• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০১৯, ১০:২৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৩, ২০১৯, ১০:২৪ এএম

‘সরকার উন্নয়নের নামে দেশ ও জননিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করছে’

‘সরকার উন্নয়নের নামে দেশ ও জননিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করছে’

জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকার উন্নয়নের নামে এমন অনেক প্রকল্প নিয়ে এগুচ্ছে যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে দেশের আর্থিক বোঝাই সৃষ্টি করবে না, প্রাণ প্রকৃতি বিনাশ করে দেশ ও জননিরাপত্তাকেও বিপর্যস্ত করবে।

শনিবার (২৩ জুন) পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘রামপাল, রূপপুর ও বাজেট ২০১৯-২০’ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উন্নয়নের কথা বলেই সরকার এখনও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ব দরবারে মিথ্যাচার করে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আরও তিন শতাধিক বিপজ্জনক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। ইউনেস্কোকে দেয়া বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে হেয় করেছে। সরকারের এই ভূমিকায় একদিকে বাংলাদেশ অরক্ষিত হচ্ছে অন্যদিকে সুন্দরবন তার বিশ্ব ঐতিহ্য মর্যাদা হারাতে বসেছে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উন্নয়নের নামে প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জনগণের অর্থ বরাদ্দ দেয়া চলবে না। রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ির এসব প্রকল্প উন্নয়ন নয়, ধ্বংস প্রকল্প। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অস্বাভাবিক খরচের বিষয়টি ইতিমধ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত ৯ বছরে এই খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট বাজেটের ৫ ভাগের এক ভাগ। এখানে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজে ফিক্সড কস্ট মডেলের পরিবর্তে নির্মাণ চুক্তি হয়েছে ‘কস্ট প্লাস’ মডেলে। এর ফলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটমের পক্ষে খরচের অঙ্ক দফায় দফায় বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে সারাবিশ্ব এগুচ্ছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি সামনে আনা হলে দাবি করা হয় যে, সৌর এবং বায়ু বিদ্যুতে বিপুল পরিমান ভর্তুকি দিতে হয়। অথচ, যে সত্যটি গোপন করা হয় তা হলো কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ আপাদমস্তক রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র নির্মাণ খরচই নয়, কয়লা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের হিডেন কস্ট বা লুক্কায়িত খরচ, যেগুলো জনগণের সামনে আসেনা। যেমন রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের  লক্ষে নৌপথ তৈরিতে সংলগ্ন নদীগুলোতে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৯৫৬ কোটি টাকা। আবার শুধুমাত্র রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির  জন্যে বছরে প্রায় ৪৭ লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হবে বাংলাদেশকে।

তিনি রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী সকল অপতৎপরতা বন্ধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সকল প্রকল্পের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল, মন্ত্রী ও জ্বালানি উপদেষ্টাদের ভূমিকা তদন্ত করে জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা, দুর্নীতি লুটপাটের ‘দায়মুক্তি আইন’ বাতিল, ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন এবং সারাদেশে সুলভে সার্বক্ষণিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত খসড়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবার জন্য বাজেট বরাদ্দ ও সরকারি নীতিমালা পুনর্বিন্যাসের দাবি জানান। 

সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বক্তব্য রাখেন- জাতীয় কমিটির সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আব্দুস সাত্তার, আবুল হাসান রুবেল, মাহা মির্জা, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, খান আসাদুজ্জামান মাসুম। এসময় উপস্থিত ছিলেন- শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, মোশারেফ হোসেন নান্নু, জুলফিকার আলী, আকবর খান, শওকত আহমেদ, নাসির উদ্দিন নসু, জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, শহিদুল ইসলাম সবুজ, সামসুল আলম, খালেকুজ্জামান লিপন প্রমুখ। 

টিএস/টিএফ