• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮, ০৯:২০ পিএম

বছরজুড়ে মাদক বিরোধী যুদ্ধে সফল সরকার

বছরজুড়ে মাদক বিরোধী যুদ্ধে সফল সরকার

 

‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’-  স্লোগানে বিদায়ী বছরে আলোচনায় ছিল সারাদেশে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে পরিচালিত এ অভিযানে সফলতা পেয়েছে আইন-শৃংখলাবাহিনী। এ অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। 

তথ্য-উপাত্তে মাদক বিরোধী অভিযান : এ বছর মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করা ১২ হাজার মাদক-দ্রব্য চোরাকারবারি। প্রায় দেড় শতাধিক মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মন্তব্য, এ অভিযানে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। রাজধানীর অন্যতম মাদকের স্পট কারওয়ান বাজার রেললাইন বস্তিতে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা বা ব্যবসায়ীদের আনাগোনো বন্ধ হয়েছে। 

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা জানায়, গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত  ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা ৩৮ মাদক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির কারখানার খোঁজ পাওয়া গেছে। রাজশাহীতে হেরোইনসহ গ্রেফতার করা দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে। 

গত ২২ ডিসেম্বর ভোর ছয়টা থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে  মাদক সেবন ও বিক্রির দায়ে ৩১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময়  ২৯৬ পিস ইয়াবা, ১৯০ গ্রাম ওজনের ২ হাজার ৬৫ পুরিয়া হেরোইন, ৪ কেজি ১০ গ্রাম গাঁজা এবং ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। একইভাবে অন্যান্য সময় অভিযান চালিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, গাঁজা, ইয়াবা,  ফেনসিডিল ও অন্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা
হয়। 

র‌্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে ৪ হাজার ৮৩৯টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার ৮ হাজার ২২৭ জন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হয়েছে ১০ হাজার ৩১৯ জনের। র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বক্তব্য : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (মিডিয়া) উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জাগরণকে বলেন, মাদক বিরোধী অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে প্রকাশ্যে আর মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে না। পুরনো সব স্পটও বন্ধ হয়ে গেছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল  অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ২০১৮ সালে এ অভিযানের কারণে এখন আর প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে না। সীমিত আকারে যা  হচ্ছে তাও নির্মুল করে দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে।


মহাপরিচালকের বক্তব্য : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ জাগরণকে বলেন, বিশেষ অভিযানের কারণে কক্সবাজার জেলার নাফ নদী সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট প্রবেশ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। র‌্যাব, পুলিশ কোষ্টগার্ড ও অধিদপ্তরের যৌথ এ অভিযানের কারণে মাদক বিক্রেতারা নানা কৌশল নিয়েছে। তবে তারা আগের মতো আর জমজমাট ব্যবসা করতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞের মতামত : অপরাধ বিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান বলেছেন, দেশের ৭০ লাখ মাদক  সেবনকারির মধ্যে ১০ লাখ রয়েছেন পুরোপুরি আসক্ত। এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে সমাজে অপরাধের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে। আর অভিযানের সুফল পেতে হলে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন :  চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর খসড়া সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। ১৯৯০ সালের আইনটি পুনর্বিন্যাস ও যুগোপযোগী করে নতুন এই আইন করা হয়। নতুন আইনে আলোচিত ইয়াবা ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য। এর রাসায়নিক নাম অ্যামফিটামিন। এ মাদকদ্রব্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বহন, স্থানান্তর ও আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম হলে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। ১০০ গ্রামের বেশি থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। ২০০ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে। তবে সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ, ধারণ, অধিকার অথবা গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মাদকের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম হলে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এইচএম/এসএমএম