• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২০, ০১:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১১, ২০২০, ০৩:৩১ পিএম

গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮৫৫ জন 

গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮৫৫ জন 
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলন

গত বছর দেশে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন  প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩,৩৩০ জন। ফেলে আসা এই বছরটিতে প্রাণহানী বেড়েছে ৮.০৭ শতাংশ। 

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যণ সমিতি ‘সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন- ২০১৯’ প্রকাশ করে। সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হক এ রিপোর্ট পাঠ করেন। 

দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়ে ১২ সুপারিশ করা হয়। 'সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়ে সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯'এর তথ্য উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক জানান, বিদায়ী বছরে ৫৫১৬ টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭,৮৫৫ জন। এতে আহত হয়েছেন ১৩,৩৩০ জন। একই সময় রেলপথে ৪৮২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭০৬ জন। নৌ-পথে ২০৩ টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২১৯ জন। আহত হয়েছেন ২৮২ জন। আর নিখোঁজ রয়েছেন ৩৭৫ জন। 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- গত বছর সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬,২০১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন সর্ব মোট- ৮,৫৪৩ জন। আর আহত হয়েছেন ১৪,৩১৮ জন। 

এতে উল্লেখ করা হয়, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনার কবলে ৯৮৯ জন চালক আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা ৮৪৪ জন। আরো আক্রান্ত হয়েছেন- ৮০৯ জন শিক্ষার্থী, ১১৫ জন শিক্ষক, ২১৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৯৪ জন নারী, ৫৪৩ জন শিশু, ৩৬ জন সাংবাদিক, ২৬ জন চিকিৎসক, ১৬ জন আইনজীবী ও প্রকৌশলী এবং ১৫৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। 

মোজাম্মেল হক জানান, আক্রান্তদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- ২৪ জন সেনা সদস্য, ৫৩ জন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য, ৩ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ১ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৬ জন সাংবাদিক, ৫৮২ জন নারী, ৪৪৭ জন শিশু, ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ৬৯১ জন চালক, ৩৫৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯ জন প্রকৌশলী, ৫ জন আইনজীবি, ১১৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২৫ জন চিকিৎসক। 
  
উল্লেখিত সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৭৩৫৬ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৮.৯৯ শতাংশ বাস, ২৯.৮১ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫.২২ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৯.৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২১.৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৮.০৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৭.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। 

এতে আরো উল্লেখ করা হয়- গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ৫৬.৩৫ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষ- ১৮.৩৬ শতাংশ, খাদে পড়ে ১৮.০৭ শতাংশ, বিবিধ কারনে- ৫.৯১ শতাংশ, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.৩৪ শতাংশ এবং ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনায় ০.৯৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ মালা :

১। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করা।

২। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। 

৩। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা। 

৪। দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা। 

৫। গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

৬। যাত্রী,পথচারী ও গণপরিবহনবান্ধব সড়ক পরিবহন বিধিমালা প্রনয়ন। 

৭। গাড়ীর ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। 

৮। সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের চিকিৎসা ও পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

৯। দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া । 

১০। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমী গড়ে তোলা।

১১। গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সকল মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকসহ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিমাসে একদিন গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।

১২। সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এমএএম/বিএস