• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৬:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম

ঘুনে ধরা ক্রিকেট নিয়েও স্বপ্ন দেখা

ঘুনে ধরা ক্রিকেট নিয়েও স্বপ্ন দেখা
ছবি : বিসিবি

কালে কালে বয়স হয়ে গেল অনেক। শৈশব তো বটেই, কৈশোরও পেরিয়েছে বাংলাদেশের সাদা পোশাকের ক্রিকেট। চিত্রটা রয়ে গেছে একই। ‘শিক্ষা’র তত্ত্ব শুনিয়ে পাশ কাটানো যাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম, দু-চারদিন চুপসে থাকলেই যে হাজির হবে নতুন কোনো ইস্যু। সেটাও এখন অজানা নয় কারো।

এবারের ভারতের বিপক্ষের সিরিজটা আড়াল করতে অবশ্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। দাঁতে দাঁত চেপে সর্বোচ্চ সপ্তাহখানেক পার করা গেলেই বেজে উঠবে বিপিএল বাজনা। যার জাদুতে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়বেন সবাই, সবচেয়ে বেশি হবেন ক্রিকেটার আর বোর্ড কর্মকর্তারা।

বাজনাটা আসলে কোনো বাদ্যের নয়, ক্রিকেটারদের জন্য তা টাকার বাজনা আর বোর্ড কর্মকর্তাদের জন্য নজর ঘুরিয়ে দেয়ার স্বস্তির। গোড়ায় থাকা গণ্ডগোলগুলোয় আর হাত দিতে হবে না, সেই আনন্দ। সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা তো বোঝা গেল ম্যাচ শেষের দিনেই, দুই অধিনায়ক আর বোর্ড সভাপতির কথায়। 

মুমিনুল যখন পূর্বসূরীদের মতো শিক্ষার বুলি আওড়ান এভাবে, ‘এই সিরিজ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এই বোলিংয়ের বিপক্ষে কীভাবে খেলতে হয়, পরবর্তী সময়ে কীভাবে প্রস্তুতি নেব, এই সব। এই শিক্ষাটা পরবর্তীতে এক বছর, দুই বছর বা পরের সিরিজে কাজে দেবে।’

ঠিক সেই সময়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে গোড়ায় থাকা গণ্ডগোলটা ধরিয়ে দেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক, ‘প্রথমত, ওদের দুজন সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার দলের সঙ্গে নেই। সাকিব নেই, তামিম আসেনি। মাহমুদ উল্লাহও আছে, তবে মুশফিক হচ্ছে একমাত্র ক্রিকেটার যার দিকে পুরো দলটা তাকিয়ে। বাকিরা সবাই নতুন। তারা যত অভিজ্ঞ হবে, যত বেশি বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলবে তত তারা ভালো করার সম্ভাবনা জাগাবে। নিয়মিত খেলতে হবে, এখন দুটো টেস্ট খেলার দেড় বছর পর আবার দুটো টেস্ট খেললে মাঝে কী হয়েছে তা সবাই ভুলে যাবে। দক্ষতাটা ওদের ঠিকই আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যেহেতু খেলছে, তারা আসলেই ভালো। শুধু ম্যাচে একেকটা পরিস্থিতিতে কীভাবে খেলতে হয় সেই অভিজ্ঞতাটার অভাব আছে। বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের মিলেই আসলে খুঁজে বের করতে হবে টেস্ট ক্রিকেট তাদের কাছে কতটা গুরুত্ব রাখে এবং এটাই টেস্ট ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। ’

কোহলির বলা বাকি কথাগুলো থাক। শেষ বাক্য ‘টেস্ট ক্রিকেট কতটা গুরুত্ব রাখে’- এ কথাতেই নিহিত সব। ফোর্বাস ম্যাগাজিনে যে শীর্ষ আয় করা ১০০ ক্রীড়াবিদের তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে একমাত্র ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। সর্বমোট ২৭ মিলিয়ন ডলারের মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলার তিনি পান মাঠের ক্রিকেট থেকে। যেখানে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে কম আসে টেস্ট ক্রিকেট থেকে।

তবুও কোহলি অনেকবার বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটই আসল ক্রিকেট। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট ক্রিকেটে অনীহার গল্পটা পুরনো। অনেকে তো সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারলে ফেলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে জাতীয় দলের তারকাদের দেখতে পার করতে হয় বছরের পর বছর। 

পুরো একটা ঘুনে ধরা ক্রিকেট অবকাঠামোর ভেতরে লুকিয়ে থাকা পোকা যেন সামনে আনার নেই কেউ। ঘরোয়া লীগগুলোয় স্বেচ্ছাচার আর দুর্নীতির অভিযোগ তো বহু পুরনো। যাদের কাছে দুই টেস্টেই নাস্তানাবুদ হয়েছে বাংলাদেশ, যারা হয়ে উঠেছে টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর দল, তাদের দেশে টেস্টেই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ফি। 

বোর্ডকে এক পাশে সরিয়ে রেখে যদি কেবল ক্রিকেটারদের কথাও ধরা হয়- ক্রিকেটের কুলীন এই ফরম্যাটে প্রায় দুই যুগ পার করে ফেললেও এখনো চারপাশে কান পাতলেই শোনা যায়, কতজন ক্রিকেটার আসলে টেস্ট খেলতে চান? এই প্রশ্ন কানে এলে নিশ্চয়ই তাদের দীর্ঘশ্বাস ছোটে যারা ক্রিকেটটাকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করেন। আর এসব কিছু দূর করতে যাদের এগিয়ে আসার কথা সেই বিসিবির অবস্থান স্পষ্ট করা যাবে ছোট্ট একটা উদাহরণেই। 

ইডেন টেস্টে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অবস্থার পর সৌরভ গাঙ্গুলি যেখানে উদাহরণ বাতলে দেন কোহলির। বলেন, ‘তোমরা কোহলিকে দেখো, সে প্রতিটা বল এমনভাবে খেলে, যেন এটাই তার জীবনের শেষ বল’। সেখানে বিসিবি সভাপতি তাকে না জানিয়ে নেয়া টসের সিদ্ধান্তের ক্ষোভ ঝাড়েন গণমাধ্যমে। 

দুর্বল ক্রিকেট কাঠামো, খেলোয়াড়দের উপযুক্ত পাইপলাইন গড়ে না তোলা, দল গঠনে অনেকের অযাচিত হস্তক্ষেপ- এসব যদি বন্ধ না হয়, আর ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে যদি বারবার প্রশ্ন ওঠে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই গণমানুষের স্লোগান হয়ে উঠবে ‘যাদের ইচ্ছা নেই, তারা দয়া করে সাদা পোশাকটা গায়ে তুলবেন না’। এর সমাধানও রয়েছে ক্রিকেটারদের হাতেই-  সাদা পোশাকের খেলায় মনোনিবেশ করলেই এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। সমর্থকদের মনে এনে দিতে পারবেন স্বস্তি।

এমএইচবি/ এফসি

আরও পড়ুন