• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০১৯, ০১:৩৫ পিএম

শ্রীলংকায় আটক সবচেয়ে বড় মাদকের চালানে জড়িত বাংলাদেশের ৩ নারী

শ্রীলংকায় আটক সবচেয়ে বড় মাদকের চালানে জড়িত বাংলাদেশের ৩ নারী
র‌্যাবের হাতে আটক আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের ৫ সদস্য


গত ডিসেম্বর ২০১৮’তে শ্রীলংকায় জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য চোরাচালানের সাথে জড়িত আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের ৫ সক্রিয় সদস্যকে মাদকদ্রব্যসহ আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। মাদকচক্রের আটক ৫ সদস্যের মধ্যে তিনজনই নারী।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। 

তিনি জানান,    গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর উপকন্ঠে মাউন্ট লাভিয়ান এলাকায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ২৭২ কেজি হেরোইন ৫ কেজি কোকেনসহ মো. জামাল উদ্দিন ও রাফিউল ইসলাম নামক দুই বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়। এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে শ্রীলংকার একই এলাকা হতে ৩২ কেজি হেরোইন সহ বাংলাদেশি নাগরিক সূর্যমণি গ্রেফতার হয়। মাত্র ১ মাসের মধ্যে ৩০৪ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন সহ ৩ বাংলাদেশি গ্রেফতার হওয়ায় শ্রীলংকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। 

তিনি জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। উক্ত ঘটনার তথ্যসূত্রের উপর ভিত্তি করে টাস্কফোর্স কর্তৃক একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। উক্ত অভিযানে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের সম্পৃক্ততার প্রমাণাদি সাপেক্ষে চয়েজ রহমান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়। আলোচিত এই বিষয়ে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার ২৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বিমান বন্দর থানাধীন কাউলা এলাকা হতে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্রের এই ৫ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব-১ এর একটি দল।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ফাতেমা ইমাম তানিয়া (২৬), আফসানা মিমি (২৩), সালমা সুলতানা (২৬), শেখ মোহাম্মদ বাধন ওরফে পারভেজ (২৮), রুহুল আমিন ওরফে সায়মন (২৯) 

মুফতি মাহমুদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে তাদের নিয়ন্ত্রক মো. আরিফ উদ্দিন। আরিফ উদ্দিন এর আল-আমিন ফ্যাশন বায়িং হাউস নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরিফ উক্ত ব্যবসার অন্তরালে আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। গ্রেফতারকৃতদের জানা মতে আরিফ উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে উক্ত মাদক সিন্ডিকেটে বাংলাদেশি ১৫-২০ জন যুক্ত রয়েছে। এই সিন্ডিকেট দেশের অভ্যন্তরেও মাদক (ইয়াবা) ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়। 

তিনি আরো জানান, মাদকের সিন্ডিকেটে যুক্ত হবার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, আরিফ নিজে রিক্রুটিং করত, এছাড়া রেহানা এবং গ্রেফতারকৃত রুহুল আমীন ওরফে সায়মন রিক্রুটিং এর কাজ করে থাকতো। রিক্রুটিং এর ক্ষেত্রে মূলত স্বল্প শিক্ষিত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্মার্ট মেয়েদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হত। পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমে তাদেরকে ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত করা হত। তাদের মধ্যে থেকে বিশ্বস্তদের দেশের অভ্যন্তরে যেখানে এই মাদক সিন্ডিকেটের মাদক ব্যবসা আছে সেখানে মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে পারদর্শী হয়ে উঠলে তাদেরকে বিদেশে প্রেরণ করে বিদেশি কালচারের সাথে অভ্যস্তের পাশাপাশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা হত। তাদেরকে পরে বিদেশে মাদক সরবরাহ ও বিতরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। বর্ণিত মাদক সিন্ডিকেটের আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। মাদক পরিবহনে বিভিন্ন পথ ব্যবহার করা হয়। 

মিডিয়া উইং এর পরিচালক জানান, গ্রেফতারকৃত মো. বাধন ওরফে পারভেজ একটি বাইং হাউজে কাজ করতো। এলাকা সূত্রে আরিফ এর সাথে গ্রেফতারকৃত পারভেজের পরিচয় হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত পারভেজ ২০১৭ সালে আরিফের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে। আরিফের নির্দেশনায় সে ২০১৮ সালে দুইবার শ্রীলংকায় প্রায় ১ মাসের অধিক সময় অবস্থান করেছিল। উক্ত সময়ে শ্রীলংকায় সে বিভিন্ন স্থানে মাদক দ্রব্য প্যাকেজিং, সংগ্রহ ও সরবারহ করেছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

মুফতি মাহমুদ জানান, গ্রেফতারকৃত রুহুল আমীন ওরফে সায়মন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কর্মরত রয়েছে। আত্মীয়তার সূত্রে রেহানা আক্তারের মাধ্যমে সেই এই চক্রের সাথে যুক্ত হয়। রেহানার নির্দেশনায় সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলাদের প্রলোভনে ফেলে বর্ণিত গ্রুপের সাথে যুক্ত করে থাকত। এছাড়াও এই মাফিয়া মাদক সিন্ডিকেটের জন্য পাসপোর্ট, ভিসা এবং টিকিটিং ইত্যাদি কাজগুলো করে থাকতো। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা ইমাম তানিয়া এবং আফসানা মিমি সহ প্রায় অনেকেই বর্ণিত মাদক কারবারের সাথে যুক্ত করেছে বলে গ্রেফতারকৃত রুহুল আমিন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। প্রতিটি পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট ইত্যাদি করার জন্য সে কাজ ভেদে ৫-১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত পেয়ে থাকতো।

আরআর/আরআই