• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০১৯, ১০:০০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২২, ২০১৯, ১০:০৮ এএম

এখানে পৃথিবী বদলে দিতে আসিনি : ডোমিঙ্গো

এখানে পৃথিবী বদলে দিতে আসিনি : ডোমিঙ্গো
মিরপুরের জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রফুল্ল ছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। ফটো : বিসিবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নতুন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তার দায়িত্বভার নেয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, এখানে পৃথিবী বদলে দিতে আসিনি। উপমহাদেশে সব সময়ই ক্রিকেট খেলা হয়। আমরা আশা করি না বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাদের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। বরং আমাদের মানিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে। প্রক্রিয়া তৈরির উপায় আমাদের বের করতে হবে। এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।

বুধবার (২১ আগস্ট) মিরপুরের জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন এবং বিপুল পরিমাণ সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

ডোমিঙ্গো বলেন, আমি জীবনে এতো রিপোর্টার একসঙ্গে দেখিনি। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার বড় কোনো ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে খুব বেশি হলে ৮-৯ জন রিপোর্টার থাকে। কাল বিমানবন্দরে মনে হয় ১০০ ক্যামেরা ছিল। এতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে গেছি। এই যে বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে এতো আবেগ, এটাই হয়তো আমাকে এখানে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে। 

হেড কোচের পদে ইন্টারভিউ দিতে আসার সময় বিসিবির কাছে কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে ডোমিঙ্গোর দেয়া উপস্থাপনায় মুগ্ধ ছিল বিসিবির কর্তারা। কী ধরনের কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন তিনি? এ প্রসঙ্গে তার সাফ কথা, এটা নিয়ে আগ্রহটা খুবই ভালো। সবাইকেই দেখছি প্রেজেন্টেশনটা নিয়ে কথা বলছে। দেখুন, আমি যেহেতু বিভিন্ন পর্যায়ের দল নিয়ে কাজ করেছি এবং এ নিয়ে অভিজ্ঞতা আছে- যেমন : অনুর্ধ্ব-১৫, অনুর্ধ্ব-১৭, ঘরোয়া ক্রিকেট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সে কারণে আমি মনে করি, ক্রিকেট কোচিয়ের পুরো সিস্টেমটাই আমার জানা আছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৫ বছর হেড কোচের দায়িত্ব পালন করা ডোমিঙ্গো বলেন, আমার প্রথম লক্ষ্য ছেলেদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করা, ওদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা। পরের এক-দুই সপ্তাহে ওদের বোঝার চেষ্টা করব। আমি মনে করি, এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের বিশ্বাস অর্জন করাও হবে একটা লক্ষ্য। এখানে ওরা কিভাবে কাজগুলো করে, আগামী কয়েকদিন আমি তা পর্যবেক্ষণ করবো।

তিনি আরও বলেন, মানুষ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে আমরা যেন প্রতিপক্ষকে নিয়মিত হারাই। এই প্রত্যাশা ও চাপ সম্পর্কে আমি অবগত। আমি সামনের দিকে তাকাচ্ছি। এই মানুষগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। একজন কোচ হিসেবে চাপ উপভোগ করি। পাঁচ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ ছিলাম। সেদিক থেকে আমি বলতে পারি, সেখানেও বিপুল প্রত্যাশা ছিল। সবাই প্রতিপক্ষকে হারাতে চায়। বাংলাদেশেও ব্যাপারটা এরকমই। এই চাপ আর প্রত্যাশার সঙ্গে আমি পরিচিত।

বাজে সময়ে ক্রিকেটারদের সবকিছু থেকে দূরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে টাইগারদের নতুন হেড কোচ বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থকরাও ব্যতিক্রম ছিল না। দলকে আমার এইসবের বাইরে রাখতে হবে। ছেলেদের পরের ম্যাচের দিকে মনোযোগী রাখার চেষ্টা করবো। ওরা যেন বাইরের কথায় এলোমেলো না হয়ে যায়, সেদিকে আমার নজর থাকবে। মূল ব্যাপারটি হলো ক্রিকেটারদের সামলানো, তাদেরকে জানা, কথা বলা। যতটা কঠিন বলা হয়, কাজটা তত কঠিন নয়। এখানে আবেগের মাত্রা বেশি, সেটির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতেই হবে।

রাসেল ডমিঙ্গো বলেন, সিস্টেমটা মূলত জাতীয় দলকে ধারণ করে। কারণ, জাতীয় দলই হচ্ছে আপনার সেরা। আমি শুধু চাই জাতীয় দলের একেবারে নিচের লেভেল থেকে কাজ করতে। আপনি যখন খেলার সুযোগ পাবেন, তখন আপনাকে এই সুযোগটা অবশ্যই নেয়া প্রয়োজন। এটা একজন দু’জনের ক্ষেত্রে নয়, আপনার প্রয়োজন পুরো একটি তরুণ দলকে গড়ে তোলা। তাহলেই আপনি শেষ পর্যন্ত ভালো করতে পারবেন। জাতীয় দল নিয়েই আমার প্রেজেন্টেশনটা ছিল। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, যারা জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি রয়েছে, তাদেরকেও নার্সিং করা প্রয়োজন। তারাই একদিন বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেবে।

তিনি যোগ করেন, আমাদের ধরন, পদ্ধতি এখানকার ক্রিকেট সংগঠক, ক্রিকেটারদের মধ্যে কিভাবে কাজ করে, সেটি বের করতে হবে আমাদেরকেই। এখানকার সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে হলে আমাদেরকেই বদলাতে হবে। আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করায় কিছুটা অভিজ্ঞতা আমার আছে। কাজটা খুব কঠিন নয় (মানিয়ে নেয়া)। এখানকার আবেগের তীব্রতা অবশ্যই আমাদের জন্য নতুন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা এতটা দেখি না। তবে এখানকার সংস্কৃতিতে মানিয়ে নেয়া কঠিন হবে না।

খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রথম পরিচয়পর্বের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বেশকিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম। খুব ভালো লাগলো। তবে সবাই ছিল না। এছাড়া সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে পরিচিত হওয়াটাও আমার জন্য ছিল নতুন এক অভিজ্ঞতা। মারিও (ট্রেনার) কয়েকদিন ধরেই ছেলেদের দেখছেন। সকাল সকাল কয়েকজন ছেলেকে ঘাম ঝরাতে দেখে খুব ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় সেশনে তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারাটাও ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা। 

বাংলাদেশে সপ্তমবারের মতো নিজের উপস্থিতির কথা জানিয়ে প্রোটিয়াদের সাবেক কোচ বলেন, প্রথমবার এসেছিলাম সেই ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে (কোচ হিসেবে)। প্রথম যে ব্যাপারটি আমাকে স্পর্শ করেছে, বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে লোকের যে তীব্র আগ্রহ। আজকে এখানে (সংবাদ সম্মেলন) যেমন দেখা যাচ্ছে।

মিরপুরে নির্ধারিত সময়ের আনেক আগেই পৌঁছে যাওয়া নিয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকান বলেন, সত্যিই আমার দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। কারণ, সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। এরপর রেডি হয়ে যখন আমি রওনা দিলাম, মাত্র ২০ মিনিট লাগলো স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছতে। আমি ধারণা করেছিলাম, অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় তো লাগবেই।

আরআইএস 

আরও পড়ুন