• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম

টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধিদের আমলনামা

টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধিদের আমলনামা
টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধিরা। ছবি- জাগরণ

 

গত বছরের ৪ মে থেকেই মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলেও তেমন আঁচর লাগেনি টেকনাফে। সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করে পুলিশ, র‌্যাব ও  বিজিবি। এতে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুতি নেয় অঢেল সম্পদের অধিকারী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা। পরে ৯টি শর্তে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করে।

১৬ ডিসেম্বর ’১৯ দুপুর ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০২ জন ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্যে ৩০ জন ইয়াবা গডফাদারও রয়েছেন। টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে ইয়াবা ও অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকালে তারা ৩ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা ও ৩০টি দেশীয় পিস্তল জমা দিয়েছেন। এ সময় আত্মসমর্পকারীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

আত্মসমর্পণকৃতদের মধ্যে সাত জনপ্রতিনিধি ও এক নারী কাউন্সিলরের স্বামী রয়েছেন। এরা হচ্ছেন- টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের জামাল হোসেন, নুরুল হুদা, সাবরাং ইউপির শামসুল আলম, মোয়াজ্জেম হোসেন দানু, রেজাউল করিম রেজু, সদর ইউপির এনামুল হক, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ এবং নারী কাউন্সিলরের স্বামী শাহ আলম।

নুরুল হুদা হেলপার থেকে কোটিপতি

নুরুল হুদা। এক সময় গাড়ির হেলপার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্থানীয়ভাবে পরিচিত নুরা বলে। অপর পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ছোট দুজনকে নিয়ে নাফ নদীতে জাল ফেলতেন তাদের বাবা। তিনজন পরের জমিতে লবণ শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু যাদের জমিতে চাষ দিতেন, কয়েক বছরের মাথায় ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে সেই জমিই কিনে নেন নুরুল হুদা। মহাসড়কের ধারে গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। তার পর একেক ভাইয়ের জন্য বানান একেকটি প্রাসাদ। ওঠাবসা ছিল অনেক প্রভাবশালীদের সাথে। পরে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদে নির্বাচন করেন। বনে যান নেতা। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হন নুরুল হুদা।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এককালের সেই হেলপার নুরা আজ শতকোটি টাকার মালিক। হ্নীলার  টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের পাশেই তাদের ছয় ভাইয়ের নামে ৬টি নান্দনিক বাড়ি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তাদের বাড়ির সংখ্যা ১৪। টেকনাফের হোছ্যারখালের উত্তর পাশে, হ্নীলা আলীখালী, লেদাবাজার এলাকায় হুদার নিজেরই তিনটি বাড়ি। নিজে বসবাস করেন পুরান লেদায়। ফ্ল্যাট আছে চট্টগ্রামে। তবে হ্নীলার দমদমিয়া বিজিবি চেকপোস্ট ঘেঁষে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন ছোট ভাই নূর মোহাম্মদ। যিনি ২০১৪ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নূর মোহাম্মদ।

এছাড়া হ্নীলা লেদায় শত একর জমি কিনে নিয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড নুরুল হুদা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হ্নীলার জাদিমুড়া থেকে খারাংখালী এলাকা পর্যন্ত নাফ নদীর দুই পাশে ইয়াবার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন নুরুল হুদা। জাদিমোড়া, নয়াপাড়া, মোচনী, লেদা, রঙ্গীখালী, নাটমোড়া পাড়া, হ্নীলা সদর, ওয়াব্রাং ও খারাংখালী পয়েন্ট হয়ে প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে তার নামে ইয়াবার চালান আসত। সন্ধ্যার পর এসব খোলা বিলে লোকজনের উপস্থিতি না থাকায় ইয়াবা চোরাচালানের একটি অন্যতম রুটে পরিণত হয়। বর্তমানে নুরুল হুদার একাই প্রায় শতকোটি টাকার মালিক বনে আছেন। তিনি একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন।

পুলিশ জানায়, নুরুল হুদা হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সরওয়ার কামাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তিনি ও তার সব ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন-পুরনো সবকটি তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী। ২০১৪ সালে আত্মগোপনে থেকে মেম্বার নির্বাচিত হলেও শপথ নিতে পারেননি। পরে ২০১৬ সালে কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে শপথ গ্রহণের চেষ্টা করেন। পুলিশ জানায়, এরা পারিবারিকভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় ভাই শামসুল হুদা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। নুরুল কবির, সরওয়ারসহ অন্য ভাইরাও ফেরার।

দিনমজুর থেকে কোটিপতি জামাল মেম্বার
জামাল মেম্বার। পিতা মৃত হায়দার আলী। এই জামাল হোছাইন ছিল একজন সাধারণ দিনমজুর। মাঝে মধ্যে কৃষিজীবীর কাজ করতেও দেখা যেত। ২০০৯ সালে লবণ ব্যবসার আড়ালে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আসায় মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসার জগতে প্রবেশ করে। এরপর ইয়াবা ব্যবসাকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য আরেক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২০১৪ সালে নিহত হওয়া নুর মোহাম্মদের মেয়ের সাথে তার ছেলে শাহ আজমের সঙ্গে বিয়ে দেয়। এরপর দুই বেয়াই মিলে গড়ে তুলে ইয়াবা ব্যবসার বড় সম্রাজ্য। এরপর রাতারাতি কোটির টাকার মালিক বনে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। তার বেয়াই নুর মোহাম্মদ নিহত হওয়ার পর পুত্র শাহ আজমের মাধ্যমে ভারত, ঢাকা, কুষ্টিয়া, যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান পাচার করে অল্প সময়ে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর খেতাবে নাম লেখান। হয়ে যায় ফেরারী। একের পর এক গাড়ি-বাড়ি ও জমি-জমার মালিক বনে গেলেও জনসম্মুখে আসতে পারত না।

সম্প্রতি এই অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে ইউপি নির্বাচনে কোটি টাকার অধিক ব্যয় করে মেম্বার নির্বাচিত হয়। সে মেম্বার নির্বাচিত হয়ে বসে থাকেনি ইয়াবা মোটা অংকের টাকা দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে হ্নীলা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ নির্বাচিত হয়। সে মেম্বার নির্বাচিত হলেও ইয়াবা বাণিজ্য থেমে থাকেনি। আরো শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চট্টগ্রামে নিজস্ব অত্যাধুনিক ফ্লাটে বসে এই ব্যবসা চালাতে গিয়েই গত মাসে চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে ৩৬ হাজার ইয়াবা, নগদ ৪২ লাখ টাকা ও মূল্যবান প্রাইভেট গাড়িসহ আটক হয় তার পুত্রবধূ ও অপরাপর সিন্ডিকেট সদস্যরা। বর্তমানে জামাল মেম্বারের রয়েছে প্রায় আড়াইশ খানি জমি ও আলিশান বাড়ি। সব মিলিয়ে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি প্রায় ৪০ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গেল ইউপি নির্বাচনে এই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাষ টাকা খরচ করে হ্নীলা ৭নং ওয়ার্ড হতে ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হয়। তার রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।

ফুটবলার থেকে কোটিপতি এনাম মেম্বার
টেকনাফ সীমান্তের অপরাধ জগত ও ক্যাম্পভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের অন্যতম হোতা এনামুল হক (এনাম মেম্বারকে) রিমান্ডে নিলে বেরিয়ে আসবে ইয়াবা পাচার ও অস্ত্র পাচারের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এনাম মিয়ানমার ভিত্তিক শীর্ষ ইয়াবা কারবারীদের সাথে আঁতাত করে এলাকার উঠতি বয়সী যুবকদেরকে অল্প দিনে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এতে বৃহত্তর সিন্ডিকেট গড়ে তোলে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোটি কোটি ইয়াবা এদেশে নিয়ে এসে। এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, নামে বেনামে একাধিক গাড়ি বাড়ি ও অঢেল সম্পদ গড়ে তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৬টি বিভিন্ন মামলা আছে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়েরেন্ট রয়েছে।

সরেজমিন ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ কারবার করে তিনি প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালিক বনে যান। অবশ্য খেলার সুবাদে তিনি নাফ সিটি ফুটবলের সভাপতিসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গন সভাপতি বলে জানান তার ভাই নুরুল হক। তিনি আরো বলেন, তারা ৬ ভাই তিন বোন। তাদের পৈত্রিক সূত্রে নানা সম্পত্তি রয়েছে। বর্তমানে তাদের ৫টি মুদির দোকান, চিংড়ি প্রজেক্ট রয়েছে। তাদের বাড়িটিও ভাঙ্গাচুড়া বলে জানান তারা। তাদের বক্তব্য ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিদ্দিক আমার বড় ভাই আজিজুল হককে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি হত্য করে। তখন থেকে তারা নানা ষড়যন্ত্রে মেঠে উঠে।

মানব পাচার থেকে ইয়াবায় দানু মেম্বার
মোয়াজ্জেম হোসেন দানু। পিতা মাস্টার সৈয়দ আহমদ। বিদেশে কিছুদিন থেকে এসে একটি চাঁন্দের গাড়ি কিনেন। এই চান্দের (জিপ) গাড়ির হেলপারি করতেন। যখন এ ব্যবসায় বেশি দূর যেতে পারেননি। বেকার হয়ে পড়েন। বেকার থাকতে থাকতে এক সময় জড়িয়ে পড়েন মানব পাচারে। সাগর পথে অবৈধভাবে মানব পাচার করে টাকা কমানো শুরু করেন। প্রশাসন মানব পাচার প্রতিরোধে যখন গুরুতর অভিযানে নামে, তখন গা ঢাকা দেন তিনি। মানব পাচার করে অর্জিত পূঁজি নিয়ে নেমে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। এ ব্যবসার বদৌলতে হয়ে উঠেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তখন থেকে বিরামহীন ইয়াবা ব্যবসায় করে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মালিক বনে যান বলে স্থানীয়রা।

মাছ ব্যবসায়ী থেকে কোটিপতি শামসু মেম্বার
শামসুল আলম। পিতা আলী আহমদ। জমি বর্গ নিয়ে চাষ করতো। পরবর্তী মাছ চাষে লিপ্ত হন। যখন ইয়াবা ব্যবসা তার নাগলে আসে, তখন থেকেই এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন শামসু মেম্বার। ইয়াবার টাকা খরচ করে বনে যান সবরাং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। তিনি মেম্বার হওয়ার পর থেকে পুরোদমে শুরু করেন ইয়াবা ব্যবসায়। মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরে ঘর বাড়ি ও জমি জমা করে ফেলেন তিনি। ১০ কোটি টাকার বেশি তার অর্থ সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ছাত্রত্ব ছেড়ে ইয়াবা ব্যবসায় কোটিপতি রেজু মেম্বার
রেজাউল করিম রেজু। পিতা হাজি এবাদুল হক। শেষ সীমান্ত স্থান শাহপরীরদ্বীপে তার বাড়ি। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সাবরাং ইউনিয়নের সদস্য নির্বাচিত হন। তার পরিবার স্বচ্ছল থাকলেও ছাত্রত্ব ছেড়েই অর্থের লোভে ব্যবাসায় জড়িয়ে পড়েন। লবণ ব্যবসায় শুরু করেন তিনি। যখন আশপাশের লোকজন ইয়াবা ব্যবসায় করছিলেন। তখন তিনিও ভয়াবহ এ মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েন। লবণের ব্যবসায় আড়ালে জড়িয়ে যায় ইয়াবা ব্যবসায়। ইয়াবা ব্যবসার আগে থেকেই লিপ্ত ছিলেন হুন্ডি ব্যবসায়। সব মিলিয়ে তার প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

বেকার থেকে কোটিপতি নুরশাদ
অনুসন্ধানে জানা গেছে নুরুল বশর নুরশাদ। পিতা মো. ইউনুছ। বেকার থেকে ইয়াবার বদৌলতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে টেকনাফ পৌর সভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরশাদ। বিপুল অর্থ খরচ করে গেল পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার কুলালপাড়া রয়েছে একটি অত্যাধুনিক বাড়ি। টেকনাফ স্টেশনে আছে বিশাল ভিশন আরএফএলের শোরুম। এর বাইরে ব্যাংকে রয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। জনশ্রুতি রয়েছে তার টাকার পরিমাণ আরো বেশি হবে।

জিরো থেকেই হিরো নারী কাউন্সিলরের স্বামী
এর বাইরে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে একজন জনপ্রতিনিধির স্বামী রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শাহ আলম। তিনি পৌর কাউন্সিলর কহিনুর আক্তারের স্বামী ও টেকনাফের যুবদল নেতা। তিনিও ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে আত্মসমর্পণ করেছেন। টেকনাফে স্বরাষ্ট্রম ন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মামলার আসামি শাহ আলম। তিনি পৌরসভার পুরাতন পল্লনপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে ও কাউন্সিলর কহিনুরের স্বামী।
গত বছরের আগস্টে একটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মন্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই পৌরসভার কাউন্সিলর শাহ আলম মিয়ার বাড়িতে স্বশস্ত্র হামলার ঘটনায় এই কাউন্সিলর বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  
কাউন্সিলর শাহ আলম মিয়া জানান, কাউন্সিলর কহিনুরের স্বামী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী শাহ আলমের সাথে আমার নামের মিল থাকায় যত্রতত্র আমার পদবি ব্যবহার করে মাদক ইয়াবা পাচার করলে আমি মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করেও কোন সুরাহা মিলেনি।
এই শাহ আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। যার মধ্যে জি আর-১১১ তারিখ ২০মার্চ ২০১৪, জি আর-৪০/৬৪-তা- ১১/০৮/১৪, টেকনাফ থানা মামলা নং-১২ তা- ৫ জুন-২০১৩, জিআর-১৯ তা- ১৪ জানুয়ারি-২০১৪, টেকনাফ থানা মামলা নং৭৫/৬৩১, তা- ৩০ জুলাই-২০১৭ সহ মাদক ও অস্ত্র আইনসহ প্রায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইয়াবার টাকার বদৌলতে স্ত্রীকে মহিলা কাউন্সিলর করেছে। নিজে বাঁচার জন্য স্ত্রীর জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের পদও ভাগিয়ে নেন। এ দম্পতি ও শ্বশুরের নামে বেনামে গাড়ি বাড়ি ও নগদ অর্থ রয়েছে। কয়েক বছর আগে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ছেলের জন্মদিন পালন করে এ দম্পতি। সেই সাথে নান্দনিক ঘোড়ার গাড়ি টেকনাফের অলিগলি প্রদক্ষিণ করে টক অব দ্যা টেকনাফে পরিণত হয়। তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা থাকবে বলে সচেতন মহল দাবি করেছেন। তার স্ত্রী কহিনুর আক্তার উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান করার জন্য বিশাল বাজেট (কয়েক কোটি) মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে।
টেকনাফ থানা পুলিশ জানিয়েছে আত্মসমর্পণের পর তাদের সম্পদের হিসাব নিকাশ যাচাই বাচাইয়ের কাজ শুরু হয়নি। ঊর্ধ্বতন নির্দেশ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণকারীদের সম্পদের এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই বাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল।


কেএসটি