নিম্ন আদালতের দেয়া দণ্ড উচ্চ আদালতে স্থগিত হলেও দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন বলে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ফলে নিম্ন আদালতের দেয়া দণ্ড স্থগিত হলেও দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
দণ্ডিত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত আবেদনের এই বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আজ শনিবার (১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সকালে বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান ও জাতীয় নির্বাচনে যশোর-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। এই আদেশের ফলে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা কিংবা দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হলেও ওই ব্যক্তিসহ দণ্ডিত সবারই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
মাহবুবে আলম বলেন, যশোর-২ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানাকে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত দুদক আইনের দুটি ধারায় ৩ বছর করে সাজা দিয়েছিলেন। সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি হাইকোর্ট থেকে এর আগে জামিন নিয়েছিলেন। এরপর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পুনরায় তিনি হাইকোর্টে আবেদন করে তার ওই দুর্নীতি মামলার সাজা ও দণ্ড স্থগিত চান। পরে হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ তার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে। এরই বিরুদ্ধে আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) আজ চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানাই। কেননা, এর আগে হাইকোর্টে আরও দুটি দ্বৈত বেঞ্চ দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চেম্বার আদালত আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষের) আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের আদেশ স্থগিত করে এবং আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আগামীকাল শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে। এর ফলে সাজা ও দণ্ড স্থগিত করা হাইকোর্টের ওই একক বেঞ্চের আদেশ আর বহাল রইল না। আগামীকাল হয়ত সকাল সাড়ে ১১টায় বা এর আগে আমাদের এ আবেদনের শুনানি হবে।
চেম্বার আদালতের আজকের স্থগিতাদেশ কতদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে- এর জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, আবেদনটির ওপর এখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ যতক্ষণ পর্যন্ত রদবদল না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
মাহবুবে আলম জানান, এর আগেও ২ বছরের অধিক দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা বা দণ্ড স্থগিত হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশ আপিল বিভাগ 'নো অর্ডার' (কোনো আদেশ নয়) দিয়ে বহাল রেখেছিলেন।
সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তাড়াহুড়ো করে ছুটির দিনে আদালত বসিয়ে এ ধরনের স্থগিতাদেশ দিতে বাধ্য করেছেন বলে সাবিরা সুলতানার আইনজীবীদের বক্তব্যের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, তাদের মুখে এ ধরনের কথা শোভা পায় না। কারণ, পঞ্চম সংশোধানী নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যখন রায় দিয়েছিলেন তখন তারা রাত ২টার সময় বিচারপতির বাসায় গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়েছিল। আর আজ আমাদের আপিল বিভাগে যাওয়ার কারণ হলো, সাজা বা দণ্ড স্থগিত নিয়ে হাইকোর্টে দুই ধরনের রায় হয়ে যাচ্ছে। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে আমরা চেম্বার আদালতে গিয়েছি। আমরা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালতে যাওয়ার বিষয়ে গতকাল সাবিরা সুলতানার আইনজীবীদের ফোন করে জানাই। আজ তার সকল আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এমএ/এফসি