• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০১৯, ০৭:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৩, ২০১৯, ০৩:০৭ এএম

এসএম হলে ডাকসু ভিপি নুর অবরুদ্ধ, লাঞ্ছনার অভিযোগ

এসএম হলে ডাকসু ভিপি নুর অবরুদ্ধ, লাঞ্ছনার অভিযোগ
ডাকসুর ভিপি নূরুল হক নুর-ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল সংসদের স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনার বিচার চেয়ে প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দিতে এসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন।

হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর ডিম ছুঁড়ে হামলা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার পর নুরকে হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আটকে রাখেন তারা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের পর সন্ধ্যায় এসএম হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে এলে এমন ঘটনা ঘটে।

হল সূত্র জানায়, সোমবার (১ এপ্রিল) দিবাগত রাতে হল সংসদের স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয় হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তার কপালের ডান পাশ থেকে ডান কান পর্যন্ত ৩২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে নুরের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে সন্ধ্যার দিকে তারা এসএম হলে যান এবং প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে যান। এ সময় তাদের ওপর ডিম ছুঁড়ে হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে হল ছাত্রলীগ নেতা সায়েমের নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রীদের উত্যক্ত করারও অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসএম হলে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে তারা ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের দিকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। বিভিন্নভাবে অন্যরা সরে গেলেও ভিপি নুরসহ কয়েকজন প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় হলে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন ওই হলে অবরুদ্ধ ছিলেন। সাতটার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার তাদের নিয়ে বের হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পেছন পেছন গিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আবারও নুর ও অন্যান্যদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করে হামলা করা হয়। পরে নুরসহ সকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুরসহ অন্যরা- ছবি : জাগরণ

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে  সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আমাদের সবাইকে আটকে রেখেছিলো ছাত্রলীগ। হল গেইটে তারা মহড়া দেয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে বের হওয়ার পর আবারও তারা আমাদের ওপর হামলা করে।

এ ব্যাপারে ডাকসুর জিএস প্রার্থী ও ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, ফরিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরাসহ ডাকসুর ভিপি নুরকে সাথে নিয়ে এসএম হলে অভিযোগ দিতে গেলে আমাদের ডিম ছুঁড়ে হামলা করে এসএম হল ছাত্রলীগ। তারা নুরকে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আটকে রাখে। এরপর বের হতে গেলে আবারও সবার ওপর হামলা করা হয়।

এর আগে বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভিপি নুর সংহতি জানাতে এসে তিনি এই দাবি জানান। সেখানে তিনি তিন দিনের মধ্যে হামলাকারীদের বহিষ্কারের দাবি জানান।

সেখানে নুর বলেন, এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তিনদিনের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে তাদের বহিষ্কার করতে হবে। যদি বহিষ্কার করা না হয় তিনদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার্থীরা অনেক নির্যাতিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটা অভিযোগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ সময় তিনি রাজনীতি বিবেচনার পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে হলগুলোতে সিট বন্টনের দাবি জানান।

মানববন্ধনে ডাকসুর স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তি খান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, সোহরাব হাসান প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে এসএম হলের দিকে যায়।

প্রক্টর বরাবর অভিযোগ

ফরিদ হাসানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে অরণি সেমন্তি খানসহ কয়েকজন তার পক্ষে এ অভিযোগ দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘‘সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসএম হলের ওয়াসিফ হাসান পিয়াসের নেতৃত্বে পাঁচজন হলের মেস ঐতিহ্য ডাইনিং রুমে নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে আহত করে হলের বাইরে ফেলে রাখে। বর্তমানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন।’’

এ ঘটনায় তিনি ‘অপরাধী-সন্ত্রাসীদের’ যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। এতে হামলাকারী পাঁচজনের নাম সংযুক্ত করেছেন তিনি। তারা হলেন- ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়াসিফ হাসান পিয়াস, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ফারসি বিভাগের মুজাহিদ, সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল্লাহ সায়েম এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সাব্বির। তিনিও সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা সবাই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

এমআইআর/এসএমএম