• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ০২:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ০২:৪৯ পিএম

স্টিভেন স্মিথ : ঘৃণাকে ভালবাসায় রূপান্তরিত করা রাজপুত্র

স্টিভেন স্মিথ : ঘৃণাকে ভালবাসায় রূপান্তরিত করা রাজপুত্র
পুরো ক্রিকেট দুনিয়া স্টিভেন স্মিথে বুদ হয়ে আছে। ফটো : রয়টার্স

স্টিভেন পিটার ডেভেরিউক্স স্টিভ স্মিথ। ক্যারিয়ারের শুরুতেই নামের মতো বিশাল সাফল্য আসেনি। মোটামুটি সম্ভাবনাময় এক লেগ স্পিনার হিসেবেই তার যাত্রা শুরু। এরপর ছিটকে যাওয়া জাতীয় দল থেকে। প্রত্যাবর্তনের পর লেগ স্পিনার থেকে পুরোদস্তর ব্যাটসম্যান হয়ে উঠা স্মিথ বিশ্ব ক্রিকেটে দৃপ্ত পদচারণা করে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। 

স্মিথের গল্পটা হতে পারতো এমনই, কিন্তু হয়নি। এই পৃথিবীর সফল মানুষদের গল্পগাথা যদি এতো সামান্যতেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে আর কাব্য লেখা হবে কেমন করে? স্মিথের বেলায়ও তা হয়নি। সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে যাকে মেনে নেন প্রায় সবাই, সেই ব্র্যাডম্যানকে ছুঁয়ে ফেলার দ্বারপ্রান্ত পৌঁছেও পারেন না পৌঁছাতে।

তাতে স্মিথের দোষ কতটা তা নিয়ে তর্ক আছে। বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে দুই সতীর্থ ক্যামরন ব্যানক্রফট আর ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে স্মিথেরও নাম জড়ালো। আইসিসির এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে গিয়ে তা বেড়ে গিয়ে এক বছরের মেয়াদে গিয়ে ঠেকে যায়।

কৃতকর্মের কারণে স্মিথ সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অকপটে চাইলেন ক্ষমা। তাতেও কাজ হয় না। স্মিথের গল্প শেষ হতে পারতো সেখানেও। কিন্তু তিনি তা হতে দেননি। নিষেধাজ্ঞার পর আবারো তার প্রত্যাবর্তন হয় ক্রিকেটে। কিন্তু দর্শকদের দুয়োধ্বনি কমে না। সেটা হোক বিশ্বকাপ কিংবা অ্যাশেজ। ব্রিটিশ দর্শকরা ওয়ার্নার আর স্মিথের উদ্দেশ্যে 'প্রতারক' বলে করতে থাকা চিৎকার কিছুতেই থামাতে নারাজ। সতীর্থ ওয়ার্নার ট্রাউজারের পকেট বের করে প্রমাণের চেষ্টা করেন তিনি নির্দোষ। স্মিথ তাও করেন না। মাঠে এমনভাব করেন, যেন কিছুই হয়নি।

আসলেই তাই, দুয়োধ্বনিতে তার কিছুই হয় না। চুপচাপ নিজের কাজটা করে যেতে নিজের ব্যাটকেই তিনি ব্রহ্মাস্ত্র বানিয়ে বসলেন। যে কারণে অ্যাশেজে সাদা পোষাকে প্রত্যাবর্তনের টেস্টেই করে বসেন সেঞ্চুরি, তাও আবার দুই ইনিংসেই। যার পুরো সময়টা চারদিক থেকে অনবরত ভেসে আসে 'প্রতারক'। স্মিথ তাতে কান দেন না। সেঞ্চুরি করার পর উদযাপনেও দেখান না বাড়তি কোনো প্রতিক্রিয়া। তারপর? স্মিথের প্রতি ইংরেজদের তীব্র ঘৃণা পরিণত হয় সম্মানে। যে কারণে অজি রাজপুত্রকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দী দলের সমর্থকরা। আর পুরো ক্রিকেট দুনিয়া আরও একবার স্টিভেন স্মিথে বুদ হন। তার নিজস্ব ঢংয়ের ব্যাটিংয়ে সবাই মুগ্ধ হন বারবার। 

ঘৃণার আগুন জ্বলেপুড়ে ছারখার করতে চেয়েছিল যেই স্মিথকে। সেই স্মিথ নিজ যোগ্যতাবলে আদায় করেছেন ভালোবাসা। কোনোরকম কথায় নয়, নিজের ব্যাটিংয়ের জাদু দেখিয়ে। স্মিথরা তো এমনই হন, ঘৃণাকে রূপ দেন ভালোবাসায়। যোগান দেন নতুন নতুন সব গল্প লেখার রসদ। আর ঘৃণার আগুনে পানি ঢেলে আদায় করেন ভালোবাসা। 

এমএইচবি/আরআইএস 
 

আরও পড়ুন