিছু ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এ সমস্ত অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে। আমি আমার দোকান থেকে ওষুধ দেইনি। বালিয়াডাঙ্গী বাজারের একটি দোকান থেকে তার স্বামী ওষুধ কিনে খাইয়েছে। ওই সময় আমি সেখান উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তিনি ওষুধের দোকান করলেও কোনো ড্রাগ লাইসেন্স নেই বলে স্বীকার করেন।

দুওসুও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, আমি যতদুর জানি ওই হাতুড়ে ডাক্তারের কোনো সনদপত্র নেই। তাছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই তিনি ওষুধের দোকান দিয়ে বসেছেন। তার ওষুধ খেয়ে আলোচিত এই শ্রমিকের স্ত্রীর মত অন্য কোনো রোগী যাতে আর বিপদে না পড়ে এটা আমিও চাই। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি কামনা করছি।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মোসাব্বেরুল হক জানান, পরেশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ওই গৃহবধুর স্বামী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। তবে বুধবার রাতে ডাক্তারের লোকজন ওই গৃহবধুকে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় থানা পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত থাকায় তারা ফিরে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কাসেম জানান, হাসপাতালে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবে না। রোগীর চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসসি/