• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০১৯, ০৩:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৮, ২০১৯, ০৩:৪০ পিএম

পাবনার রায় ‘ফরমায়েশি’ : বিএনপি

পাবনার রায় ‘ফরমায়েশি’ : বিএনপি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি চালানোর মামলার রায় ‘ফরমায়েশি’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব ‍মির্জা ফখরুল আলমগীর। 

তিনি বলেন, পাবনার ইশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের ওপর হামলা সংক্রান্ত মামলায় নিম্ন আদালতে সম্প্রতি যে রায় দেয়া হয়েছে তা বিচার ব্যবস্থায় চিত্র ফুটে উঠেছে। এই মামলার রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তি প্রদানের আদেশ সমগ্র জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুদ্ধ করেছে। 

সোমবার (০৮ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে দেশে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব  বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে একটি ফ্যাসিবাদি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের এই ভয়াবহ প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। এই বিচার বিভাগ সরকার ধারা নিয়ন্ত্রিত। আর এটা একটা ফরমায়েশি রায়। তিনি বলেন, ইশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ রায়ের মধ্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সকল কর্মকর্তাকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বৎসর পর অভিযোগ পত্র দিয়ে ২৫ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করে যে, এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবসময়ই প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। ইশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সব কর্মকর্তাকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বছর পর অভিযোগ পত্র দিয়ে ২৫ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করেছে যে, এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। খায়রুল হকের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার পূণ:প্রবর্তন-একে একে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধানগুলোকে বাদ দিয়ে সংশোধনী এনে একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মারাত্মক প্রক্রিয়া তারা সম্পন্ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি বিচার ব্যবস্থাকে আজ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, নিম্ন আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ন্যায় বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ-দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার লক্ষ্যে জনগণের সকল আশা-আকাঙ্খাকে পদদলিত করে করে একটি ফ্যাসিবাদি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে, এই ভয়াবহ প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীর ঘটনায় কারো মৃত্যু ঘটে নাই। এরপরও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ! এ ধরণের রায় ও বিচার এখানে যারা আমরা আছি, তারা কখনও শুনি নাই এবং জানিও না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল,সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবদিন মেজবাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল প্রমুখ।

টিএস/বিএস