• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৯, ১২:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১০, ২০১৯, ০১:০১ পিএম

২০১৯ বিশ্বকাপ 

বাংলাদেশকে নিয়ে আইসিসির রিপোর্ট কার্ড 

বাংলাদেশকে নিয়ে আইসিসির রিপোর্ট কার্ড 
এবারের বিশ্বকাপ বহু কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেই মনে করে আইসিসি। ফাইল ফটো

সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অন্তত সেমিফাইনাল খেলতে পারবে বাংলাদেশ দল। লীগ পর্বের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ শেষ চারে যাওয়ার আশা টিকিয়ে রেখেছিল টাইগাররা। যদিও ভারতের কাছে হারের পর সকল সম্ভাবনার দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়।

শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেও হারের স্বাদ পাওয়ায় এক ধাক্কায় বাংলাদেশ পয়েন্ট টেবিলের অনেক নিচে নেমে যায়। যদিও ১০ দলের মধ্যে অষ্টম স্থানে থেকে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছে বললে বাংলাদেশের ২০১৯ বিশ্বকাপ অভিযানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না। এবারের বিশ্বকাপ বহু কারণে বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করে।

রিপোর্ট কার্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে- দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করে দিয়েছে, বিশ্ব ক্রিকেটের মহাসাগরে তারা আর চুনোপুঁটি দল নয়। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলে এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নিতে পারলে ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভাগ্য অন্যরকম হতে পারতো। ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও তারা লড়াই করে হেরেছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম সারির দলগুলোর সঙ্গে তাদের ব্যবধান বোঝা গেছে। তবে বিশ্বকাপ ভবিষ্যতের তারকাদের চিনে নেয়ার মঞ্চও বটে। সেদিক থেকে দেখলে এবারের টুর্নামেন্ট থেকে অনেক কিছু পেয়েছে বাংলাদেশ।   

বাংলাদেশ দলের যা চোখে পড়েছে

আইসিসি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে- গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই সাকিব আল হাসান। এই বিশ্বকাপ প্রকৃত অর্থেই সাকিবের বিশ্বকাপ। ঈর্ষণীয় ধারাবাহিকতার পরিচয় দিয়ে ৮ ম্যাচের ৭টিতে তিনি পঞ্চাশের উপর রান করেছেন। তার সর্বনিম্ন স্কোর ৪১। বল হাতেও কম সফল নন, ৮ ম্যাচে পেয়েছেন ১১টা উইকেট। গুরুত্বপূর্ণ সব উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন একাধিকবার। বিশ্বের একনম্বর অলরাউন্ডার সাকিব নিঃসন্দেহে ২০১৯ বিশ্বকাপের প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট খেতাবের একজন জোরালো দাবিদার। 

তবে বাংলাদেশ এবার পুরোপুরি সাকিব-নির্ভর ছিল বললে অন্যায় হবে। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমও ৫০'র উপর গড়ে ধারাবাহিকভাবে রান পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লিটন দাসের অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

রিপোর্ট কার্ডে আরও বলা হয়- এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আসল চমক বোধহয় পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি টুর্নামেন্টে দুইবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন, মোট উইকেটের সংখ্যা ২০। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন তাকে যথার্থ সঙ্গ দিয়ে গেছেন এবং ফলস্বরূপ পেয়েছেন ১৩ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ প্রায় প্রতি ম্যাচে বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের রান নেয়ার চেষ্টায় পানি ঢেলে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় দিক মুস্তাফিজুরের বয়স মাত্র ২৩ বছর আর বাকিদের আরও কম। ২০১৯ বিশ্বকাপে আগামীদিনের বোলারদের পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের ভক্তদের কথা আলাদাভাবে স্মরণ করে আইসিসির রিপোর্ট কার্ড বলছে- গোটা টুর্নামেন্টে স্টেডিয়ামের ভেতরে এবং বাইরে তারা দলকে যেভাবে অবিরাম উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন, তা চোখে পড়ার মতো ছিল।

টাইগার সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কথা বিশেষভাবেই উল্লেখ করেছে আইসিসি। ফাইল ফটো  

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যা করণীয়

বোলিং ডিপার্টমেন্টে বেশকিছু নতুন তারকার উদয় হলেও ব্যাটিংয়ে ঘুরেফিরে সেই তিন-চারজনের উপর নির্ভরশীলতা এখনো থেকেই গেছে। বাংলাদেশের চার প্রধান ব্যাটসম্যান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তামিম ইকবাল প্রত্যেকেরই বয়স তিরিশ পেরিয়ে গেছে। পরের বিশ্বকাপে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হয়তো সেরা ফর্মে থাকবেন না। তাই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন ব্যাটসম্যান তুলে আনার দিকে টিম ম্যানেজমেন্টের কর্তাদের নজর দিতে হবে।

দলকে দৃষ্টান্তসুলভ নেতৃত্ব দিলেও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার শেষ বিশ্বকাপটা ভালো গেল না। মাত্র একটা উইকেট পেয়েছেন গোটা টুর্নামেন্টে। হয়তো জলদি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরও নেবেন। কিন্তু মাশরাফীর পর নেতৃত্বে আসছেন কে? পরবর্তী প্রজন্মের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানই বা কে হবেন? লিটন দাস বা সৌম্য সরকার চাইলে দলের ব্যাটিংয়ের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু তারা  মানসিকভাবে বড় দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর হেড কোচ স্টিভ রোডসকে বিদায় দেয়ার পর নতুন কোচের সন্ধানেও রয়েছে বাংলাদেশ।      

যার দিকে রাখতে বলা হয়েছে চোখ 

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা মুস্তাফিজুর রহমানকে এখন আর উঠতি তারকা বলা যাবে না ঠিকই, তবে এই কয়েক বছরে তিনি অনেক পরিণত হয়েছেন। সীমের ব্যবহারে বৈচিত্র্যের জন্য কেউ কেউ তাকে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার সিডনি বার্নসের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। ইনজুরির কারণে মাঝে মধ্যেই তার খেলায় বাধা পড়েছে। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে ২০ উইকেট নিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে ক্ষমতায় তিনি বড় দলের পেসারদের থেকে কোনো অংশে কম যান না। এখন তিনি দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, তাই বাড়তি কিছু প্রত্যাশাও তার কাছ থেকে থাকবে।   

আরআইএস 

আরও পড়ুন