• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৪, ২০২০, ১০:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৪, ২০২০, ১০:৩১ পিএম

চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ

নব্য জেএমবির তিন সদস্য গ্রেফতার

নব্য জেএমবির তিন সদস্য গ্রেফতার

চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর সাথে জড়িত নব্য জেএমবি’র তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।এদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়।

সোমবার (৪ মে) নব্য জেএমবির তিন সদস্যকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, গ্রেফতার সাইফুল্লাহ সাতকানিয়ার দক্ষিণ ঢেমশা হাদুর পাড়ার ইছহাক মিয়ার ছেলে, এমরান সাতকানিয়ার দক্ষিণ মরফলা আদম উল্লাহর মহির আহমদের ছেলে ও আবু ছালেহ সাতকানিয়ার উত্তর ঢেমশা মাইজপাড়া আলী বকসুর বাড়ির মহরম আলীর ছেলে। এদের মধ্যে সাইফুল্লাহ নগরীর চকবাজার এলাকার নূরা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী, এমরান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম সেমিস্টার এবং আবু ছালেহ একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেক্সটাইল অনুষদের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে পুলিশ বক্সে হামলার সাথে নব্য জেএমবির ৭ সদস্যের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। তবে তাদের গ্রুপটিতে ১২ জনের মতো সদস্য রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেন।

আফতাব হোসেন জানান, রোববার (৩ মে) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের গণি কলোনীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে একটি টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু বিস্ফোরক সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহ ও এমরান জানায়, পলাতক সেলিম উদ্দিন, জহির ও আকিবের মাধ্যমে তারা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবিতে যুক্ত হয়েছে। গ্রেপ্তার আবু ছালেহ জানায়, সাইফুল্লাহ তাকে নব্য জেএমবিতে যুক্ত করে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সেলিম, সাদেকসহ আরও তিনজন আইইডি (বিস্ফোরক) নিয়ে এমরানের বাসায় যায়। জুমার নামাজের পর কয়েক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে তারা বোমা বিস্ফোরণের জন্য ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি নির্ধারণ করে। সেলিম আইইডি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কিভাবে বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে সেটি এমরানকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং রিমোট কন্ট্রোলার প্রদান করে।

অতিরিক্ত উপকমিশনার পলাশ কান্তি নাথ আরও বলেন, সেলিমের নির্দেশে পলাতক আবু সাদেক আইইডিটি সবার অগোচরে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ভেতর টেবিলের নিচে রেখে এমরানকে ফোনে জানায়। এমরান আইইডিটি বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে রিমোট কন্ট্রোলারটি আপন নিবাসের সামনে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। পরে এমরানের সহায়তায় সাইফুল্লাহ রিমোট কন্ট্রোলারটি ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দক্ষিণে যাত্রীর ছাউনির পাশে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।

বিস্ফোরণের পর এমরান ছাড়া অন্যরা আত্মগোপনে চলে যান। পরে সাইফুল ডিসি রোডের গণি কলোনী এলাকার ওই বাসা ভাড়া নেন। সাধারণ ছুটিতে সবাই যার যার বাড়িতে চলে যায়। পরে জহির নামে তাদের এক সদস্য ফোন করে বাড়ি থেকে সরে যেতে বললে সাইফুল, এমরান, আবু সালেহ সেলিমের দেওয়া ব্যাগ নিয়ে ডিসি রোডের বাসায় এসে আত্মগোপন করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা পলাশ কান্তি নাথ বলেন, গ্রেফতার নব্য জেএমবির সদস্যরা ইউটিউবে রাজ্জাক নামে একজনের বক্তব্য শুনে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হয়। একই নিয়মে নামাজ পড়ার সময় তারা নিজেদের একই মতাদর্শ সেটা জানতে পারেন। পরে তারা এক এক করে সংঘবদ্ধ হন।

নব্য জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর চট্টগ্রাম নগরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, পুলিশ বক্সে হামলার সঙ্গে জড়িত ৩ জনই নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানতে পেরেছি। তাদের অন্য কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর পাঁচলাইশ ধানাধীন ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের পর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পুলিশ বক্সে রেখে যাওয়া বিস্ফোরকে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এ ঘটনায় সার্জেন্ট আরাফাত হোসেন ভুঁইয়া, এএসআই আতিকসহ ৫ জন আহত হন।

এসএমএম

আরও পড়ুন