• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০২:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০২:৪৪ পিএম

ঐতিহাসিক দিনে নতুন ইতিহাস গড়তে চায় টাইগাররা

ঐতিহাসিক দিনে নতুন ইতিহাস গড়তে চায় টাইগাররা
অভিষেক টেস্টের ঐতিহাসিক দিনে ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়তে চায় বাংলাদেশ। ফটো : দৈনিক জাগরণ

নাগপুরে ভারতকে হারিয়ে তাদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এমন একটি দিন মাঠে নামতে চলেছে, যে দিনটি তাদের ক্রিকেট ইতিহাসেরই চিরস্মরণীয় এবং মহিমান্বিত এক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কারণ ১৯ বছর আগে এইদিনেই টেস্ট ক্রিকেটের আঙ্গিনায় পা দিয়েছিল বাংলাদেশ।

নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আজ যখন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা খেলতে নামবেন, তাদেরও হয়তো মনে উঁকি দেবে বাল্যকালের স্মরণীয় সেই স্মৃতি। পূর্বসূরিদের পথ ধরেই তো তারা আজ বিশ্ব ক্রিকেটে লাল-সবুজের দলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। 

কেমন ছিল ১৯ বছর আগের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ? সেটি জানাতে হলে স্মৃতির গালিচা পেরিয়ে অতীতের রাজপথে হেঁটে সেদিনের ইতিহাস সবিস্তারে উল্লেখ করতেই হবে। দিনটি ছিল ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। শুক্রবারের সেই সকালের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল গোটা দেশের মানুষ। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাট টেস্টে কখন নামবে বাংলাদেশ দল, সেই মুহূর্তের জন্য কারোরই তর সইছিল না। সেই রাত আবার ছিল পবিত্র শবে বরাতের রজনী। 

১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের গতিপথ হঠাৎ করেই বদলে যায়। এই ট্রফি জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে স্কটল্যান্ড ও শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।

এরপর বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসি বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ

ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে ক্রিকেট অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। তবে অভিষেক টেস্টে এই ভেন্যুতেই খেলতে নেমেছিল নাইমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল, প্রতিপক্ষ ছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে শক্তিশালী ভারতীয় দল। কাকতালীয়ভাবে আজ এত বছর পর সেই ভারতের বিপক্ষেই মাঠে নামছে বাংলাদেশ দল, যদিও সেটা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে মাঠে এসে হাজির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিসিবির তৎকালীন সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং দুই দলের অধিনায়ককে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে প্রধানমন্ত্রী আরও স্মরণীয় করে রাখেন। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন আইসিসির তৎকালীন সভাপতি এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরম বন্ধু জগমোহন ডালমিয়া। 

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের টিকেট। ফটো : সংগৃহীত 

সকাল ৯টা, ম্যাচ শুরু হতে তখনো আধা ঘণ্টা বাকি। টস করতে ২২ গজের পিচে দাঁড়িয়ে দুই বাঙালি অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় ও সৌরভ গাঙ্গুলী। তাদের সঙ্গে ম্যাচ রেফারি রমন সাব্বা রো এবং সাবের হোসেন চৌধুরী। তখনকার বোর্ড সভাপতির থাকার একটাই কারণ ছিল। অভিষেক টেস্টের কারণে বিশেষভাবে বানানো টস কয়েন ম্যাচ রেফারিকে বুঝিয়ে দেয়া। এরপর টসে জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক দুর্জয় প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত দেন। তার টস জয়ের পর স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৫০ হাজার দর্শকের চিৎকারে ফেটে পড়েছিল গোটা এলাকা, সঙ্গে যেন পুরো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের দায়িত্ব পালনের জন্য আইসিসি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ২ আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এবং ডেভিড শেফার্ডকে ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব দিয়েছিল। টিভি আম্পায়ার ছিলেন বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান।       

আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪০০ রান করে ভারতীয় দলকে বটেই, ক্রিকেট বিশ্বকেও চমকে দিয়েছিল। অভিষেক টেস্টেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরি (১৪৫ রান) করে চার্লস ব্যানারম্যান ও ডেভ হটনের পাশে নাম লেখানো, নাইমুর রহমান দুর্জয়ের ৬ উইকেট লাভের কীর্তি এসবকে কখনো কখনো অনেকের নিজের চোখে রূপকথা বলেই মনে হয়েছিল। 

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটার, কোচ, ম্যানেজার ও ফিজিওর অটোগ্রাফ। ফটো : সংগৃহীত 

ভারতও তাদের প্রথম ইনিংসে পাল্টা জবাব দিয়ে করেছিল ৪২৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে অভিজ্ঞতার কাছে মার খেয়ে মাত্র ৯১ রানেই গুঁটিয়ে যায়। ফলে মাত্র ৬৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে নামা ভারত তা ৯ উইকেট হাতে রেখেই করে ফেলে আর চতুর্থ দিনেই শেষ হয় বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট।

সেদিনের অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ দল ১৯ বছরে অনেকটাই অভিজ্ঞ হলেও উত্থান-পতনের ভেতর দিয়েই এগিয়ে চলেছে। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের পর দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা, তারকা ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি এবং দিল্লির বিষাক্ত বাতাসের মতো প্রতিকূলতার মাঝেই সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বিশাল জয় যেন জানান দেয় যে, বাংলাদেশের ক্রিকেট অতল গর্তে পড়ে গেলেও ঠিকই উঠে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রোহিত শর্মার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেও ঘোষণা দিয়ে রাখে- ভারতের বিপক্ষে অবশ্যই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা সম্ভব। 

ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে ১৯ বছর পর আবারো এসেছে ১০ নভেম্বর। পার্থক্য শুধু ১৯ বছর আগে ছিল টেস্ট ম্যাচ, আজ টি-টোয়েন্টি। সেদিনের ভেন্যু ছিল ঢাকা, আজ নাগপুর। প্রতিপক্ষ সেই আগের ভারত। আলোচনায় আবারো বুলবুল, যদিও তিনি ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল নন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঐতিহাসিক এমন একটি দিনে আরেকটি নতুন ইতিহাস গড়তে পারলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আতঙ্কিত ও বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশের মানুষ আরেকবার বিজয় আনন্দে মাতার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে। ঝড়ের পর আসা জয় হোক দেশের ক্রিকেটের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী। 

আরআইএস  
 

আরও পড়ুন