• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০১৯, ০৩:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২, ২০১৯, ০৪:৪৮ পিএম

সাকিব যদি না থাকেন, তবে...  

সাকিব যদি না থাকেন, তবে...  
সাকিবের চোখে অনুতাপের ছায়া? ছবি : সংগৃহীত

এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা— প্রবাদের পূর্ণ প্রতিফলন। স্তব্ধ ক্রিকেটাঙ্গন, শঙ্কিত পুরো দেশ। কোথা থেকে কী হচ্ছে, বুঝার উপায় নেই বিন্দুমাত্র। গুঞ্জনে শুরু শুক্রবার থেকে, সেদিন দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দেন নি টেস্ট ‍ও টি-টুয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। 

শোনা গেল সাকিব আল হাসান অসুস্থ। সর্দি আর জ্বরে তিনি আসেন নি মিরপুর। পরের দিন অনুশীলন করেছেন অর্ধেক সময়, তাতে খানিকটা স্বস্তিও মিললো। তবে এর মাঝেই আরেক ঝামেলা এসে হাজির। গ্রামীনফোনের সঙ্গে চুক্তির কারণে সাকিবের ওপর নেমে আসতে পারে শাস্তি এমন গুঞ্জন। 

তারপর দিন আবার নেই সাকিব। এবার শোনা গেলো, কোচের কাছ থেকেই ছুটি নিয়ে তিনি খেলেন নি প্রস্তুতি ম্যাচ, খেলবেন না পরেরটাও। তাতে নানা রকম গুঞ্জন ডালপালা মেললো আরও। মঙ্গলবার যা শোনা গেলো তা ঠেকলো অবিশ্বাস্য, এক জাতীয় দৈনিকের খবরে যেন হঠাৎই ঘটলো বজ্রপাত। 

রাতেই যারা খবর পেয়ে গিয়েছিলেন তাদের কেটেছে নির্ঘুম রজনি। আর যারা সকালে খবর পেয়েছেন তারা নিশ্চিতভাবেই স্তম্ভিত ছিলেন অনেকক্ষণ। সূর্য ঠিক-ঠাকভাবে পূর্বাকাশে দেখা মেলার আগেই মিরপুরে হাজির হয়ে গেছেন শ’খানেক সাংবাদিক। 

বিসিবি কার্যালয়ের লিফটের সামনে সাকিব। ছবি :  সংগৃহীত

দিনভর তাদের অপেক্ষা, দুপুরে বিসিবি সভাপতি তার কার্যালয়ে প্রবেশের পর খানিকটা আশার আলো দেখা যায়। একে একে পা রাখেন বেশ কয়েক জন বিসিবি কর্মকর্তাও। তাদের আলোচনা শুরু হয়, শেষ আর হয় না। সাংবাদিকদের কেউ এসে বসেন লাউঞ্জে। বেশিরভাগই বসেন মিরপুরের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে।

এক পর্যায়ে রসিকতা করে তো একজন বলেও ফেলেন, ‘গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে আজকে যত সাংবাদিক আছেন, এখানে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ হলে এতো দর্শকও তো হতো না।’ তার এই রসিক কথায় কারো মুখে হাসি ফুটে না, সবার মধ্যেই কেমন এক অস্থিরতা আর অজানা শঙ্কার অপেক্ষা।

সেই অপেক্ষা শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটায়, আইসিসির অফিসিয়াল ঘোষণায়। তাতে অস্থিরতা আর ক্লান্তি রূপ নেয় বিষণ্নতায়। পুরো দেশের মতো মিরপুরে সাংবাদিকদের শোর-গোল থাকলেও, বাতাসের ভার যেন তাতে কমে না। আইসিসির যে ঘোষণা তাতে হতচকিত হয়ে পড়েন সবাই, বিষ্ময়ে কাটা পড়েন। 

দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার (এক বছর স্থগিতসহ) সঙ্গে ৭ পৃষ্ঠার যে পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছে আইসিসি, তাতে যেন ঘোর আরও বেড়ে যায়, শঙ্কা ভর করে। কী হতে পারতো, কেন সাকিব তিন..তিনবার প্রস্তাব পেয়েও জানান নি। কেন সাকিব হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ ডিলেট করলেন, কেনোইবা দেখা করতে চাইলেন ওই জুয়াড়ির সঙ্গে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যতো গভীরে যায়, ততই যেন বুকটা কেঁপে ওঠে আরও বেশি। 

এরমধ্যেই হাজির হন সাকিব, ক্যামেরার ফ্লাশ তাকে খুঁজে বেড়ায়। মৌমাছির মতো সাংবাদিকরা পিছু নেন তার। লিফট ধরে সাকিব তাদের আগেই পৌঁছে যান বিসিবি কার্যালয়ে। মিনিট ১৫ সেখানে থেকে বিসিবি সভাপতিকে নিয়ে ফিরে আসেন সংবাদ সম্মেলনে। 

যেখানে তার চোখ টলমল করে, এরপর তার বিষণ্ন চোখ আর অবসাদগ্রস্ত মুখের চিত্রেই ফুটে উঠে অনুতাপের ছাপ। তিনি বলে যান, ‘আমি যে ভুল করেছি, তা যাতে অন্য আর কেউ না করে।’ প্রতিজ্ঞা করে যান, আরও ভালোভাবে ফিরে আসার।

কিন্তু সাকিব ফিরে আসার আগের সময়টায় যে তিনি থাকবেন না। ঘাঁড়ের রগ বাঁকা করে বিবাদে জড়াবেন না ন্যায়ের পক্ষে, এই এক বছর যে সাকিব থাকবেন না সামনে থেকে দেবেন না নেতৃত্ব। ব্যাট হাতে ভরসা যোগবেন না, বল হাতে তুলে নেবেন না সব দায়িত্ব। তাতে তো দিনশেষে ক্ষতিটা হলো দেশের ক্রিকেটেরই। 

আমরা চাইলেই প্রত্যাশার ফানুস উড়াতে পারি, আশার বেলুন উড়িয়ে বলতে পারি ‘সাকিব ছাড়াও মানিয়ে নেবে বাংলাদেশ।’ তা হয়তো হবেও। দেশের ক্রিকেট সাকিব ছাড়াই যাবে এগিয়ে। তবে সাকিব যদি না থাকেন তবে... তবে কী? তবে হাহাকার উঠবে ‘সাকিব নেই।’ এটাই তো সাকিবের না থাকার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা। সেটা বয়ে নিয়েই যে আগামী ১ বছর কাটবে দেশের ক্রিকেট। তা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, পাশাপাশি অপেক্ষা করতে হবে ‘চ্যাম্পিয়নের’ ফেরার।

এমএইচবি

আরও পড়ুন