• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য

হামলার প্ররোচনাকারী রাব্বানী-সনজিত ও সাদ্দাম

হামলার প্ররোচনাকারী রাব্বানী-সনজিত ও সাদ্দাম

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। এ ঘটনায় ৪৩ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আল মামুন, সাধারন সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তুর্য ও মেহেদী হাসান শান্ত নামে ৩ শিক্ষাথীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে এনেছে গোয়েন্দারা। মিন্টুরোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে ছাত্রলীগের তিন নেতার নাম উঠে এসেছে। তারা হচ্ছেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত হওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এ জি এস) সাদ্দাম হোসেন। এই তিনজনের প্ররোচনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ডাকসু কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়। ঘটনার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এরই মধ্যে নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত মামলায় সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘ডাকসু ভবনে ভিপির কার্যালয়ে নুর ও তার সহযোগীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্ররোচনাকারী হচ্ছে তিনজন। তারা হলেন- চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে অপসারিত গোলাম রাব্বানী, সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও জিএস সাদ্দাম হোসেন।’’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সমাবেশের অর্থযোগানদাতা ডাকসু জি এস গোলাম রাব্বানী। ছাত্রলীগ থেকে রাব্বানী অপসারিত হওয়ার পর তাকে সপদে বহালের দাবিতে টানা আন্দোলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সেসময় এই মঞ্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জাবি উপাচার্যের অভিযোগের পরই অপসারিত হতে হয় রাব্বানীকে।’’

অভিযোগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী, সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার কল দিলেও তাদের মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা এই ঘটনা থামানোর জন্য চেষ্টা করেছি। আমি আর আমাদের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভিপির রুমে গিয়েছি যেন কোনও অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য নুর নিজেই দায়ী। এমন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে সকাল থেকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

হামলার বিষয়ে ভিপি নুর সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দামের নেতৃত্বে ডাকসুর ভিপি কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। হামলার সময় ঢাবির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আট নেতার নাম উল্লেখ করে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সভাপতি এ এস এম সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, এ এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসিম উদদীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ (হল থেকে অস্থায়ী বহিষ্কৃত), জিয়া হল শাখার সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মাহিম এবং মাহবুব হাসান নিলয়। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন আল মামুন, ইয়াসির আরাফাত তুর্য এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের দফতর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্ত। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালে মোট পাঁচজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- ভিপি নুর, সোহেল, আমিনুল, ফারুক ও ফারাবী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এ কে এম নাসির উদ্দিন মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) তাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তারা শঙ্কামুক্ত। সবার অবস্থারই উন্নতি হয়েছে। ঘটনার দিন রাতেই ভিপি নুরসহ অন্যদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

সেখানে নানক বলেন, ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

২২ ডিসেম্বর (রোববার) দুপুরে ডাকসু ভবনে ভিপি নুর তার সহযোগীদের নিয়ে অবস্থানকালে সেখানে হামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এতে অন্তত ৩৪ জন আহত হন। আহত ভিপি নুরসহ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়।

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন