• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ০২:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ০৪:০৬ পিএম

জামাল ভূঁইয়া : বাংলাদেশের ফুটবলের দিনবদলের নায়ক 

জামাল ভূঁইয়া : বাংলাদেশের ফুটবলের দিনবদলের নায়ক 
দেশের ফুটবলকে ফিনিক্স পাখির মতো জাগিয়ে তোলা জামাল ভূঁইয়া। ছবি : সংগৃহীত

ডুবতে বসা ফুটবলে নিভু নিভু করে জ্বলে ওঠে আশার প্রদীপ। সেটা জ্বালিয়ে রাখেন কে? জামাল ভূঁইয়া। স্ট্রাইকারকে বল পাঠাতে হবে? ডিফেন্স আর মিডফিল্ডের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে? কিংবা হয়ে যেতে হবে পুরোদস্তুর ডিফেন্ডার? অথবা দেশের জন্য দেখাতে হবে সর্বোচ্চ নিবেদন? সবকিছুতেই তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে।

ফুটবল পায়ে তার যে দক্ষতা, বাংলাদেশের ফুটবলের প্রেক্ষাপটে সেটা বিস্ময় উপহার দেয় যে কাউকে। ভুটানের কাছে হারের পর বাংলাদেশের ফুটবল যে এপিটাপ নির্মাণের শঙ্কায় ভুগছিল, তিনি তা হতে দেননি। স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার জন্য করেছেন পরিশ্রম। এখন আবার জাগিয়ে তুলেছেন ফুটবলকে, ভর্তি করেছেন খাঁ খাঁ করা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারি।

ডেনমার্কের নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি ছেড়ে নেমেছেন ফুটবল পায়ে। বাবা-মায়ের ডাক্তার কিংবা আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা ছাপিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখেছেন।

বাংলাদেশের ফুটবলকে বদলে দেয়া এই ফুটবলার আগে বদলেছেন নিজেকে। ডেনমার্কের নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি ছেড়ে নেমেছেন ফুটবল পায়ে। বাবা-মায়ের ডাক্তার কিংবা আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা ছাপিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখেছেন।

সেই স্বপ্ন পূরণ করতে কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে জামালের। গল্পটা অনেকেরই অজানা। ডেনমার্কেই অবশ্য থেমে যেতে পারতো বাংলাদেশ অধিনায়কের জীবন। ২০০৭ সালের কোনো এক শুক্রবার স্কুল শেষে বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন ফুটবল খেলতে। হঠাৎই দুই ব্যক্তির তর্কাতর্কির মাঝে শুরু হয় গোলাগুলি। চারটি গুলি বিদ্ধ করে জামালের শরীরও। সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো জামালের জীবন, সৃষ্টিকর্তা তা হতে দেননি। কারণ তাকে দিয়েই যে বাংলাদেশের ফুটবল বদলের চিত্রনাট্য লিখে রেখেছিলেন তিনি। 

২০১১ সালে প্রথমবার আসেন বাংলাদেশে ট্রায়াল দিতে, হয়েছিলেন ব্যর্থ। অনেকেই ভেবেছিলেন সেখানেই শেষ জামালের বাংলাদেশ অধ্যায়। কিন্তু যেই লাল-সবুজ জার্সির জন্য এতো আকাঙ্খা, সেই স্বপ্ন কি শেষ হয়ে যাবে এতো দ্রুত? নিয়তি নিষ্ঠুর হয়নি। জামাল আবার ফিরে এসেছেন, পরীক্ষা দিয়েছেন, জাতীয় দলে নামও লিখিয়েছেন। এরপর পেয়েছেন প্রশংসা, কুড়িয়েছেন সাফল্যও।

২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন জামাল ভূঁইয়া। এরপর দেখেছেন মুদ্রার উল্টো পিঠও। ফর্ম আর চোটের সঙ্গে লড়াইয়ের পর পার করেছেন কঠিন সময়। ২০১৬ সালে দলের দায়িত্ব নেন বেলজিয়ান টম সেইন্টফিট। তার দলে ছিলেন উপেক্ষিত।

ওই বছর ভুটানের সঙ্গে ৩-১ গোলে হারের ট্র্যাজেডিতে ১৭ মাসের নির্বাসনে যায় বাংলাদেশের ফুটবল। সেই ম্যাচের প্রাথমিক দলেও ছিল না জামালের নাম। এরপর অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড উঠে জামালের হাতে। ফিনিক্স পাখির মতো জাগিয়ে তোলেন দেশের ফুটবল। ২০১৮ সালে এশিয়ান কাপে আগামী বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতারকে হারিয়ে নকআউট পর্বে পৌঁছায় বাংলাদেশ। ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে এই জামালের পাঁ থেকেই।

২০১৮ সালে এশিয়ান কাপে আগামী বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতারকে হারিয়ে নকআউট পর্বে পৌঁছায় বাংলাদেশ। ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে এই জামালের পাঁ থেকেই।

ভুটান ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের খেলা আট ম্যাচের চারটিতে জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এক ড্রয়ের সঙ্গে আছে তিন হার। যার একটি আবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলে। যে ম্যাচটিকে অনেকেই দেখছেন দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে।

বাংলাদেশের এই ফুটবল উত্থানের পেছনে ভূমিকা থাকতে পারে অনেকের, তবে মূল চালিকাশক্তিটা যে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তাতে সন্দেহ নেই বিন্দুমাত্র। ঠিকঠাক বাংলা বলতে না পারায় জামালের মধ্যে যে অন্তর্মুখীতা, তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না মাঠে। দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে এতটুকুও কার্পণ্য করেন না। 

ট্রাফিক জ্যামের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেও বাংলাদেশে এখনও এটাই তার সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ। জামাল যদি এভাবে মানিয়ে আর চালিয়ে যেতে থাকেন, বাংলাদেশের মানুষও নিশ্চয়ই আবারও ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। 

এমএইচবি/আরআইএস 

আরও পড়ুন