• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮, ০৬:৩৯ পিএম

শোকাচ্ছন্ন পশ্চিমবাংলা

‘নীরেনদা আপনি থাকেন, আমরাও আসছি’

‘নীরেনদা আপনি থাকেন, আমরাও আসছি’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শীষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ও নবনীতা দেব সেন।

 

পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মহাপ্রয়াণে শোকাচ্ছন সে দেশের সাহিত্য অঙ্গন। তার মহাপ্রয়াণের সংবাদ ছড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে একে একে স্মৃতিচারণ করে তার কাজের মুল্যায়ণ করছেন কবি-সাহিত্যিক-লেখকরা। তারা বলেছেন, মাথার ওপর থেকে স্নেহের হাতগুলো একটার পর একটা সরে যাচ্ছে। কবি নীরেন্দনাথ চক্রবর্তী ছিলেন তেমনি একজন মানুষ। তার মতো মানুষের দেহান্তর আছেন। মৃত্যু নেই। চিরকালই থাকবেন, তাকে নিয়েই আমরা থাকবো। কবির জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করে শোর্কাত কথাগুলো বললেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা, কবি ও বাকশিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি নবনীতা দেব সেন, রম্যলেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। 


কলেজ জীবন থেকে তার কবিতা ভক্ত ছিলাম : সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শোক জানিয়ে বলেছেন, নীরেনদাও চলে গেলেন। এক এক করে বড়রা চলে যাচ্ছেন। অনেকদিন ধরেই শুনেছি তিনি অসুস্থ। বয়স হয়েছিলো অনেকটাই। নীরেনদার সঙ্গে খুব যে ঘনিষ্ঠ বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এমন নয়। তবে কলেজ জীবন থেকেই তার লেখা কবিতা ভালো লাগতো। তার লেখা অনেক কবিতা আবৃত্তি করেছি। বিশেষ করে কোথাও আবৃত্তি করার সময় আধুনিক কবিতা পড়ার সুযোগ হলেই তার লেখা কবিতা আবত্তি করতাম। প্রথম দিককার তার লেখা একটা কবিতা খুব ভালো লাগতো। তবে এখন ঠিক মনে পড়ছে না।

ঠাণ্ডা মাথায় ঋজু শাসন করতেন : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় 
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মহাপ্রয়াণে বিষণ্ণ কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আজ বার বার ওই দিনটার কথা মনে পড়ছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় তখন চাকরি করতে ঢুকেছি সবে। নীরেনদা সোজা একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর সিগারেটের প্যাকেট ও একটা চায়ের ফ্লাস্ক রাখলেন। চোখ পাকিয়ে বলে গেলেন, লেখা না পেলে ছাড়া পাবি না। দেখি সত্যি সত্যি যাওয়ার সময় ঘর তালাবন্ধ করে দিচ্ছেন! তিনি আরও বলেন, আমি কোনও দিনই সময় মতো লেখা দিতে পারিনি। আমারই ব্যর্থতা। কিন্তু সেই কারণে কোনও বকা-ঝকা নেই, বিরক্তি নেই। সটান তালাবন্ধ করে রেখে লিখিয়ে নিলেন। এমন ঠাণ্ডা মাথায় ঋজু শাসন করার মতোই সম্পর্ক ছিল নীরেনদার সঙ্গে আমার।

তিনি ছিলেন মাথার ওপর স্নেহের হাত : নবনীতা দেব সেন
কবি নবনীতা দেব সেন শোকার্ত কণ্ঠে বলেছেন, শরীর-স্বাস্থ্য এমনিতেই আর ভাল যায় না আজকাল। মনটা যে ভাল রাখবো সে উপায়ও আর থাকছে না। মাথার ওপর থেকে স্নেহের হাতগুলো একটার পর একটা সরে যাচ্ছে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর চলে যাওয়াটা কী ভাবে মেনে নেবো, বুঝতে পারছি না। নীরেনদা আমার বাবার আমলের মানুষ ছিলেন। সত্যি বলতে কি, নীরেনদার কাছ থেকে পিতৃস্নেহটাই পেতাম। তাই যখন শুনলাম, নীরেনদা আর নেই, আমি নিতে পারিনি। চিরদিন তো কেউই থাকবেন না। যেতে তো সকলকেই হবে। তবু মন মানে না। আমার জীবনের এত কিছু নীরেনদার সঙ্গে জড়িয়ে যে, এই সত্যটাকে সহজে নেওয়া খুব কঠিন। তবে কবি নীরেন্দনাথ চক্রবর্তীর তো আর মৃত্যু নেই। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আমাদের কাছে চিরকালই থাকবেন, তাকে নিয়েই আমরা থাকব।

নীরেনদা আপনি থাকেন, আমরাও আসছি : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় 
বাংলাসাহিত্যে হাস্যরসাত্মক রচনার জন্য খ্যাত সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী- এই নামগুলো একে একে চলে গেলো। এ বার আমরা কোথাও আটকালে আর কার কাছে যাব? আপাতগম্ভীর মানুষটার মধ্যে যে কী অদ্ভুত রসবোধ ছিল, তা তার সঙ্গে আমরা যারা ঘনিষ্ঠ হয়ে মিশেছি, তারা জানি। যখনই লেখা নিয়ে সমস্যায় পড়েছি বা কোনও গাইডেন্সের দরকার পড়েছে, চোখ বুজলে যে দু’একটা মুখ বার বার ভেসে উঠেছে, তার মধ্যে অন্যতম নীরেনদা। আজ তার চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্যের যেমন অপরিসীম ক্ষতি, তেমনই আমার কাছে এক ব্যক্তিগত ক্ষতি। আজ এত দুঃখের মধ্যে একটা কথাই বার বার মনে হচ্ছে, অতীতটাই যদি না থাকে, তা হলে আর বর্তমানের কী দাম! আমারও অতীত হারাল আজ। তবে রমাপদদাকে যেমন নীরেনদা বেশি দিন একা থাকতে দিলেন না, আমরাও আসছি নীরেনদা, আপনাকে বেশি দিন একা থাকতে দেবো না।

মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর)  সকালে বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেহ ত্যাগ করেছেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তিনি। যীশুর জন্মদিনে অনন্তলোকে  চলে গেলেন ‘কলকাতার যীশু’র  স্রষ্টা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। রোদ্দুর হয়ে গেলেন অমলকান্তির কবি। তার বয়স হয়েছিল ৯৪। বেশ কিছু দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন নীরেন্দ্রনাথ। সম্প্রতি শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করে। কয়েক দিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। চিকিৎসকরা জানান, সোমবার সকালে তার হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হয়। সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি নীরেন্দ্রনাথ।

আরএম/এসএমএম