• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০১৯, ১১:২৩ এএম

শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে

শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে
রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় দুই বছরের শিশু আয়েশাকে ধর্ষণের পর হত্যার খবর পেয়ে মায়ের আহাজারি। ইনসেটে শিশু আয়েশা -ছবি : সংগৃহীত
 
শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা সমাজে বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি কয়েকটি নৃশংস ঘটনা খোদ রাজধানীতেই ঘটেছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

গেন্ডরিয়ায় শিশু আয়েশা হত্যা
রাজধানীর পুরান ঢাকায় গেন্ডরিয়ার দীননাথ সেন রোডের এক বস্তিতে মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে থাকত শিশু আয়েশা (২)। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যান। এই সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনে গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্যান্য দিনের মতো গত শনিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলেও খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশের চারতলা একটি ভবনের সামনে আয়েশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আয়েশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাহিদ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ করেছেন। পরে চারতলা ভবনের তিনতলা থেকে তাকে নিচে ফেলে হত্যা করেছেন।

আয়েশার মামা আলী অভিযোগ করেন, আয়েশাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন ৫৩/১জ দীননাথ সেন রোডের চারতলা বাড়ির মালিক নাহিদ। তিনি ভবনের তিনতলায় থাকেন। আয়েশা বিকেলে যখন খেলছিল, তখন তাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে নিজের ফ্ল্যাট নিয়ে যান নাহিদ। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ফ্ল্যাটের খোলা বারান্দা থেকে আয়েশাকে নিচে ফেলে দেন নাহিদ। এসময় আয়েশার চিৎকার আশপাশের লোকজনও শোনে।

ডেমরায় দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৭ জানুয়ারি, সোমবার রাতে ডেমরার নাসিমা ভিলার মোস্তফার ঘর থেকে নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) নামে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিন দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল তারা। পরে তাদের ঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নুসরাত ও দোলা ডেমরা কোনাপাড়ার হজরত শাহজালাল রোডে টিনশেড ও পাকা ভবনের বাসায় থাকত। পুলিশ বলছে, তাদের মধ্যে একজনের কপালে ও আরেকজনের গলায় কালচে দাগ পাওয়া গেছে। নিহত শিশু নুসরাত জাহানের কপালে বাম চোখের ওপরে চাপ লাগা কালচে দাগ রয়েছে। নাকের ওপরেও কালচে দাগ। তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
 
বাংলামোটরে মাদকাসক্ত বাবার হাতে শিশুর মৃত্যু
৫ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার। রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার একটি বাসায় সাফায়েত নামে ৩ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটির বাবা নুরুজ্জামান কাজল ছিলেন মাদকাসক্ত। কাজলের ভাই নুরুল হুদা উজ্জ্বলের দাবি, শিশুটিকে তার বাবাই খুন করেছে। বাংলামোটরের ১৬ নম্বর লিংক রোডের একটি বাড়ির দোতলা এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশীরা বলেন, কাজল ও উজ্জ্বলের মধ্যে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

বনশ্রীতে ভাই-বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা
২০১৬ সালের ১ মার্চ, রাজধানীর বনশ্রীতে বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসায় ঘুমের মধ্যেই মুত্যু ঘটে নুসরাত আমান অরণী (১২) ও আলভী আমান (৬) নামের ওই দুই ভাই-বোনের। তাদের বাবা আমানউল্লাহ আমান একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এবং  মা জেসমিন আক্তার একজন গৃহীনি। অরণী সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম  শ্রেণির শিক্ষার্থী, আলভী আমান হলিক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র। ভাই-বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। হত্যার আগে তাদের খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। শিশু দুটির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা এ কথা বলেন।

বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রিতাসহ বেশ কিছু কারণে শিশুদের ওপর নির্যাতন কমছে না বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, শিশুদের ওপর নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। রাষ্ট্রের এ বিষয়ে অনেক কিছু করার আছে। শিশু অধিদপ্তর ও কমিশন করার কথা বললেও সরকার তা করেনি বলে অভিযোগও করেন তিনি।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রকাশিত শিশু অধিকার পরিস্থিতি ২০১৭-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৫৮৯টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৮৪৫টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৭১০টি শিশু বিভিন্ন ধরনের অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে আর ৮৯৪টি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ২৮ শিশু হত্যা ও ৪৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৬ সলের তুলনায় ২০১৭ সালে নির্যাতন-নিপীড়ন বেড়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে অপমৃত্যু বেড়ছে ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর যৌন নির্যাতন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ। জাতীয় ১০টি দৈনিক পত্রিকার সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সার্বিকভাবে খোঁজ নেয়া হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহভাবে ধরা পড়বে বলে মনে করে শিশু অধিকার ফোরাম।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) ও লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোস্যাল ওয়েলফেয়ার (লফস) জানায়, ২০১৮ সালে শুধু রাজশাহী জেলায় ২৫টি শিশু ধর্ষণ ও ২টি শিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে ১০ শিশু। ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে আরেক শিশু। সংস্থা দুটি আরো জানায়, গত বছর ২৮ শিশু নির্যাতন এবং ১টি শিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছেন। এছাড়া ১ শিশু অপহরণ হয়েছে। এক বছরে ৪০ শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ১৩ শিশু। সহিংসতায় আহত হয়েছেন ২৫ শিশু।

এইচএম/ এফসি