• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৯, ০৮:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১০, ২০১৯, ০৮:০৮ পিএম

রুশেমার মৃত্যুতে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী

রুশেমার মৃত্যুতে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ দলীয় সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার (রুশেমার) স্নেহমাখা কথাগুলো আমি ভুলতে পারি না। সংসদে তিনি যে বক্তৃতা করেছেন সেটা আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যারা মিথ্যাচার করছেন সেই বেঈমান, মোনাফেকদের উপযুক্ত জবাব। তাই সংসদ সদস্যদের বলবো তার বক্তৃতাটা সংগ্রহ করে পড়তে শুনতে।

বুধবার (৯ জুলাই) বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে সংসদ সদস্য রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। তার আগে সংসদ নেতাসহ আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (রুশেমা) অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। একটা যুগে মেয়েদের শিক্ষা অত্যন্ত কঠিন ছিল। সেই যুগে তিনি লেখাপড়া করেন, প্রথমে মাদ্রাসায় শিক্ষাকতা করেন, এরপর তিনি ইশান মেমোরিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার স্বামী ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। আমরা যখন যেতাম উনার স্বামী পরিচয় করে দিতেন আমাদের প্রধান শিক্ষিকা এসে গেছে। আমি উনার অধীনে চাকরি করি। স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটা সমঝোতা চমৎকার পরিবেশ। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। খুব ধীরস্থির ভাল মনের মানুষ ছিলেন।

তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি। পরিবারের সকল সদস্যকে হারিয়ে সেই স্বজন হারানো বেদনা নিয়েই ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু ‍আমি ভালবাসা পেয়েছিলাম স্নেহ পেয়েছিলাম তাদের কাছ থেকে যারা জাতির পিতার সাথে এক সাথে কাজ করেছেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে অনেকটা আপ্লুত লক্ষ্য করা যায়। সারাদেশে যখন সফর করেছি আমরা সব সময় থাকতাম আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা পারিবারিক চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় নির্যাতিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ও তার স্বামী সক্রিয় ছিলেন। সেখানে তাদের অবদান রয়েছে। তারপর মার্শাল সেখানেও তারা নির্যাতিত। তিনি বলেন, কারো সংসারে যদি একজন জেলে যায় তখন তার সংসার চালানো এবং তার ছেলে মেয়ে মানুষ করা সেটা যে কত দূরহ একটা কাজ ছিল। সেটা তিনি করেছেন। ৬ দফা দেবার পর অত্যান্ত সক্রিয় ভাবে কাজ করেছেন তারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ নির্দেশ দিয়েছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল প্রতিটি এলাকায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রকৃত পক্ষে গেরিলা যুদ্ধের রূপরেখা দিয়েছিলেন। অসহযোগ আন্দোলরেন ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারমধ্যে অন্যতম ইমাম উদ্দিন। স্বাধীনতার ঘোষণাটা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তখনকার ইপিআর এখনকার বিজিবি পিলখানায় ওয়্যারলেসের মাধ্যমে তিনি ওটা প্রচার করে দেন। এটা প্রচার হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেকটা জেলায় জেলায় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দরা সেটা সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করে প্রচার শুরু করে দেন। সেদিন রুশেমা ইমাম যে বক্তব্য রাখলেন সেখানে সেই ঘটনাটা তুলে ধরেছিলেন। আমি মনে করি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে তাদের একটা উপযুক্ত জবাব এই সংসদে তুলে ধরেছেন। এরপর আর এই ব্যাপারে কারো কনফিশন থাকার কথা না। তিনি তার বক্তব্যে বলেছিলেন তার স্বামী ইমাম উদ্দিন পুলিশের কাছ থেকে তথ্যটা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। ইতিহাসের একটা বিরাট সত্য জানতে পারলাম। এটা সংসদে রেকর্ড হয়ে থাকল যেটা যুগের যুগ রেকর্ড হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী রুশেমা সম্পর্কে বলেন, ১৯৭১ সালে তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। সংসদে সেদিন বক্তৃতায় বলেছিলেন ঘোষণার সব কাগজপত্র তার কাছেই ছিল আগুণ দেয়ার পর সেগুলো সুরক্ষা করতে পারেননি। তিনি শিক্ষার উপর অনেক পরামর্শ দিয়েছেন, আরও কথা বলতে চেয়েছেন। তার বক্তব্যটা মুগ্ধ হয়ে সবাই শুনছিলাম। কয়েকদিন আগে বললেন আমি ঠিক গুছিয়ে তো বলতে পারলাম না। আমি বলেছিলাম একটা ইতিহাস জানার সুযোগ হয়েছে আপনি ভাল বলেছেন। বিশেষ করে যারা ইতিহাস বিকৃত করে যাচ্ছে তাদের জন্য একটা জবাব বেইমান মোনাফেকদের জবাব হয়েছে। আমাকে বলল মা ভাল লেগেছে? উনার স্নেহ মাখা কথা ভুলতে পারি না।  তার কথাগুলো আর শোনা হল না।

রুশেমা বেগম ৯ জুলাই ফরিদপুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। এর আগে এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ হতে সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত হন। 

এইচএস/টিএফ