• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০, ১০:১১ এএম

টক অব দ্যা কান্ট্রি

প্যারোল নিয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিতে যাবেন খালেদা জিয়া

প্যারোল নিয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিতে যাবেন  খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া- ফাইল ছবি

আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। আর রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির নেই। সুতরাং এখন একটি পথই খোলা, নির্বাহী আদেশ বা প্যারোলে মুক্তি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে মুক্ত করে চিকিৎসা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে, এমনটাই মন্তব্য করেছেন তার স্বজনরা। 

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এখন এ বিষয় টক অব দ্যা কান্ট্রি। 

গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দার বিএসএমএমইউ’র ভিসি বরাবর যে চিঠি দিয়েছেন, একেই প্যারোল আবেদনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
 
এদিকে প্যারোল প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে সরাসরি বলেছেন, প্যারোলে হলেও আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করতে চাই। এ ব্যাপারে তিনিও দ্বিমত করবেন না। কারণ, তার শরীর অত্যন্ত খারাপ। তার হাত বাকা হয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজন।

এবিষয়ে কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি প্রিজন্স বলেছেন, চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বন্দি নিজেই কারা কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করতে হবে। সে জন্য কারা কর্তৃপক্ষই সংশ্লিষ্ট বন্দিকে কাগজ কলম সরবরাহ করবে। তাছাড়া অসুস্থ বা মৃত্যুজনিত প্যারোলের বিষয় কারা কর্তৃপক্ষ মানবিক বিচেনায় দেখছেন। তাছাড়া এটি আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরই বন্দির মুক্তি মিলবে। এ আইন শুধু খালেদা জিয়া নয়, সব বন্দির ক্ষেত্রে একই নিয়ম পালন করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ডিআইজি প্রিজন্স।

বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট নেতা বলেছেন, কেবল স্বজনরা নয়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতারাও চান প্যারোলে হলেও এই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা প্রয়োজন। শুরুর দিকে যেসব নেতা প্যারোলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারাও এখন প্যারোলের পক্ষেই মত দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, কারাগারে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াটাই খালেদা জিয়ার জন্য উত্তম। 

এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জীবিত খালেদা জিয়া আমাদের কাছে বেশি প্রয়োজন। সুতরাং স্বজনরা যদি খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে আবেদন করেন এবং ম্যাডাম যদি সেটা মেনে নেন, তাহলে আমাদের কিছু বলার থাকবে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, প্যারোল চাওয়া না চাওয়া খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি কোনো মতামত দিতে পারব না। দলের হয়ে যদি কিছু বলতে হয়, সেটা মহাসচিব বলবেন।

দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ম্যাডাম এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে কারণেই হয়তো পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলের কথাটা বলা হচ্ছে। এমন কিছু হয়ে থাকলে দলের পক্ষ থেকে দ্বিমত করার কিছু থাকবে না।
 
জানা যাচ্ছে, খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর এবং অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএসএমএমইউ ভিসি বরাবরে চিঠিটি দিয়েছেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার। সেই চিঠিতে শামীম ইস্কান্দার উল্লেখ করেছেন তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেই সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার মতামতের ভিত্তিতেই এটি করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, এমনিতেই এখন রাজনীতি করার মতো অবস্থায় নেই বেগম জিয়া। তার ফাস্টিং ব্লাড সুগার ১৪/১৫। তার বা হাত পুরো বেঁকে গেছে। এছাড়া তিনি একা দাঁড়ানো বা হাঁটতেও পারেন না। আর গত কয়েকদিন ধরে তার প্রচন্ড জ্বর। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে উচ্চতর চিকিৎসা দরকার। সেই উচ্চতর চিকিৎসা গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানলেও তারা জানেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে একটি দর কষাকষি চলছে। খালেদা জিয়ার পরিবার এবং ড. কামাল হোসেন এর সঙ্গে যুক্ত। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডি্ক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্ত হয়ে বিদেশ যাচ্ছেন, এমন গুঞ্জন এখন দেশব্যাপী ও সর্বত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর আবেদন করা হয়।

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার দাবি করেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমার সঙ্গে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের টেলিফোনে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে বলি। আমি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।
 
এদিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে তারা লিখিত কোনো আবেদন পাননি। তারা (বিএনপি) শুধু মুখে মুখেই বলছেন, কিন্তু লিখিত কোনো আবেদন করেননি। এটা দুর্নীতির মামলা। রাজনৈতিক মামলা হলে সরকার বিবেচনা করতে পারত। বিএনপি বারবার সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা প্যারোলে মুক্তি চাচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি রাজনৈতিক মামলা নয়। সরকার বিষয়টি তখনই বিবেচনা করতে পারতো, যদি সেটা রাজনৈতিক হতো, বলেন ওবায়দুল কাদের।

প্রসঙ্গত, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি করে আসছে। কিন্তু কারাবিধি অনুযায়ী বন্দি হিসেবে তাকে সরকারি হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার দাঁত ও জিহ্বার চিকিৎসা সেখানে ভালোভাবে সম্পন্ন হলেও তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এটি খুব ঊর্ধ্বমুখী। এর প্রভাবে তিনি যেকোনো সময় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন, এমন দাবি পরিবার ও বিএনপির। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করবে। সূত্রের দাবি, সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়াকে নেয়া হবে।

এইচএম/বিএস