• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১১, ২০১৯, ০৫:০৬ এএম

মৃত্যুর কাছে হার মানলেন দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত 

মৃত্যুর কাছে হার মানলেন দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত 
স্ট্রেচারে করে দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়- ফাইল ছবি

পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানলেন আগুনে ঝলসে দেয়া ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে ঢামেকের বার্ন  ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। 

নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপিকা রায়হানা আউয়াল। 

পরে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন মৃত নুসরাতকে দেখতে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ময়নাতদন্ত শেষে নুসরাতের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

রাতেই নুসরাতের মরদেহ ঢামেকের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে। 

নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে বাঁচাতে সিঙ্গাপুরে নেয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন ছিল। তবে অবস্থা সঙ্কটাপন্ন থাকায় নেয়া হয়নি। ওই অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী ঢামেক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। নুসরাতের ফুসফুসকে সক্রিয় করতে গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) অস্ত্রোপচার করা হয়।

ডা. সামন্ত লাল সেনকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নুসরাতের বাবা- ছবি : মোহাম্মদ হালিম

নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। 

নুসরাতের উন্নত চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১০ এপ্রিল) জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরফ উদ্দিনের আদালতে হাজির করলে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক আফছার উদ্দিন ও মাদ্রাসার ছাত্র আরিফকেও আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত প্রিন্সিপালের ৭ দিন এবং বাকি দুজনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

স্ট্রেচারে করে দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়- ছবি : জাগরণ

এ ঘটনায় তদন্তে অবহেলার দায়ে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বুধবার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পুলিশের এআইজি মোহাম্মদ সোহেল রানার বরাতে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ওসি মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত মামলা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত। এ সময় তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে— এক ছাত্রীর এমন সংবাদে ভবনের চারতলায় যান তিনি। সেখানে বোরকা পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে আনা শ্লীলতাহানির মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সম্পূরক এজাহার দাখিল করেন।

এর আগে নুসরাতের মা বাদী হয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তাকে ২৭ মার্চ (বুধবার) গ্রেফতার করে। তিনি এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

এইচএম/এসএমএম