• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০১৯, ০১:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০১৯, ০১:৪৩ পিএম

স্মিথের বদলি নেমেই লাবুসচাগনের ইতিহাস, রক্ষা পেল অস্ট্রেলিয়া 

স্মিথের বদলি নেমেই লাবুসচাগনের ইতিহাস, রক্ষা পেল অস্ট্রেলিয়া 
স্টিভেন স্মিথের বদলি নামা মার্নাস লাবুসচাগনের হেলমেটেও আঘাত হেনেছিল বল। যদিও বড় কোনো বিপদ ঘটেনি। ফটো : গেটি

লর্ডসে অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনের রোমাঞ্চকর শেষের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংল্যান্ড শিবিরে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন বেন স্টোকস। তার অপরাজিত সেঞ্চুরির সুবাদে নিরাপদ লিড পায় স্বাগতিকরা। আর বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে কাঁপন ধরিয়ে দেন জোফরা আর্চার এবং জ্যাক লিচ। আর তাতেই রোমাঞ্চ ছড়াতে শুরু করে লর্ডস টেস্ট।

তবে নতুন নিয়মের সাহায্য নিয়ে স্টিভেন স্মিথের ইনজুরির কারণে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে প্রথমবারের মতো তার বদলি হিসেবে নামা মার্নাস লাবুসচাগনের ধৈর্যশীল ব্যাটিং দৃঢ়তায় টেস্ট ড্র করেই মাঠ ছাড়তে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। 

অতি সম্প্রতি আইসিসি ম্যাচে কোনো ক্রিকেটার গুরুতর আঘাত পেলে সেটির গুরুত্ব বুঝে খেলোয়াড় বদলের নিয়ম চালু করেছে। যদিও বললি খেলোয়াড়কে ইনজুরিতে পড়া খেলোয়াড়ের মতোই যতটা সম্ভব একই ধরনের ক্রিকেটার হতে হবে। ইনজুরি কতটা গুরুতর তা নির্ণয় করে এবং একই ধরনের বিকল্প ক্রিকেটার স্কোয়াডে আছেন কি না- এ সকল বিষয় বিবেচনা করে বদলির অনুমতি ম্যাচ রেফারি এখন থেকে দিতে পারবেন। 

প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সময় জোফরা আর্চারের ছোড়া বাউন্সার সরাসরি স্মিথের বাঁ কানের নিচে আঘাত হানে। স্মিথ তাৎক্ষনিকভাবে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় অস্ট্রেলিয়া দলের ফিজিও রিচার্ড শ মাঠে ছুটে গিয়ে স্মিথের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দেন। স্মিথ ব্যক্তিগত ৮০ রানের মাথায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। মাত্র ৯ ওভার পরই পিটার সিডল আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো ক্রিজে নামেন স্মিথ, প্রমাণ দেন স্পিরিট অব ক্রিকেটের। ৯২ রান করে তিনি ক্রিস ওকসের বল ছেড়ে দিতে গিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হন। 

কিন্তু চতুর্থ দিনের খেলা শেষে স্মিথের শারীরিক অবস্থার আবারো অবনতি হয়। স্মিথের কনকাশনের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর পঞ্চম দিন শুরুর আগে তার অবস্থা বুঝে অস্ট্রেলিয়াকে বদলি নামানোর সুযোগ দেন ম্যাচ রেফারি। ফলে একাদশে না থাকা সত্ত্বেও আইসিসির নতুন নিয়মের (কনকাশন সাব) বদৌলতে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লাবুসচাগনের অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে যান। 

রোববার (১৮ আগস্ট) টেস্টের পঞ্চম দিন ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে ৯৬ রান নিয়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে। তাদের লিড ছিল ১০৪ রানের এবং হাতে অবশিষ্ট ছিল ৬ উইকেট।

জস বাটলারকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৯০ রানের জুটি গড়ে শুরুর চাপ ভালোভাবেই সামলে নিতে থাকেন বেন স্টোকস। ইংলিশ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান  বাটলার ১০৮ বলে ৩১ রানের মাটি কামড়ানো ইনিংস খেলার পর প্যাট কামিন্সের বলে জশ হ্যাজেলউডের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নিলে এই জুটি ভাঙে। 

এরপর স্টোকসকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে জনি ব্যারিস্টো ষষ্ঠ উইকেটে আরও ৯৭ রান যোগ করেন। এ সময় যখন ইংল্যান্ডের স্কোর ৫ উইকেটে ২৫৮, তখনই জো রুট ইনিংস ঘোষণা করেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের জন্য ২৬৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেন। তখনো খেলা শেষ হতে বাকি ছিল সম্ভাব্য ৪৮ ওভার। 

স্টোকস সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ১৬৫ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কার মারে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ব্যারিস্টো অপরাজিত থাকেন ৩০ রানে। 

অজি বোলারদের পক্ষে প্যাট কামিন্স ৩টি এবং পিটার সিডল ২টি উইকেট দখল করেন।

চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই জোফরা আর্চারের তপের মুখে পড়ে। ডেভিড ওয়ার্নার (৫) এবং উসমান খাজার (২) উইকেট তুলে নিয়ে আর্চার টেস্ট জমিয়ে তোলার আভাস দেন। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে (১৬) তুলে নেন জ্যাক লিচ। আর তাতে জয়ের আশা দেখতে থাকে ইংলিশরা। 

এরপরই অজিদের বিপর্যয়ের মধ্যে কনকাশন সাব হিসেবে খেলার সুযোগ পাওয়া লাবুসচাগনে ব্যাট করতে নামেন এবং ট্রাভিস হেডের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়তে থাকেন। চতুর্থ উইকেটে ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটি গড়ে দলের বিপর্যয় কাটাতে সাহায্য করেন লাবুসচাগনে। ৫৯ করে তিনি লিচের শিকার হলে এই জুটি ভাঙে। 

লিচের বলে লাবুসচাগনে ক্যাচ জো রুট আসলেই ক্যাচটি ধরেছিলেন কি না, তা নিয়ে নিয়ে অবশ্য সন্দেহ ছিল। বল রুটের হাতে জমা পড়ার আগে মাটি স্পর্শ করেছিল কি না, তা টিভি আম্পায়ার বারবার দেখেও নিশ্চিত হতে পারেননি। ফিল্ড আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল ছিল আউট হওয়ায় টিভি আম্পায়ার তাকেই অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। তার প্রতিক্রিয়ায় লাবুসচাগনে মাঠ ছাড়ার সময় রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। 

এরপর দ্রুত আরও দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। লিচ ফিরিয়ে দেন ম্যাথু ওয়েডকে। আর্চারের বলে জো ডেনলি অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে ফেরান টিম পেইনকে। 
আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে অজি ব্যাটসম্যানদের ঘিরে ফিল্ডিং সাজিয়ে তাদের মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখেন জো রুট। 

তবে ট্রাভিস হেড এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন। ৯০ বল খেলে ৪২ রানে তিনি অপরাজিত থাকেন। কামিন্স মাত্র ১ রান করলেও ১৭ বল মোকাবেলা করে দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে সময় পার করে দেয়ায় ভূমিকা পালন করেন। তাতে ক্যাঙ্গারুদের অলআউট করার জন্য ইংল্যান্ডের হাতে পর্যাপ্ত ওভারও ছিল না। তাই ড্র নিয়েই দুই দল শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ে। অস্ট্রেলিয়ার তখন স্কোর ৬ উইকেটে ১৫৪।

ইংল্যান্ডের হয়ে জোফরা আর্চার এবং জ্যাক লিচ ৩টি করে উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করার জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন বেন স্টোকস। 

আরআইএস 

আরও পড়ুন