• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ১১:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ১২:২০ পিএম

মালিক আমি, কমিশন কেন দিমু পাঠাওঅলারে?

মালিক আমি, কমিশন কেন দিমু পাঠাওঅলারে?
রাইড শেয়ারিং এর দৃশ্য-ছবি : কাশেম হারুন

রা ই ড  শে য়া রিং

.....................

‘দেহেন, সিএনজি মালিকরে জমা দিতাম বইলাই পোষাই তো না। এহন যেইটা করতাসি, সেইটার মালিক আমি। জমা-কমিশন কেন দিমু পাঠাওঅলারে’

.............................

সম্প্রতি রাজধানী শাহজাহানপুর-মগবাজারে-মালিবাগ ফ্লাইওভারে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও এর একজন মোটরসাইকেল চালককে গলা কেটে হত্যা ঘটনার পেছনে চালকের অ্যাপ ব্যবহার না করাকে দায়ী করছে পুলিশ। এই ঘটনা বেশ প্রচারও পেয়েছে। তবুও চালকরা অ্যাপে যেতে চান না। অ্যাপে না যাবার জন্য নানা খোঁড়া যুক্তি হাজির করছেন তারা।

গত ২৫ আগস্ট (রোববার) রাতে মিলন নামের ওই পাঠাও চালক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) ভোরে ঢাকার গুলবাগ থেকে মিলনের বাইকের যাত্রী নূরুজ্জামান অপুকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

অপুর বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, মাত্র ৫০ টাকার ভাড়ার চুক্তিতে নূরুজ্জামান অপুকে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং চালক মোহাম্মদ মিলন তার মোটরসাইকেলে তুলেছিলেন। কথা ছিল গুলিস্তানে পৌঁছে দেয়ার। কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার আগেই গলা কেটে মিলনকে হত্যা করে অপু।

গ্রেফতারের পর অপুর কাছ থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) যাত্রী সেজে এই প্রতিবেদক ঢাকার মহাখালীতে কথা বলছিলেন পাঠাও অ্যাপ দিয়ে রাইড শেয়ারকারী জাকির হোসেনের সাথে। মতিঝিল যেতে চাইলে জাকির বলেন, ২৫০ টাকা লাগবে। অ্যাপে যাবেন কি-না, বললে তিনি বলেন, অ্যাপ দিয়ে গেলে পোষায় না।

যাত্রী সেজে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারকারী জুলফিকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় উত্তরায় তিনি যাবেন কি-না। একসময়কার সিএনজি অটোরিকশা চালক জুলফিকার অ্যাপসে না গিয়ে চুক্তিতে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন সাংবাদিক পরিচয়ে জুলফিকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং যাননি বলে সম্প্রতি হত্যার শিকার হয়েছেন মিলন। এ ঘটনার পরেও কেনো অ্যাপসের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং অনীহা- এই প্রশ্নের জবাবে জুলফিকারের উত্তর, নেটে (অ্যাপে) গেলে ইন্টারনেট কিনতে হয়, ভাল ফোন লাগে, কোম্পানিকে কমিশন দিতে হয়। এসব কইরা পোষায় না।

যখন সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন, তখন তো মালিককে প্রতিদিন জমা দিতেন, এখন কোম্পানিকে কমিশন দিতে সমস্যা কোন জায়গায়- প্রশ্ন করা হয় রাইড শেয়ারকারী মফিজুলের কাছে। তিনিও আগে সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। ওই প্রশ্নের মফিজুল বলেন, ‘দেহেন, সিএনজি মালিকরে জমা দিতাম বইলাই পোষাই তো না। এহন যেইটা করতাসি, সেইটার মালিক আমি। জমা-কমিশন কেন দিমু পাঠাওঅলারে?

অ্যাপের প্রতি অনীহা শুধু এ দুজনেরই নয়। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার সাথে যুক্ত বহু মোটরসাইকেল চালক চুক্তিতে যেতে আগ্রহী। তাদের মতে- অ্যাপে কলের সংখ্যা কমে গেছে কিন্তু কমিশনের পরিমাণ কমে নি। প্রায়শই নেটওয়ার্কে ত্রুটি দেখা দেয়, অ্যাপ চালাতে বাড়তি টাকা দিয়ে ইন্টারনেট ক্রয় করতে হয়, ভাল একটি স্মার্টফোন লাগে, অ্যাপ পরিচালনা জটিল মনে হয়।

অ্যাপে গেলে আপনি আরও বেশি নিরাপদ হতে পারেন- এমন কথা তুলতেই পাঠাও চালক কাশেম মিয়া উঁচু গলায় বলেন, ‘ছোডো থেইকা ঢাকায় বড় হইছি। আমারে কিছু কইতে হইলে খবর আছে।’ রাইড শেয়ার কোম্পানির সাথে যুক্ত হবার আগে বাস কন্ট্রাক্টর ছিলেন কাশেম।

চুক্তিতে চলাচলের বিষয়টি নিয়ে নানা রকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে যাত্রীদের কাছ থেকে। অনেক সময় কোনও উপায় না দেখে যাত্রীরা চুক্তিতে রাইড শেয়ারে যান। কোম্পানির কাছে অভিযোগ করেও সুবিধা হচ্ছে না।

নিয়মিত উবার-পাঠাও ব্যবহারকারী ব্যাংক কর্মী সাজ্জাদ বলেন, দৈনিক যেতে লাগত প্রায় ১৫০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে ডিসকাউন্ট পেতাম, তা দিয়ে একশ টাকার মত লাগত। কিন্তু এখন তো অ্যাপে ড্রাইভারই পাই না। চুক্তিতে যেতে ২০০ টাকা চায়। এগুলো নিয়ে বহু ড্রাইভারের সাথে বহু ঝামেলা করেছি, কিন্তু লাভ নেই। কষ্ট আমারই। এখন বাধ্য হয়ে চুক্তিতেই যেতে হচ্ছে, মাঝে মধ্যে অ্যাপ ব্যবহার করি।

নারী যাত্রী রোখসানা বলেন, পুরুষরা না হয় চুক্তিতে গেল। কিন্তু সমস্যা আমাদের। নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। অ্যাপে গেলে লোকেশন ট্র্যাক হয়। এখন যে অবস্থা দেখছি, নিরাপত্তার কারণে এসব ব্যবহারই ছাড়তে হবে।

তিনি বলেন, এখন আর রাইড শেয়ার বলতে কিছু নেই, সব আগের বেবিট্যাক্সি, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশার মত হয়ে গেছে। চালকদের ব্যবহারও অশোভন।

জানার জন্য পাঠাওয়ের বনানীর প্রধান অফিসে যায় দৈনিক জাগরণ। সেখানকার কর্মীরা জানান, অ্যাপ ব্যবহারে ড্রাইভারদের উৎসাহী করতে কাজ করছেন তারা। তারপরও যদি কেউ অ্যাপ ব্যবহার না করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ আসে তাহলে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়া হয়। কোনও চালক-যাত্রী যদি অ্যাপে না গিয়ে কোনও অঘটনের শিকার হন তার দায় পাঠাও নেবে না।

উবার এর কাস্টমার কেয়ার থেকেও একই মন্তব্য পাওয়া গেছে। 

আরএম/এসএমএম