• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম

ডেমরায় দুই শিশুকে ধর্ষণের আলামত পেয়েছে পুলিশ

ডেমরায় দুই শিশুকে ধর্ষণের আলামত পেয়েছে পুলিশ

 

রাজধানীর ডেমরায় চার বছর বয়সী দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা (২৮) ও আজিজুল বাওয়ানীর (২৮) বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে ফারিয়া আক্তারকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে, এমন আলামত পাওয়া গেছে ময়নাতদন্তে। আরেক শিশু নুশরাত জাহানকেও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
 
শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) ওয়ারি জোনের এডিসি শাহ ইফতেখার আহম্মেদ জাগরণকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত  প্রতিবেদন হাতে পাবার পর তা পর্যালোচনা করে ২২ জানুয়ারি এ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মামলাটি আগে ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় থাকলেও এখন নতুন করে আরও দুটি ধারা ৯/১ ও ৯/৪ (খ) ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতার গোলাম মোস্তফা শিশু দোলাকে ধর্ষণ করেছে এবং তার সঙ্গী আজিজুল নুশরাতকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।আদালতে আসামিদ্বয় ১৬৪ ধারায় জবাববন্দি দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, এ মামলাটি সলভ হয়ে গেছে, এখন আদালত রায় দেবেন।

এর আগে ওয়ারী জোনের ডিসি মো. ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, ডেমরার এই দুই শিশু হত্যার পর এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালতে গ্রেফতার হওয়া দুইজন তাদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

দুই শিশু হত্যার পর ৯ জানুয়ারি বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুই শিশুকে বাসায় নিয়ে যায় গোলাম মোস্তফা ও আজিজুল বাওয়ানী। ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মোস্তফা লিপস্টিক দিয়ে দুই শিশুকে সাজিয়ে দেয়।

এরপর ইয়াবা সেবন করে মোস্তফা ও আজিজ রুমে উচ্চস্বরে ক্যাসেট প্লেয়ার বাজিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তবে শিশুরা প্রচণ্ড চিৎকার শুরু করলে ফারিয়াকে গলা টিপে হত্যা করে আজিজুল। এরপর নুসরাতকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মোস্তফা।

এরপর মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) রাতে ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা ও তার চাচাত ভাই আজিজুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, গত ৭ জানুয়ারি দুপুরে দুই শিশু নুসরাত জাহান ও ফারিয়া আকতার দোলা নিখোঁজ হয়। তাদের সন্ধান পেতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যার দিকে এলাকাবাসীর সহায়তায় শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, মোস্তফা ও আজিজুলকে গ্রেফতারের পর জানা যায় ধর্ষণের উদ্দেশ্যেই দুই শিশুকে লিপস্টিক দিয়ে সাজানোর লোভ দেখিয়ে তুলে নেয় তারা। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তারা শিশু দুটিকে হত্যা করে। হত্যার পর আজিজুল পালিয়ে যায়। আর মোস্তফা দুই শিশুর মরদেহ নিয়ে বাসায় রেখে দেয়।

ওয়ারীর ডিসি আরো জানান, মোস্তফার স্ত্রী সন্ধ্যার দিকে গার্মেন্ট থেকে বাসায় ফিরলে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। মেঝেতে শিশুদের জুতা পড়ে থাকতে দেখেন। দুই জনের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের লোকজন টের পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। তবে সন্ধ্যার দিকেই মোস্তফা পালিয়ে যায়।

মোস্তফা সিরামিকের কারখানায় ও আজিজুল একটি বেকারিতে কাজ করতো বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি ওয়ারী বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করেছিলাম মুক্তিপণের জন্য দুই শিশুকে অপহরণ করা হয়েছিলো। কারণ আসামিরা মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসা করত। তাদের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় ডাকাতি মামলাও আছে। পুলিশের ধারণা ছিল যে, মাদকের টাকার জন্য হয়তো তারা মুক্তিপণ চাইবে। কিন্তু আসলে তারা মুক্তিপণের জন্য এটা করেনি।

ঘটনা আসামিদের পূর্ব পরিকল্পিত ছিল কিনা জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, এই কাজ করার আগে মোস্তফা মোবাইল ফোনে আজিজুলকে ডেকে নেয়। তার মানে বোঝা যাচ্ছে তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল।

আরআর /বিএস