• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০১৯, ১২:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৩০, ২০১৯, ০১:০৪ পিএম

জাতীয় ক্রিকেটার শামীমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা মিথ্যা মামলায় কারাগারে

জাতীয় ক্রিকেটার শামীমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা মিথ্যা মামলায় কারাগারে
নিজের বাবার গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন শামীমা সুলতানা।

প্রতিবেশী এক পুলিশ পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শামীমা সুলতানার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সলেমান শেখ (৭৪) এখন বিনা দোষে জেলের ঘানি টানছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শামীমা বর্তমানে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন। 

বৃদ্ধ বাবার জেলে যাওয়ার খবরে তিনি সেখান থেকে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক পেজে পোষ্ট দিয়ে লিখেছেন- ‘কী হবে দেশের জন্য ক্রিকেট খেলে? যদি আমার মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ বাবাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়?’ 

এ ধরনের পোষ্ট দেয়ার পর বিষয়টির তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকে যাওয়ার মতো সব তথ্য। ৭৪ বছরের বৃদ্ধ সলেমান শেখকে মামলায় ৫৮ বছর বয়স দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা সাজিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশেষ মুহূর্তে শামীমা সুলতানা 

সলেমান শেখের ছোট ভাই মহম্মদ আলী অভিযোগ করেন- ক্রিকেটার শামীমার বাবা নিজ গ্রামে গরুর খামারের পাশাপাশি গরুর খাবারের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তিনি প্রতিবেশী ও ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মফিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের (৪৫) কাছে বাকিতে কিছু গরুর খাবার বিক্রি করেন। 

ওই টাকা দিতে আনোয়ারা বেগম টালবাহানা করলে কয়েকদিন আগে তিনি আনোয়ারার কাছে ওই টাকা চাইতে যান। এ সময় আনোয়ারার ছেলে এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত আশিকুর রহমান তাকে মারপিট করে। বৃদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত তোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী আশিকুর রহমানকেও উল্টো মারপিট করে। 

এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ আনোয়ারা বেগম শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ানের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে নানা রকম মিথ্যাচার করেন। তার স্বামী পুলিশের সিপাহী মফিদুল ইসলামও পুলিশ সুপারের কাছে মিথ্যাচার করেন। এক তরফা মিথ্যাচার শুনেই পুলিশ সুপার বৃদ্ধ সলেমান শেখের বিরুদ্ধে মামলা নিতে শ্রীপুর থানাকে নির্দেশ দেন। এরপর মামলা নিয়ে কোন তদন্ত ছাড়াই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান শেখসহ তার ছোটভাই আলেমান শেখ, ছেলে নুরুল শেখ, আলেমান শেখের স্ত্রী আনোয়ারা, সোহান শেখ, মেহেদী শেখ, আব্দুর রহমান ও আনিস শেখের বিরুদ্ধে মামলা দেন। 

ওইদিনই শ্রীপুর থানায় নারী শিশু নির্যাতন ও হামলা, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগের মিথ্যা মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মামলায় তিনি বৃদ্ধ সলেমান শেখের বয়স ৭৪ বছরের এর পরিবর্তে ৫৮ বছর দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, উত্যাক্ত করাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে মারপিটের মিথ্যা অভিযোগ আনেন। দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ কোন তদন্ত ছাড়াই বৃদ্ধ সলেমান শেখকে তড়িঘড়িভাবে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। 

শ্রীপুর থানায় সলেমান শেখের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নথি 

ওই গ্রামের বাসিন্দা সিফাতুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- একজন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা মামলা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

কৃতি ক্রিকেটার শামীমা সুলতানা অভিযোগ করেন, প্রতিবেশী পুলিশ সদস্যের ওই পরিবারটি আমার বাবাসহ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে বয়স কম দেখিয়ে তারা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটাচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও হেনস্তা করছে। 

তিনি বলেন, পুলিশ সুপারকে আমি ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে কোনো তদন্ত না করে শুধুমাত্র ওই পুলিশ পরিবারের মিথ্যাচারে ভুলে গিয়ে আমার বাবাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শামীমা সুলতানা

শ্রীপুর থানার অফিসার ইনজার্জ মাহবুবুর রহমান জানান- ভিকটিমের পরিবার পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করলে তিনি আমাকে মামলা নিয়ে আসামি গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। আমি সে মোতাবেক আসামি গ্রেপ্তার করে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছি।

মোবাইল ফোনে মামলার বাদী আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সলেমান শেখ এলাকায় একজন দুশ্চরিত্র লোক হিসেবে চিহ্নিত। আমার স্বামী তো বলেছিল এক মার্ডার করে ফেলা উচিৎ। মাত্র ১২৮ টাকার জন্য সে আমার সাথে খুব খারাপ খারাপ কথা বলেছে।’ 

শামীমা সুলতানার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সলেমান শেখের জেলে যাওয়া প্রসঙ্গে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।  

আরআইএস  
 

আরও পড়ুন